কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। ফাইল ছবি

হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন আজ

আয়েশা সিদ্দিকা শিরিন
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১১:০৪
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১১:০৪

(প্রিয়.কম) জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, খ্যাতিমান কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন আজ। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

দিবসটি উপলক্ষে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই ‘হুমায়ূন মেলা’ আয়োজন করেছে। তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এই মেলায় থাকবে নানা আয়োজন। প্রকাশনা সংস্থা অন্য প্রকাশের পক্ষ থেকে ‘হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।

বাসসের খবরে জানানো হয়, জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে রয়েছে ‘হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য ও জীবন’ শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় এই অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। 

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোনা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলা সাহিত্যের এই সৃষ্টিশীল ও জনপ্রিয় লেখক যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ইন্তেকাল করেন।

হুমায়ূন আহমেদের বাবা পুলিশ কর্মকর্তা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ ও মা প্রয়াত আয়েশা ফয়েজ। তার অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক। হুমায়ূন আহমেদের সর্বকনিষ্ঠ ভাই আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক ও কার্টুনিস্ট।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে সিনেমা।
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে সেই উপন্যাস থেকে সিনেমা বানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

বাবার চাকরি সূত্রে স্কুলজীবনে হুমায়ুন আহমেদকে কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতে হয়। ১৯৬৭ তিনি সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা , ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্রজীবনেই লেখালেখি শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায়। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’। এই দুটি বই প্রকাশের পর তিনি শক্তিমান কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হন।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ রচনা করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন৷

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। জীবিতকালে তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়। তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং রসাত্মক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনেও সিনেমা বানানো হয়।
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনেও সিনেমা বানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

হুমায়ূন আহমেদের লেখায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল ও বর্ণনায় লোকজ ধারার প্রাধান্য ছিল। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। মানুষের মানচিত্রও উঠে এসেছে।

হুমায়ূন উপন্যাস, গল্প, জীবনী, নাটক, চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে তিনি গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নুহাশ পল্লী’।

হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘কিশোর সমগ্র’, ‘হিমুর আছে জল’, ‘লীলাবতী’, ‘হরতন ইস্কাপন’, ‘হিমুর বাবার কথামালা’, ‘গল্প পঞ্চাশ’, ‘আমিও মিসির আলী’, ‘হিমু রিমান্ডে’, ‘মিসির আলীর চশমা’, ‘দিঘির জলে কার ছায়া গো’, ‘আজ হিমুর বিয়ে’, ‘লিলুয়া বাতাস’, ‘কিছু শৈশব’।

নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’।

সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ুন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন।

প্রিয় সংবাদ/আজহার