কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম। চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত

‘টাকা না দিলে তোর বাবাকে ধরে নিয়ে আসব’

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১৬
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১৬

(প্রিয়.কম) মালয়েশিয়া প্রবাসী ফরহাদ বিশ্বাস নামের এক যুবককে মেসেঞ্জারে হুমকি দিয়ে স্বজনদের গ্রেফতারের ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর সদর থানার কনস্টেবল শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। হুমকির পর থেকে আতঙ্কে আছেন বিদেশ প্রবাসী সেই যুবক ও তার পরিবার।

এদিকে চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম। তার দাবি, প্রবাসী যুবক ফরহাদ বিশ্বাস তাকে হুমকি দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষিতে তিনিও তাকে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি তার কাছে কোনো ধরনের চাঁদা দাবি করেননি।

গত আড়াই মাস আগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান ফরিদপুর মধুখালীর লাউজানা গ্রামের যুবক ফরহাদ বিশ্বাস (২১)। বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ঋণ করেন। সেই ঋণের টাকায় যান মালয়েশিয়া। সেখানে গিয়ে বর্তমানে তিনি একটি পাম্প গাছের বাগানে কাজ করছেন। 

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ফরহাদ মালয়েশিয়া যাওয়ার পর ফেসবুকে একটি আইডি খোলেন। আইডি খুলে তিনি তার মামার অনুরোধে বিএনপিকে নিয়ে একটি স্যাটাস দেন। ঘটনার সূত্রপাত সেই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করেই।

বিএনপিকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার পরই সেটা কনস্টেবল শরিফুলের নজরে এলে তিনি তাতে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন। একপর্যায়ে ফরহাদ তার কাছে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণ জানতে চান। কিন্তু শরিফুল কারণ ব্যাখ্যা না করে ফরহাদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিয়ে বিভিন্ন কথা বলে ভয় দেখাতে থাকেন। সেই সঙ্গে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হবে বলেও হুমকি দেন।

ফরহাদ আরও জানান, বিদেশ যাওয়ার আগে ফরিদপুরের মধুখালী থানায় থাকাবস্থায় শরিফুলের সাথে তার পরিচয় হয়। বিদেশ যাওয়ার পর সম্প্রতি ফেসবুক আইডিতে শরিফুলকে খুঁজে পেয়ে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে তাকে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠান ফরহাদ। শরিফুল তার রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে শরিফুল ওই স্ট্যাটাস নিয়ে তাকে হেনস্তা করতে থাকেন। ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি শরিফুলের হুমকির মুখে সেটিও মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।

ফরহাদ বিএনপিকে সমর্থন করেন কিন্তু দলটির কোনো কর্মী নন। তার মামাকে খুশি করার জন্যই সেদিনের সে পোস্টটা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

হুমকি ও চাঁদা দাবির বিষয়ে ফরহাদ বিশ্বাস প্রিয়.কমকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার ফেসবুকে বিএনপি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। উনি সেইখানে বিভিন্ন কথা লিখছিলেন। তখন তারে আমি বলছিলাম আপনি কে? তখন উনি আমাকে লিখছিলেন আমাকে চিনিস, আমি তোর বাপ। পরে উনি ডাইরেক্ট আমাকে ফোন দিছিলেন। প্রথমবার উনি আমাকে ফোন দেয়ার পর ওই সময় ফোনটা রিসিপ (রিসিভ) করতে পারি নাই। তারপর উনি লিখছেন (মেসেজ বক্সে), এই চুতিয়া ফোন ধরিস না ক্যান।’

‘এরপর ফোন ধরার পর (উনি) বলতেছেন, তােরে তো আমি চিনছি রে। তুই সেই, তোর বাড়ি লাউজানা, তো তুই যে ফেসবুকে যেসব পোস্ট দিছিস। (এখানে বলে রাখা ভালো, আমি মালয়েশিয়া আসার পর ফেসবুক ব্যবহার করতে শিখছি। উনি যেভাবে কথাগুলো বলতেছিলেন আমি তো ভয় পায়া গেছিলাম।) শরিফুল বলেন, তুই যে এসব পোস্ট দিছিস, তোর ফেসবুকে এখন আমি অনেক কিছু করতে পারি। তোর বিরুদ্ধে আমারে সাজামাজা দেয়ার দায়িত্ব দিছে। ফেসবুকের এই সব সমাধান করে দেবা নে, তুই আমারে টাকা দে। তুই আমারে টাকা দে, মালয়েশিয়ায় গেছিস, অনেক টাকা ইনকাম করতেছিস। ভালোভাবে থাক, তােরে যাতে দেশে আসা না লাগে। না হলে আমি কিন্তুক তুই যেখানেই থাকিস না কেন, সেখান থেকে আমাদের পুলিশ তোকে ধরে আনবে। টাকা না দিলে তোর বাবাকে ধরে নিয়ে আসব। এরপর তিনি আবারও কয়েক দফা ফোন দিয়ে আমার কাছে চাঁদা চান।’

‘পরে আমি বলছি, দয়া করে আপনি আমার ফ্যামিলির সাথে এমন কিছু কইরেন না। আর আপনার সাথে তো আমার কোনো ধরনের শত্রুতা নাই। আপনি এই রকম কইরতেছেন ক্যা? তারপর বাধ্য হয়া কইছিলাম ঠিক আছে, আমি আপনারে টাকা দিবো।’

ফরহাদ আরও জানান, তিনি একপর্যায়ে শরিফুলকে বলেন, ‘ভাই, আমি এখানে কয়েক দিন এসেছি। বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ২০ হাজার টাকা বেতন পাই। ঋণের টাকা শোধ করার জন্য বাড়িতে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। আর আমার থাকা-খাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা আছে। এই মুহূর্তে ২০ হাজার টাকা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু এমনভাবে সে আমাকে ভয়-ভীতি ও চাপ দিতে থাকে, সে জন্য আমি ২০ হাজার টাকা ধার করে প্রস্তুত রেখেছিলাম তাকে দেয়ার জন্য। এরপর বিষয়টি আমার মামাকে জানালে মামা টাকা দিতে নিষেধ করেন। পরে আর তাকে টাকা পাঠাইনি।’

ফরহাদ জানান, শরিফুল তাকে হুমকি দিয়ে যেসব কথা বলেছেন তার রেকর্ড আছে তার কাছে। পরে সেই রেকর্ডগুলো তিনি প্রিয়.কমের কাছে পাঠান। তার কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি সাংবাদিককে জানানোর পর শরিফুল আবারও তাকে মেসেঞ্জারে কল দিয়ে গালাগালি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ফরহাদ বিশ্বাসের মামা রিপন জানান, তার ভাগনাকে হুমকি দিয়ে শরিফুল যে চাঁদা দাবি করেছেন তা সত্য। বিষয়টি ঘটার পরপরই ফরহাদ তাকে জানিয়েছিলেন। পুলিশ কনস্টেবল শরিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদন জানাবেন বলে জানান।

এদিকে চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশের কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ও (ফরহাদ) যা বলছে সবই মিথ্যা কথা। আমি এ রকম কিচ্ছু তাকে বলি নাই। না, এসব সম্পূর্ণ ফলস (মিথ্যা)। আমি যদি এমন কথা বলে থাকি তবে আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। আমি তা মাথা পেতে নেব।  আমি এগুলা কিছু করি নাই।’

‘একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারে, তা তদন্ত করতে হয়। যে ছেলেটা ভিটামাটি বিক্রি করে বিদেশ গেছে তার কাছে আমি চাঁদা চাইব? ও আমার এক বন্ধুর ভাই। আমি মধুখালীতে ছিলাম তখন তার ভাইয়ের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। তার সাথে আমার একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি প্রথমে জানতে পারি নাই, পরে জানতে পারছি।’

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার জাকির হোসেন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমনটি হলে আমার অফিসে এসে তাদের স্বজনদের কাউকে অভিযােগ দিতে বলেন। আমি শক্তভাবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

ফরিদপুর সদর থানার ওসি এএসএম নাসিম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘এমন নামে আমার থানায় কেউ আছে কি না দেখতে হবে। তবে এমন অভিযোগ থাকলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয় বরাবরে বিষয়টি জানাতে বলেন। তারপর সেটার তদন্ত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রিয় সংবাদ/আজাদ চৌধুরী