কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

উজ্জ্বল কবির হিমু। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

‘থিয়েটারে একশ জনের মধ্যে হয়তো দুজন ভালো’

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৩৬
আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৩৬

(প্রিয়.কম) প্রায় এক যুগের অভিনয় ক্যারিয়ার চরিত্রাভিনেতা উজ্জ্বল কবির হিমুর। মঞ্চ ও টিভি নাটকের পাশাপশি অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। তার অভিনীত পাঁচটি চলচ্চিত্রের মধ্যে চারটিই পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কিন্তু এতকিছুর পরও যথার্থ মূল্যায়ন পাচ্ছে না বলে আক্ষেপ এই অভিনেতার। বেশির ভাগ চরিত্রাভিনেতাও একই বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।

হিমু ঢাকায় আসেন ১৯৯৯ সালে। ২০০৬ সাল থেকে শুরু করেন অভিনয়। শুরু মঞ্চ দিয়ে। সুবচন নাট্য সংসদে তিনি কাজ করেছেন। সেখানেই প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব খালেদ খানের সহচর্য পান। এরপর ‘রূপবতী’, ‘রাষ্ট্রগ্রাম’ ও ‘খনা’ নাটকে অভিনয় করেছেন।

চলতি মাসের শুরুতে প্রিয়.কমের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এসেছিলেন এ অভিনেতা। সে সময় প্রায় এক ঘণ্টা সময় ধরে চলে তার সঙ্গে আলাপ। সে আলাপে তার ঢাকায় আসা, ক্যারিয়ারের শুরু, বর্তমান সময়ের টিভি ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন দিক ছাড়াও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে হয় আলাপ।

কথাবার্তার শুরুতে অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে হিমু বলেন, ‘আমি থিয়েটারে টানা আট বছর কাজ করেছি। কিন্তু পরে গিয়ে নানান কারণে আর থিয়েটারটা কন্টিনিউ করা হয়নি। এরপর আমার জীবনের উপলব্ধি হলো, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা নষ্ট করেছি।’

‘যে সময়গুলো আমি আর চাইলেও ফেরত পাব না। যখন একটা জায়গায় আপনি মন দিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করবেন, এরপর একটা সময় গিয়ে যদি সেখানে দেখেন, নোংরামি হচ্ছে, তখন সে জায়গাটার প্রতি আর প্রেম থাকে না।’

আলাপের একপর্যায়ে মঞ্চ নাটক সংশ্লিষ্টদের নিয়ে তিক্ততার কথা জানান তরুণ এ অভিনেতা। তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এখানকার লোকজন ছদ্মবেশী। এদের সঙ্গে মেশার আগে কোনোভাবেই কিছু বোঝা যাবে না, এরা কেমন। আর বোঝার পর আপনি মেলাতে পারবেন না। এদের ভেতরের আর বাইরের রূপের মধ্যে তফাৎ অনেক। থিয়েটারে একশ জনের মধ্যে হয়তো দুজন ভালো মানুষ আছেন।’

‘আপনি যখন এদের খুব কাছাকাছি থাকবেন, মিশবেন, ঘরের মানুষ হয়ে যাবেন, তখন আর এদের বাইরের লুকের সঙ্গে ঘরের লুক মেলাতে পারবেন না। যখন বিষয়গুলো জেনে যাবেন, তখন আপনি হয়তো সেখানে থেকে ব্যাক করবেন, না হয় আপনি ওই ধরনের বিষয়গুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলবেন।’

হিমু অভিনীত চারটি চলচ্চিত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। ছবি: প্রিয়.কম

থিয়েটারের পর হিমুর আলোচনায় আসে টিভি নাটকে অভিনয়ের বিষয়টি। তিনি জানান, শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান। পাশাপাশি কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও। তবে অমিতাভ রেজার ‘সংগীত হকার্স’ বিজ্ঞাপনটার মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারে পরিচিতির জায়গায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। তারপর থেকেই এই মাধ্যমে তার নতুন এক যাত্রা হয়।

হিমু ইতোমধ্যে পাঁচটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে চারটি চলচ্চিত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। ছবিগুলো হলো ‘আয়নাবাজি’, ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, ‘দেশা: দ্য লিডার’।

আলাপের সময় এ অভিনেতা আরও জানান, ‘ছিটমহল’ নামে একটি ছবির কাজ তিনি সম্প্রতি শেষ করেছেন।

‘আয়নাবাজি’তে হিমু নরসুন্দরের (নাপিত) একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ নিয়ে তার ভাষ্য, ‘আমার জীবনে আর কোনো কাজ করে এমন প্রশংসা পাইনি। কিন্তু ‍দুঃখের বিষয় কী জানেন, এরপর একজন ডিরেক্টরও আমাকে তাদের কোনো সিনেমার একটি সিকোয়েন্সের জন্যও ডাকেনি। আমি বেশ আহত হয়েছি। সবাই না, সার্কেল মেনটেইন করে চলে। এভাবে চললে কী করে হবে!’

প্রথম সারির বেশির ভাগ নাট্যনির্মাতার সঙ্গে কাজ করার কথা জানান হিমু। এরপর একটা সময় গিয়ে দেখলেন, একজন পরিচালকের সঙ্গে তার মতো ১০ থেকে ১২ জন চরিত্রাভিনেতা আছেন। কিন্তু চরিত্রাভিনেতাদেরও যে সম্মানীর বিষয় আছে, সেটার ‘নাম-গন্ধও’ নেই!

এ বিষয়ে হিমুর ভাষ্য, ‘আমার মতো আর্টিস্টদের পেমেন্ট দিতে হবে, সে ভাবনাটা এখনকার বেশির ভাগ নির্মাতারই নেই। কারণ পেমেন্ট ছাড়া প্রচুর কাজ হচ্ছে। এটাই এখনকার বাস্তবতা। আমি কাজ করেছি, কিন্তু অনেকেই আমাকে টাকা দেয়নি। আমি না তাদের সঙ্গে পেরে উঠিনি। আমাকে যদি সামান্য একটু সহযোগিতা করত, আমি আজ অন্য জায়গায় থাকতাম। আমি টিকে যেতাম।’

‘এক যুগ হয়ে গেছে, আমি এ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। আমার জীবনের বাস্তবতাও চেঞ্জ হয়ে গেছে। স্ট্রাগল পিরিয়ডটাও পার করেছি। তাই এখন আর আমি পেমেন্ট ছাড়া কাজ করি না। আমার পক্ষে সম্ভবও না। আর এখানে যে ম্যাচিং করতে পারবে, জায়গাটা তার। যে ম্যাচিং করতে পারবে না, এ জায়গাটা তার না।’

চরিত্রাভিনেতারা যথার্থ মূল্যায়ন পাচ্ছে না বলে আক্ষেপ হিমুর। ছবি: প্রিয়.কম

নাটকের বাস্তবতা বোঝাতে গিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘বিষয়টা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে গেছে কী, আমাদের মতো আর্টিস্টরা শুটিংয়ের আগে টাকা চাইবে, দেখা যাবে কোনোদিন হয়তো আর সে ডিরেক্টরের কাছ থেকে ডাকই পাবে না।’

‘কারণ আমাদের মতো আর্টিস্ট তার না হলেও চলবে। কিন্তু একটু সাপোর্ট দিলেই ছেলেটা একটা জায়গায় যেতে পারে। কিন্তু সে জায়গাটা নেই বলেই চরিত্রাভিনেতাদের কাজের জায়গাটা তৈরি হচ্ছে না।’

‘বর্তমানে বাংলাদেশে আমাদের প্রজন্মের যে কয়েকজন চরিত্রাভিনেতা আছে, খেয়াল করলে দেখবেন, তারা সারা বছর একইভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে বলতে পারবেন না একজন ক্যারেকটার আর্টিস্ট সুপারস্টার হয়েছে। অথচ এ চিত্রটা ভিন্ন হতে পারত। ইন্ডাস্ট্রির চিত্রটাও ভিন্ন হতে পারত। কিন্তু হায়! কে কাকে বোঝাবে!’

হিমুর কাছে প্রশ্ন ছিল, যারা এখন কাজ করছে, তারা কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন,‘যারা করছে, তারা কিছু বিষয় খুব ক্রিটিক্যালি মেনটেইন করার পর-এটা করে, ওটা করে; তারপর তারা শুটিংয়ের জন্য ডাক পায়। আমার পক্ষে ওভাবে ম্যাচ করে কাজ করা সম্ভব না।’

হিমু বলেন, ‘আমি এখন মাসে সাত থেকে আট দিন কাজ করি। তবে এ চিত্রটা ভিন্ন হতো যদি আমি ওভাবে চলতাম, মাসে ২০ দিনের ওপর কাজ থাকত আমার হাতে। এখন যারা আমাকে ডাকে, তারা ওই সুপারস্টারের সম্মানটা দেয়। তবে আমি সুপারস্টার না, স্টারও না, জাস্ট একজন আর্টিস্ট। ওই সম্মানটা যারা দেয়, আমি তাদের কাজ করি; না হয় করি না। এটা আমার একটা নীতি বলতে পারেন। ভালোও লাগে।’

নাটকের কিছু শিল্পীর বিষয়ে হিমু বলেন, ‘এভাবে আসলে হয় না, শেকড়টা যদি নষ্ট করে ফেলেন, তাহলে আর কিছু থাকে না। এভাবে চলতে থাকলে না ওই বড় আর্টিস্টরা একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়বে। যদিও সহজে এরা ক্লান্ত হবেন বলে মনে হয় না। কারণ টাকাটা এখানে মুখ্য! তাই এসব নিয়ে কথা বলাটাও মাঝে মাঝে এক ধরনের বোকামি মনে হয়।’

কথা প্রসঙ্গে হিমু জানান, তার একটা পরিকল্পনা আছে সিনেমায় অভিনয়ের। তিনি বলেন, ‘আমি তো বেসিক্যালি হিরো হতে পারব না। হিরো হওয়ার মতো যোগ্যতাও আমার নেই। আমি গল্পের হিরো হব। আমার বিশ্বাস, কাজটা দর্শক নেবে।’

‘আমার ধারণা, কাজটা মুক্তি পাওয়ার পর টেলিভিশনে আমার একটা জায়গা হবে। আমি বেশ আশাবাদী কাজটা নিয়ে।’

প্রিয় বিনোদন/গোরা