কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গল্পকার সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

‘এখনকার সময় মানুষ অনেক অল্প সময়ের চিন্তা করেন’

তাশফিন ত্রপা
ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৪২
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৪২

(প্রিয়.কম) কর্পোরেট মানেই চোখের সামনে ভেসে আসে ঝকঝকে তকতকে কাঁচ দেয়ালের অফিস। সুটেড বুটেড পোশাকে কর্মব্যস্ত একদল কর্পোরেট জগতের মানুষ। তাদের দেখে অনেকেই হয়তো ভাবেন, ইট পাথরের নগরীর কর্পোরেট মুখী এ মানুষদের ছুঁতে পারে না সাহিত্যের রস। কিন্তু না, ব্যাপারটি আসলে তা নয়। অনেকেই আছেন যারা কিনা এ ধারনাকে চাইলেই তুড়ি মেরে ভেঙে দিতে পারেন। তাদেরই একজন সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। নোকিয়া বাংলাদেশ মোবাইল ডিভিশনের হেড অব সেলস অপারেশনের দায়িত্বে আছেন আশরাফ। চলতিবছর ‘অসম প্রস্থান’ শিরোনামের একটি ছোট গল্প সংকলনের বই প্রকাশ পেয়েছে তার।

কর্পোরেট আর সাহিত্যের বিষয় নিয়ে প্রিয়.কমের সঙ্গে কথা হয় গল্পকার আশরাফের।

প্রিয়.কম: আপনার লেখা প্রথম বই ‘অসম প্রস্থান’। এতে দুটি ছোট গল্প আছে। প্রথমেই জানতে চাইবো ‘অসম প্রস্থান’ এর গল্প দুটি সম্পর্কে?

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: দুইটা গল্প আছে, প্রথম গল্পটা রোমান্টিক ট্র্যাজেডি। আশপাশের অনেকই আমাকে প্রশ্ন করে বলেছেন, ‘আশরাফ ভাই আপনিতো জীবনে যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন। তো রোমান্টিক ট্র্যাজেডি কেন? এ প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ আমার কাছে মনে হয়েছে, পাওয়ার মধ্যে যেমন একটা আনন্দ আছে, তেমনি কিছু না পাওয়ার স্মৃতিও থাকে। যে স্মৃতি মানুষ আসলে কখনোই ভুলতে পারে না। আবার সব কিছু পেয়ে গেলে অনেকেই আর সেই স্মৃতি মনে রাখতে পারেন না। প্রথম গল্পের নামেই বইয়ের নামটা রাখা হয়েছে, ‘অসম প্রস্থান’।

প্রিয়.কম: গল্পের চরিত্রগুলো নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: প্রথম গল্পের দুইটা চরিত্রকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, গল্পে তারা দুজন একটা সময় এসে বুঝতে পারে, তাদের আর কখনো দেখা হবে না। এখানে তাদের প্রেমটা অনেক খাঁটিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। খাঁটি বলছি এ কারণে, কারণ এখানে নব্বই দশকের বিশুদ্ধ একটা প্রেমকে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার আচরণ সবকিছুতেই সেই নব্বই দশকের অকৃত্রিম ভালোবাসার একটা ছাপ পাওয়া যায়।

প্রিয়.কম: দ্বিতীয় গল্পের মূল আকর্ষণটা কোথায়? 

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: দ্বিতীয় গল্পটার সঙ্গে আমার নিজের জীবনের প্রায় ৭০ শতাংশের মিল রয়েছে। আর এখানের প্রত্যেকটা চরিত্রই হচ্ছে বাস্তব চরিত্র। এ গল্পে আমার ছোট বেলার বেড়ে ওঠা, আমার বন্ধু বান্ধবদের জীবনকে ঘিরে বেড়ে ওঠা এক গল্প। এখানে, আমি কী করতে পেরেছি? কী করতে চেয়েছি? কী করতে পারিনি ? সেটার একটা প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেছি। এখানে কিছু জিনিস আছে যা আমি আমার বাস্তব জীবনে করতে না পারলেও গল্পের মাধ্যামে নিজের অপূর্ণতাকে পূরণ করেছি। প্রত্যেকটা চরিত্রে যে নাম ব্যবহার করা হয়েছে তারা সবাই আমার সত্যিকারের খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। এটা আসলে আমাদেরই গল্প। এই গল্প যদি কেউ পড়েন তাহলে তিনি খুঁজে পাবেন, নব্বই দশকের সময় আসলে বন্ধুত্ব কী জিনিস ছিল? ছোট্ট একটা রোমান্টিক সম্পর্ক কী ছিল। এখানে ওই নব্বই দশকের সময়ের নিখাদ জীবনের অস্তিত্বটা অনেক বেশি ছিল।

সবুজ ঘাসে হাস্যোজ্জ্বল আশরাফ। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম 

প্রিয়.কম: যেভাবে লেখালেখির হাতেখড়ি...

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: মফস্বলের খুবই রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছি। ওই সময়ের বাবা-মায়েরা গান, বাজনা, নাটক বা লেখালেখির চেয়ে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি ছেলে-মেয়েদের বেশি উৎসাহ দিতেন। ওই জায়গা থেকে সংস্কৃতি ও লেখালেখির বিষয়ে মায়ের অনুপ্রেরণাই ছিল সবচেয়ে বেশি। তখনকার সময় বিটিভিতে ‘বলুনদেখিতো’ শিরোনামের একটা প্রোগ্রাম হতো। মা তখন আমাদের ওই অনুষ্ঠনাটা দেখার জন্য খুব উৎসাহ দিতেন। ‘নতুন কুঁড়ি’ নামে তখনকার সময় বিটিভিতে একটা অনুষ্ঠান হতো। ওই প্রোগ্রামটাও বেশ পপুলার ছিল। তো এসবের একটা প্রতিফলনও আমার মধ্যে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। সে সময় আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় আমি দ্বিতীয় হয়েছি। থানা পর্যায়ে প্রথম হয়েছি। এখনতো ফেসবুকে অনেক কিছু জানাজানি হয়। নব্বই দশকের দিকে এটা ছিল না। মা তখন প্রচুর বই পড়ার আগ্রহ জোগাতেন। তখনকার সময় ‘ক্রীড়ালোক’ নামের একটা ম্যাগাজিন ছিল। স্কুল লাইফে লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল কবিতা লেখার মাধ্যমে। তখন ইসলামী ফাউন্ডেশনের পুরস্কারও পেয়েছিলাম। তা অনেক আগের কথা। সে সময় ইনকিলাব পত্রিকার উপহার পাতায় লেখালেখি করতাম। বেশিরভাগ সময় কবিতা লিখতাম। তবে খুব বেশি যে লেখালেখি করেছি ব্যাপারটা তা নয়। তো এভাবেই চলতে থাকে। এরপরতো ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ইন্ডিয়ার ব্যাঙ্গালোরে চলে গেলাম পড়াশোনা করতে। তো ঢাকায় আসার পর মনে হলো আমর এই ‘অসম প্রস্থান’ লেখাটা আমার কিছু বন্ধু বান্ধবকে দেখাই। আমার কিছু বন্ধু আছে, যারা লেখালেখির সঙ্গে খুব ভালোভাবে সংযুক্ত। কিছু বন্ধু আছে যারা কিছু ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টমিডিয়ার সিনিয়র পজিশনেগুলোতে আছে। তো ওরাও ব্যাপক উৎসাহ দিল। ওদেরকে আমি আমার খসড়া লেখাটা দেখানোর পর, তারা আমার প্রথম লেখাটা নিয়ে খুবই উচ্চ প্রতিক্রিয়া জানলো। ওদেরকে দেখিয়ে ছিলাম কারণ, আমি চেয়েছিলাম তারা যাতে আমার এ লেখার খুঁতগুলো খুঁজে বের করে দেয়। তো লেখা দেখে তারা মতামত দিয়ে বলেন, ‘আশরাফ ভাই, আপনার লেখা দেখে মনে হয় না এটা আপনার প্রথম লেখা। আপনার এখন সরাসরি পাবলিকেশনে যাওয়া উচিত।’ আমি আবার হাসতে হাসতে বললাম, ‘এটা আসলে তিন বছর ধরে লিখেছি তো। তাই এমনটা মনে হলেও হতে পারে।’ তাছাড়া লেখা নিয়ে আমার মধ্যে তেমন কোনো তাড়া ছিল না। তো সেখান থেকেই আসলে বইটা ছাপানো হয়েছে।

প্রিয়.কম: ‘অসম প্রস্থান’ বইটিতে কেমন সাড়া পেয়েছেন ?

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: সত্যি কথা বলতে বইটা ছাপা হওয়ার পর ভালো রিভিউ পেয়েছি। বইটা অনলাইনে দেওয়ার পর তার প্রথম সংস্করণের সব কয়টি কপি বিক্রি হয়ে গেছে। যা আমি আশাও করিনি। যেহেতু এটা আমার প্রথম প্রকাশনা। তাই পুরো বিষয়টাই আমার কাছে সন্তানের মতোই ছিল তাই আমিও চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে গড়ে তোলার।

নিজের জীবন ও কিছু বাস্তব চরিত্র নিয়ে লেখা আশরাফের ‘অসম প্রস্থান’ বইটির প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত 

প্রিয়.কম: বেশ যত্ন নিয়ে ও তিন বছর সময় নিয়ে ছোট গল্প সংকলনের ‘অসম প্রস্থান’ লিখেছেন। তো জানতে চাইব কার অনুপ্রেরণায় লেখালেখি শুরু করেছিলেন?

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: ভারতের বেঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে ফিরে আসার পরতো কর্পোরেট লাইফে ঢুকে যাই। শুরুর দিকে গ্রামীণফোনে ছিলাম। এরপর গ্রামীণফোন থেকে রবিতে আসি। তখনও কিন্তু লেখালেখির সেই তাড়নাটা ছিল। কিন্তু লেখাটা আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তখন ঢাকার বাইরে সিলেট ও ময়মনসিংহে পোস্টিং ছিল। তো ময়মনসিংহের কোনো এক আড্ডায় একদিন একজন জিজ্ঞেস করে বললেন, ‘আশরাফ ভাই, সব কিছুই তো করছেন। ভালো চাকরি করছেন। ভালো জীবনযাপন করছেন। কিন্তু নিজের জন্য আসলে কী করছেন?’ তখন আসলে ওই প্রশ্নের সন্তুষ্টমূলক কোনো উত্তর আমার কাছে ছিল না। আমি একটা কর্পোরেটে কাজ করি, একটা ভালো ব্রান্ডে কাজ করি। আবার পরিবারে গেলে দেখা যায়, আমি কারো বাবা, নয়তো কারো ভাই বা কারও হাজবেন্ড। কিন্তু আমার নিজস্ব পরিচয় কী? ধরেন আমি এখন গ্রামীণফোনে নাই, তো এখন কি গ্রামীণফোনের পদবি কি আর আমার সাথে থাকেবে? আবার যখন রবির জেনারেল ম্যানেজার ছিলাম, তখনকার সেই পদবি কি আমার সঙ্গে এখন আছে? নাই। তো যদি বলি আমার আমিটা কী? বা আমার আমিত্বটা কোথায়? তাহলে হয়তো বলতে পারব এই লেখাটাই আমি। কারণ আমার এ লেখাকে কেউ কোনো পদবিতে বা ব্র্যান্ডের মধ্যে আটকে রাখতে পারবে না। একবার মনে হলো, আরে! ছোট বেলায়তো একটা সময় বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা সংগ্রহ করতাম। স্ট্যাম্প কালেক্ট করতাম। এই যে লেখেলেখি করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে এসব কিছুতে একটা ছেদ পড়েছে। তো এই ছেদ পড়ে যাওয়ায়, তাড়নাটা আবার উঁকি দেওয়া শুরু করেছে। সেই তাড়না থেকেই আসলে মনে হয়েছে, কিছু অপূর্ণ ও অসমাপ্ত লেখা রয়ে গেছে। যেগুলো এবার শেষ করতে হবে। যখন আবার নতুন করে লেখালেখি শুরু করলাম। সম্ভবত ২০১২ বা ২০১৩ সালের দিকে আবার নতুন করে লেখার শুরুটা হলো। তো মনে হলো নিজের জন্য লিখি। লিখছিলাম নিজের জন্যই। বই প্রকাশ করবো বা এর প্রচারণা হবে, এমন কোনো উদ্দেশ্যটা তখন ছিল না। ওই লেখার মধ্যে আবার একটু ছেদ পড়ল। তো লেখাটা শেষ হওয়ার পর আমি ঢাকায় চলে এলাম। কিন্তু প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছিলাম না। কারণ, নতুন লেখক হিসেবে লোকজন আসলে কীভাবে দেখবেন? এর গ্রহণযোগ্যতা কী? এ নিয়ে একটু ইতস্তত বোধ করছিলাম। 

রাজধানীর হাতিরঝিলে প্রিয়.কমের সঙ্গে আশরাফ। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: কর্পোরেটে মুখী মানুষরা সাহিত্যের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন বলে ধারনা করেন অনেকে। ‘সাহিত্য আর কর্পোরেট’ এ দুই নিয়ে আপনার মতামত কী?

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: এরই মধ্যে তিনটি মেজর ব্র্যান্ডে কাজ করেছি। আমরা যারা আসলে কর্পোরেটে কাজ করি এবং যে লেভেলে কাজ করি, এখানে প্রেসার আসলে এমন থাকে, যে পেসারটা ব্যক্তিগত জীবনেও প্রাভাব ফেলে। আবার নিজস্বতার মধ্যেও প্রভাব ফেলে। যে কাজটা করছি, সারা দিন ওই কাজটা নিয়েই থাকতে হয়। যেমন এই মুহূর্তে আমি আপনার সাথে কথা বলছি, কিন্তু আমার মাথার মধ্যে ঠিকই ঘুরছে, কাল কোন প্রমোশনটা যাবে? কোন অফারটা থাকলে ভালো হয়, এইসব। মানে, কেমন যেন একটা অবসেশন তৈরি হয়ে যায়। আর আমি আমার এই প্রকাশনার মধ্য দিয়ে একটি বার্তা দিতে চাই। যারা কিনা কর্পোরেট লিডার। আমি নিজেও এমন অনেক কর্পোরেট লিডারদের চিনি। যাদের মধ্যেও এই সত্তাটা আছে, কিন্তু ঘুমিয়ে আছে। শুধু তারা একটু সময় বের করতে পারলে তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সত্তাটার উপযুক্ত প্রকাশ ঘটাতে পারবেন। আমার মনে হয় আমরা যারা কর্পোরেটে কাজ করি তাদের শুধু একটু সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন। যাতে একে যদি অন্যকে এ বিষয়ে প্রভাবিত করতে পারি। চাইলে এখানেও যদি ওই জাগরণটা আনা যায়। তো আমি আমার বইয়ের মাধ্যমে আসলে ওই বার্তাটাই দিতে চাচ্ছি। আমরা যারা এখনো দ্বিধার মধ্যে আছি বা সময়কে অজুহাত হিসেবে নিচ্ছি। আমি যদি আমার নিজের কথাই বলি, তা হলে দুইটা ছোটগল্প লিখতে তো তিন বছর লাগার কথা না। আমি চাই, আমরা সবাই যেন আমাদের সবার “আমি” কে জাগিয়ে তুলি। নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আমিকে যেন সামনে নিয়ে আসি, মুখোমুখি করি। এটাই আসলে আমার চাওয়া। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, লেখাটা তো আসলে জোর করে হয় না। আমার যা হয়েছে তা থেকে আমার মনে হয়েছে, মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব থাকলে, স্পৃহা, আকাঙ্ক্ষা, অপূর্ণতা থাকলে সেখান থেকে আসলে লেখাটা হয়। যেমন গত কয়েক দিন আগে রাত দেড়টার দিকে আমি একটা কবিতা লেখেছি।

কর্পোরেট ও সাহিত্যের আলাপ করার সময় ক্যামেরাবন্দী আশরাফ। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: নব্বই দশকের সময়কে ঘিরে ‘অসম প্রস্থান’। ব্যক্তিগতভাবে নব্বই দশক আর বর্তমান সময়ের মধ্যে কি কি পার্থক্য খুঁজে পান?

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: আমার কাছে মনে হয় তখনকার মানুষের মধ্যে একটা কমিটমেন্ট ছিল। যেমন, আমি যাকে বিয়ে করেছি তার সঙ্গে আমার এক যুগের সম্পর্ক ছিল তারপর আমারা বিয়ে করেছি। আমার মনে হয় এখনকার সময় মানুষ অনেক অল্প সময়ের চিন্তা করেন। যাই হোক এটা হতেই পারে।‘অসম প্রস্থান’ বইটিতে তখনকার নব্বই দশককে তুলে ধরার কারণে আমার লেখা গল্পে কৃত্রিম জীবনের চেয়ে একটি উচ্ছল ও নি:স্বার্থ জীবনের গল্প চলে এসেছে। যেমন ধরুন ওই সময় ব্যান্ড সংগীতের একটা প্রভাব ছিল। সবার সঙ্গে সবার সম্পর্কটা অনেক রোমান্টিক ছিল। আজ কালকার মতো এতো কৃত্রিম ছিল না। তখন ফুটবল অনেক পপুলার ছিল এখনতো ফুটবল মানুষ মাঠে গিয়ে দেখতেও যায় না। এখন অনেকেই আমাদের ফুটবল খেলোয়াড়দের নাম বলতে পারবেন না। তখনকার সময় ফুটবল নিয়ে পাড়া মহল্লায় মিছিল হতো। আবার দিন শেষে সবাই একাকার হয়ে যেত। ওই সময়ের তরুণদের বেড়ে ওঠার স্বপ্ন ছিল অন্যারকম। এখনকার সময়ের একটা ছেলেকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও। তখন সে হয় তো বলবে, আমি মার্ক জাকারবার্গ হতে চাই বা এ ধরনের ডিজিটাল সম্পর্কিত কিছু হতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে দেখা যায় তাদের। কিন্তু নব্বইয়ের সময়কার কাউকে যদি তখন জিজ্ঞেস করা হতো, তুমি কি হতে চাও? তখন তারা হয়তো উদাহরণ দিয়ে বলবে। আইয়ুব বাচ্চুর অমুক গানটা আছে না? আমি ওই রকম একজন গীতিকার হতে চাই। হয়তো বা বলবে, অন্য কোনো আইকনিক একজন গিটারিস্টের মতো গিটারিস্ট হতে চাই অথবা ‘তমুকের মতো আমার একটা ব্যান্ড থাকবে’ এ ধরনের ইচ্ছা পোষণ করতে দেখা যেত তাদের। তখনকার সময়টাই ছিল এমন। হয়তো বা বলবে, ‘আমি একজন ফুটবলার হতে চাই’। তখনকার ব্যাপারটাই ছিল এরকম। তো গল্পের এখানে দেখা যাবে নব্বইদশকের রোমান্টিসিজম কী ছিল? একটা তরুণের স্বপ্ন কী ছিল? তার বেড়ে ওঠা কী ছিল? সে আসলে জীবনে অর্জন করে তে চায়?

হাসিখুশি আশরাফ। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?

সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ: ১৯৮১ সালে আমার জন্ম। নারায়ণগঞ্জ জেলার লালপুর-ফতুল্লায়। বেড়ে উঠেছি যৌথ পরিবারে। বাবা সৈয়দ নূর উদ্দিন আহমেদ ও মা আমজুমান আরা বেগম। ভালোলাগে সবার সঙ্গে মিশতে। চেষ্টা করি আন্তরিক থাকতে। প্রাণোচ্ছ্বোল জীবনযাপনই কাম্য। শিক্ষা জীবনে নারায়ণগঞ্জ কিন্টারগার্ডেন স্কুল থেকে প্রাথমিক ও আদর্শ স্কুল হতে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হই। তখন থেকেই লেখালেখিতে হাতেখড়ি। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে ভারতের বেঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করি। ২০০৫ সালে বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোনের মাধ্যমে পেশাজীবন শুরু। পরে রবি আজিয়াটা বাংলাদেশ লিমিটেড’ হেড অব চ্যানেল অপারেশনের দায়িত্ব পালন। বর্তমানে নোকিয়া বাংলাদেশ মোবাইল ডিভিশনের ‘হেড অব সেলস অপারেশনের দায়িত্বে আছি। পছন্দ সিনেমা দেখা, বই পড়া ও ভ্রমণ।

প্রিয় সাহিত্য/গোরা