কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে নওশাবা। ছবি: সংগৃহীত

‘প্রকৃতি তার মাকে ফিরে পেতে চায়’

গোলাম রাব্বানী
ফিচার এডিটর
প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৫:২৭
আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৫:২৭

(প্রিয়.কম) মূলত রং তুলি নিয়েই ব্যস্ত থাকার কথা ছিল তার। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন কাজী নওশাবা আহমেদ। কিন্তু সেই পরিচয় আড়াল করে ব্যস্ত হলেন অভিনয়ে। মঞ্চ থেকে বড় পর্দা। সবগুলো মাধ্যমই ছুঁয়ে ছুঁয়ে দর্শক মনে নিজের জায়গা করে নিচ্ছিলেন নওশাবা। অভিনয়ের বাইরে মানবিক মানুষ হিসেবেও রয়েছে তার সুনাম। বলা যায় তাকে বিপদের বন্ধু।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিসহ বিভিন্ন সময় ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে রাজপথেও দেখা মিলেছে তার। সর্বশেষ নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের একটি ভুলের কারণে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছেন এই অভিনেত্রী

ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গত ৪ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় তাকে

এদিকে নওশাবার বেশ ক’জন কাছের মানুষের ভাষ্য হচ্ছে, ভুল মানুষই করে। নওশাবাও ভুল করেছেন। আবার নিজেও তা স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই ভুল স্বীকার করে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।

৪ আগস্ট পোস্ট করা ওই ভিডিওতে নওশাবা বলেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ। আমি একজন অভিনেত্রী। আজকে দুপুর বেলা [৪ আগস্ট] আমার ফেসবুক থেকে একটি লাইভ শেয়ার করেছিলাম। সেখানে আমি বলেছিলাম যে একটি শিশুর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। এবং চারজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার কাছে একটি ফোন এসেছিল। যে আমাকে ফোন করেছিল সে চিৎকার করে কাঁদছিল। আমি তার কথায় বিভ্রান্ত হই এবং বিভ্রান্ত হয়ে তৎক্ষনাৎ লাইভে যাই। ও আমাকে বলে যে ঘটনাটি জিগাতলা হচ্ছে, এবং সে সময় আমি উত্তরাতে ছিলাম। আমি ভুল তথ্য দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে লাইভে আসি। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি আমাকে যে তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছিল তার একটিও সঠিক না।’

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে নওশাবা। ছবি: সংগৃহীত

নওশাবা যে আবেগপ্রবণ হয়ে এই ভুলটা করেছেন তা তার সহকর্মী এবং দীর্ঘদিনের কাছের বন্ধুরাও খুব ভালো করেই আন্দাজ করতে পারেন। তাইতো ‘আয়নাবাজি’ নির্মাতা অমিতাভ রেজা ৫ আগস্ট এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘নওশাবা বুঝে নাই , ও একটু বেশি সংবেদনশীল, ওর দ্রুত মুক্তি কামনা করি।’

শুধু অমিতাভ রেজা নন। আরও অনেকেই নওশাবার মুক্তি কামনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। অভিনেত্রী রুনা খান এক পোস্টে লিখেন, ‘২০০৪ এ পরিচয়, আমি সুমনা সে ইকরি, সে চারুকলায় আর আমি ইডেনে। ব্যাচমেট ছিলাম আমরা.. বন্ধু ছিলাম। অত্যন্ত আবেগী,অভিমানী কিন্তু ১৪ বছরের পরিচয়ে তাকে কখনো কুটিল বা ষড়যন্ত্রকারী মনে হয়নি। সেই মানুষটা ষড়যন্ত্র করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু করবে এটা আমার ভাবতে কষ্ট হয়। সে অনেক বড় ভুল করেছে,অন্যায় করেছে, রাষ্ট্রের সঙ্কটকালে সে গর্হিত মিথ্যাচার করছে। আইন তার নিজের গতিতে চলবে, তারপরও বলছি তদন্তে যদি পাওয়া যায় যে, সে ষড়যন্ত্রকারী নয়, আবেগবশত ভুল করে ফেলেছে, তাহলে কি প্রশাসন একটু সদয় হতে পারে না তার প্রতি? বারবার ওর মেয়ে প্রকৃতির মুখটা মনে পড়ছে। সুমনা তোমাকে ভালোবাসে ইকরি।’

চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান লিখেছেন, ‘নওশাবার একটা শিশুর মতো হৃদয় আছে। যার জন্য সে নির্দ্বিধায় অনেক মহৎ উদ্যোগের সাথে জড়িয়ে পরে আবার দুই এক সময় অবিবেচক কাজ করে ফেলে। অবিবেচনার জন্য অনেক হেনস্তা তো হলো, আর কতো! আমরা যারা কম বেশি নওশাবাকে চিনি তাদের ওর মুক্তির জন্য কথা বলা শুরু করা উচিৎ।’

আরেক নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল লিখেন, ‘আজকে একটা অনলাইন পোর্টালে দেখলাম অভিনেত্রী নওশাবাকে আরও এক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে! নওশাবা আমার ঘনিষ্ঠ কেউ নয়, তবে সে যেহেতু চারুকলার জুনিয়র, তাকে অনেক বছর ধরে চিনি। তার স্বামী জিয়া ভাইকে চিনি একজন মিউজিশিয়ান হিসাবে , সেও দীর্ঘবছর ধরে। খুবই নিরীহ গোছের মানুষ এরা, ছিমছাম নিরীহ পরিবার একটা ! এই পরিবারের উপর দিয়ে এখন কী বয়ে যাচ্ছে, তাই ভেবে শিউরে উঠি ! আমার মাথাতেই আসে না চিত্রকলায় পাঠ নেওয়া একজন অভিনয়শিল্পী কি এমন গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশীদার হতে পারে যে তাকে দফায় দফায় রিমান্ডে নিতে হবে ! এই ট্রমা থেকে সে বা তার পরিবার কোনো দিনও কি বের হতে পারবে ! ফুটফুটে একটা বাচ্চা আছে ওদের, এই অবুঝ শিশুর মা ছাড়া একেকটা রাতই বা কেমন যায় ! নওশবার সাথে কোনো দিনও আমার কোনো কাজ হয়নি, কিন্তু তার এবং তার পরিবারের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগল, তাই সেটা প্রকাশ না করে পারলাম না !’

স্বামী জিয়া ও মেয়ে প্রকৃতির সঙ্গে নওশাবা। ছবি: সংগৃহীত

অভিনেত্রী মিথিলা ফ্রিনওশাবা হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেন, ‘প্রকৃতি তার মাকে ফিরে পেতে চায়।’

নির্মাতা ও লেখক মাতিয়া বানু শুকু লিখেন, ‘বাক স্বাধীনতার এই দেশে নওশাবাকে নিয়ে কিছু বলতে আমি ভয় পাই। তারপরেও ভয়ে ভয়ে জানতে চাই, তাকে এখন মুক্তি দিলে সে কি আবারও গুজব করতে ঝাপিয়ে পড়বে?’

নির্মাতা রাশিদ পলাশ লিখেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে রাজপথে দাঁড়িয়েছিল নওশাবা। আমার দেখা খুবই মানবিক একজন মানুষ সে। হয়ত অন্যদের তুলনায় একটু বেশি আবেগপ্রবণ। আমি রাশিদ পলাশ, চিত্রপরিচালক।
আমি অভিনেত্রী নওশাবার মুক্তির জন্য অনুরোধ করছি।’

অভিনেতা দুখু সুমন লিখেন, ‘নিজের ভুলের বোঝা মাথায় নিয়ে আজও পুলিশ হেফাজতে থাকা আমার এই পাগলি বন্ধুটা ভীষণ অসুস্থ। ডাক্তার এম-আর-আই করার পরামর্শ দিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেলে ওর চিকিৎসা চলছে। ওর জন্য সবাই একটু প্রার্থনা কর বন্ধুরা। তুই ভালো হয়ে ওঠ নওশে, আমরা আবার মেতে উঠব কাজ আর আড্ডায়। ভয় পাসনে একটুও, আমাদের ভালোবাসা তোর সঙ্গে আছে।

এতো গেল নির্মাতা আর অভিনেতাদের কথা। এর বাইরেও নওশাবার কাছের বন্ধু ও ভক্তরা নওশাবার মুক্তির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্নি পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিশ্বাস করেন শিগগিরই নওশাবা মুক্তি পাবেন, এবং সরকার নওশাবাকে ভুল সংশোধনের সুযোগ দেবে।

আদালতের পথে নওশাবা। ছবি: সংগৃহীত

নওশাবার উল্লেযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে অমিত আশরাফের চলচ্চিত্র ‘উধাও’, তার অভিনীত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ভুবন মাঝি’ এবং পুলিশ অ্যাকশন-থ্রিলারধর্মী ‘ঢাকা অ্যাটাক’। এ ছাড়া তার অভিনীত ‘ঢাকা ড্রিমস’ এবং ‘চন্দ্রবতীর কথা’ ছবি দুটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। নওশাবা অভিনীত প্রথম নাটক ‘ছোটবেলা বড়বেলা’, প্রথম ধারাবাহিক জুয়েল মাহমুদ পরিচালিত ‘ললিতা’। তিনি দীর্ঘ ছয় বছর সিসিমপুরের ইকরি মিকরি চরিত্রে কণ্ঠদান ও পাপেটটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিসিমপুরের ভূতো পাপেট চরিত্রেও তিনি অভিনয় করেন। বাংলালিংকের লেডিস ফার্স্টের বিজ্ঞাপন ছিল তার প্রথম বিজ্ঞাপন। এ ছাড়াও তিনি গ্রামীণফোন, বিবিসি সংলাপ, নেসক্যাফে, ম্যারিডিয়ান চিপস ও টেলিটকের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন।

প্রিয় বিনোদন/গোরা