কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন বাবা-মা। ছবি: প্রিয়.কম

শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে করুন এই ১৫টি কাজ!

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫৩
আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫৩

(প্রিয়.কম) বাবা-মায়ের থেকেই জীবনের বেশিরভাগ দরকারি শিক্ষা পায় সন্তান। আর এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্ম-বিশ্বাসের শিক্ষা। যে শিশুর আত্মবিশ্বাস কম সে কখনোই জীবনে সফল হতে পারবে না। হারার ভয় এবং হতাশার ভয় তাকে তাড়া করে ফিরবে সাড়া জীবন। জীবনের প্রথম দিকেই সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারেন বাবা-মা, জানিয়েছেন সাইকোলজিস্ট কার্ল পিকহার্ট এবং টেরি অ্যাপটার। জেনে নিন সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়ানর ১৫টি উপায়-

১) হারুক আর জিতুক, প্রশংসা করুন

সন্তানের প্রচেষ্টার প্রশংসা করাটাই সবচেয়ে বড়। হারার কারণে তাকে লজ্জা দেবেন না। সে যে চেষ্টা করেছে তার জন্যই প্রশংসা করুন। এতে সে বারবার চেষ্টার উৎসাহ পাবে।

২) অনুশীলন করতে বলুন

সন্তানের উৎসাহ যেখানেই হোক না কেন, খেলাধুলা বা পড়াশোনা- তাকে অনুশীলন করার উৎসাহ দিন। এতে সে ওই কাজে ভালো হয়ে উঠবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তাকে কখনোই বলবেন না এই কাজটা করো না, ওই কাজটা করো। তাকে নিরুৎসাহিত করলে সে মনে করবে আপনি তার ইচ্ছের মূল্য দিচ্ছেন না।

৩) তার সমস্যা তাকেই সমাধান করতে দিন

আপনিই যদি সন্তানের সব কাজ করে দেন, তার সমস্যা সমাধান করে দেন তাহলে সে নিজে আর শেখার উৎসাহ পাবে না। সে নিজে একটা কাজ করতে পারে, এমন আত্মবিশ্বাসও পাবে না। সন্তানের রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হোক, সবগুলো এ না পেয়ে কয়েকটা বি, সি পাক। কিন্তু সে নিজে নিজে পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝবে। অন্যদিকে আপনি তাকে বাড়ির কাজ করে দিলে এবং শিক্ষককে বলে ভালো গ্রেড এনে দিলে সে পড়াশোনায় কখনোই ভালো হবে না।

সবাই আপনার সন্তানের বন্ধু হতে নাও চাইতে পারে।ছবি: প্রিয়.কম

৪) সবার সাথে বন্ধুত্ব করা যায় না

সবার সাথে বন্ধুত্ব করা নিঃসন্দেহে সম্ভব নয়। বন্ধুত্ব হলেও দেখা যায় একটা সময় সে বন্ধুত্ব ভেঙে যায়। আবার সবাই আপনার সন্তানের বন্ধু হতে নাও চাইতে পারে। সন্তানকে বোঝান যে এটা কোনো সমস্যা নয়। সে অন্য কারও সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৫) তাকে কৌতূহলী হতে দিন

সন্তান একটানা প্রশ্ন করতে থাকলে অনেক বাবা-মা হয়রান হয়ে পড়েন। কিন্তু তাকে প্রশ্ন করতে নিরুৎসাহিত করবেন না বা বকা দিয়ে থামিয়ে দেবেন না। কারণ এসব প্রশ্ন শিশুর জন্য জরুরী। তাকে বুঝতে দিন যে সে সব জানে না। এতে সে পৃথিবীর ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে উঠবে। তার আত্মবিশ্বাস, অধ্যাবসায় এবং প্রচেষ্টা বাড়বে।

৬) তাকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দিন

তাকে নিজে নিজে বিভিন্ন কাজ যেমন, সাইকেল চালাতে দিন। এলাকার বিভিন্ন বাড়ির আশেপাশে একপাক ঘুরে আসতে পারুন। সে যদি এই কাজটি নিজে নিজে পারে তাহলে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে অনেকটাই।

৭) তার কাজের সমালোচনা করবেন না

আপনার সন্তান খুব শখ করে, আপনাকে খুশি করানোর জন্য একটি কাজ করেছে। আপনি সে কাজের সরাসরি সমালোচনা করলে সাথে সাথেই তার মন খারাপ হয়ে যাবে। এরপর সে আর নিজে থেকে কিছু করার সাহস পাবে না। সমালোচনা না করে তার কাজের ব্যাপারে ছোট ছোট উৎসাহমূলক মন্তব্য করুন এবং তার সংশোধনের জন্য ছোট ছোট উপদেশ দিন।

৮) ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি

ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, কিন্তু তার জন্য বাবা-মাকেও চেষ্টা করতে হবে। সন্তান ব্যর্থ হলেও তাকে উৎসাহ দিতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণের পথ দেখাতে হবে তাকে। ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার জন্য সন্তানকে সাহায্য করুন।

৯) নতুন শিক্ষা নেওয়ার পথ খুলে দিন

শিশুকে নতুন নতুন জিনিস শেখান, নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে দিন। তারা এতে প্রথম প্রথম ভয় পাবে এবং অস্বস্তিবোধ করবে। কিন্তু একবার তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সে যখন নতুন একটি কাজ করবে বা একটি অভিজ্ঞতার স্বাদ নেবে, তার সাহসের প্রশংসা করুন।

১০) প্রতিভা নয়, চেষ্টার মূল্য দিন

ধরুন আপনার সন্তান একটা পরীক্ষায় খারাপ করেছে। সে কী বলবে? আত্মবিশ্বাস কম এমন একটি শিশু দাবি করবে সে বোকা, বা সে অঙ্ক ভালো পারে না। আত্মবিশ্বাস বেশি এমন একটি শিশু বলবে সে পরীক্ষাটির জন্য ভালোভাবে পড়াশোনা করেনি, বা যথেষ্ট দ্রুত লেখেনি। নিজের সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে তাকে বোঝান, তার বুদ্ধি কম নয়, অঙ্কেও সে খারাপ নয়। তার আরেকটু চেষ্টা প্রয়োজন, তাহলেই সে ভালো করতে পারবে।

১১) সন্তানের হিরো হয়ে উঠুন

আপনি আত্মবিশ্বাসী হলে সন্তানও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। তার উদাহরণ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করুন। তাহলেই আপনার মতোই হবে আপনার সন্তান।

অভিভাবকের ভূমিকা পালন করুন, কিন্তু খুব কঠোর হবার দরকার নেই। ছবি: প্রিয়.কম

১২) খুব বেশি কঠোর হবেন না

বাবা-মা খুব বেশি কঠোর হলে, সন্তানের থেকে খুব বেশি আশা করলে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ার বদলে কমে যায়। উল্টো সে বাবা-মায়ের আদেশের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, নিজ থেকে কিছু করার সাহস পায় না। অভিভাবকের ভূমিকা পালন করুন, কিন্তু খুব কঠোর হবার দরকার নেই। সে অবশ্যই শিশুর মতোই কাজ করবে। প্রাপ্তবয়স্কের মতো বুদ্ধি-বিবেচনা তার থেকে আশা করবেন না।

১৩) সন্তানকে বলবেন না আপনি তাকে নিয়ে চিন্তিত

সন্তানকে নিয়ে সব বাবা-মাই চিন্তা করেন। কিন্তু তার সামনে এই চিন্তা প্রকাশ করার দরকার নেই। ‘আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তিত’, ‘তোমার যে কী হবে’, এ ধরণের কথায় সন্তান ভাবে, তাকে নিয়ে বাবা-মা খুব অসন্তুষ্ট। এতে তার আত্মবিশ্বাস নেমে যায় অনেকখানি। সে নিজেকে বোঝা ভাবতে থাকে।

১৪) সন্তানকে শর্টকাট দেখাবেন না

সন্তান স্কুলে ভালো করছে না, এতে সন্তানকে পড়াশোনায় সাহায্য না করে আপনি উল্টো শিক্ষকের কাছে ধর্না দিয়ে দুটো মার্কস বাড়িয়ে নিলেন, বা পরীক্ষার আগে শিক্ষকের থেকে প্রশ্ন নিয়ে আসলেন- সন্তানের জন্য এর থেকে ক্ষতিকর আর কিছু হয় না। এতে সন্তান ভাববে, এভাবেই যদি ভালো মার্কস পাওয়া যায় তাহলে আর পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়ে কী হবে? এছাড়া সে নিজের বুদ্ধিমত্তার ওপরেও বিশ্বাস হারাবে।

১৫) তার অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন

সবসময় একটি শিশুর মন ভালো থাকবে না। কখনো তার মন খারাপ হতেই পারে। একে অনেক বাবা-মা খারাপভাবে নেন। তারা আশা করেন শিশু সবসময় হাসিখুশি থাকবে। এমনটা আশা করা অন্যায়। শিশুর সাথে আলোচনা করুন। মন খারাপ করাটা খারাপ কিছু নয় এটা তাকে বুঝতে দিন। সে কেন মন খারাপ করে আছে বা রেগে আছে তা জানার চেষ্টা করুন। উল্টো তার ওপরে রাগ দেখাবেন না।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

প্রিয় লাইফ/ আর বি