কিছু কিছু পরিবর্তন আছে, যা সন্তান জন্মের পরেও থেকে যায়। ছবি: প্রিয়.কম
গর্ভবতী নারীর শরীরে আসে যে ১৪টি স্থায়ী পরিবর্তন
আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০১৮, ২০:৫২
(প্রিয়.কম) গর্ভবতী হবার পর দশটি মাস জুড়ে একজন নারীর শরীরে দৃশ্যতই অনেক পরিবর্তন আসে। সন্তানের জন্মের পর আবার সে পরিবর্তন চলেও যায়। কিন্তু কিছু কিছু পরিবর্তন আছে, যা সন্তান জন্মের পরেও থেকে যায়। জেনে নিন এমনই কিছু পরিবর্তনের কথা-
১) বড় পা
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর পা বড় হয়ে যায় স্থায়ীভাবে। সাধারণত ১১ থেকে ১৬ কেজি ওজন বাড়ে গর্ভবতী নারীর। এতটা ভার বহন করতে গিয়ে পা আগের তুলনায় চ্যাপ্টা হয়ে যায়। ফলে জুতোর সাইজ কিছুটা বেড়ে যায়। হরমোনেরও প্রভাব রয়েছে এর ওপর। গর্ভধারণের পর নতুন সাইজের জুতো-স্যান্ডেল পরাই ভালো।
২) ওজন বাড়া
গর্ভাবস্থায় তো ওজন বাড়বেই। বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে সন্তানের জন্মের কিছুদিন পর সে ওজন ঝরেও যায়। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই ওজনটা ঝরে না। প্রতি ৪ জনে একজন নারীর ওজন ৫ কেজির মত বেড়ে যেতে পারে স্থায়ীভাবে। একবার গর্ভবতী হলে এই ওজনটা তেমন মাথা ঘামানোর মত কিছু হয় না। কিন্তু ৪-৫ বার সন্তান ধারণের পর ওজন অনেক বেড়ে যেতে পারে বটে।
৩) যৌনাঙ্গে পরিবর্তন
নারী যৌনাঙ্গ বা ভ্যাজাইনার মধ্যে দিয়ে শিশুর জন্ম হবার কারণে তার আকৃতিতে পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রসবের পর অনেকের ভ্যাজাইনা প্রায় আগের অবস্থায় চলে আসে। কিন্তু অনেকেরই আগের তুলনায় যৌনাঙ্গ প্রসারিত হয়ে যায়।
৪) মুত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
মুত্রথলি বা ব্লাডারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায় সন্তান জন্মের পর। কারণ প্রসবের সময়ে শ্রোণি এলাকার পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে বারবার মুত্রত্যাগের প্রবণতা দেখা যায় এবং মূত্র আটকে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
৫) দাঁতের সমস্যা
২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, সন্তান আছে এমন নারীদের দাঁতের সমস্যা থেকে দাঁত হারানোর সম্ভাবনা বেশি।
৬) স্তনের পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় এবং এর পরে নারীর স্তনে কিছু পরিবর্তন আসে। প্রথমে সন্তানকে দুধ দেওয়ার জন্য স্তনের পরিবর্তন হয় এবং স্তন বড় হতে দেখা যায়। কিন্তু সন্তানকে ব্রেস্ট ফিডিং করানো বন্ধ করে দিলে আবার স্তন ছোট হয়ে যায়। আবারও গর্ভধারণ করলে একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এছাড়া স্তনের লিগামেন্ট প্রসারিত হবার কারণে স্তন ঝুলেও যেতে পারে স্থায়ীভাবে।
৭) ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে
সন্তানকে ব্রেস্টফিডিং করালে চিরকালের মতো ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
৮) পেটে দাগ
গর্ভাবস্থায় পেটের আশেপাশের ত্বকে লালচে স্ট্রেচ মার্ক দেখা যাওয়াটা বেশ স্বভাবিক। সন্তানের জন্মের পর স্ট্রেচ মার্ক দূর হয় না। তবে সময়ের সাথে তা হালকা হয়ে আসে। তবে ওজন বাড়লে সেগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া পেটের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নাভি বরাবর একটা কালো দাগ দেখা দিতে পারে। মুখে মেছতার মতো ছোপ ছোপ দাগ থাকতে পারে। এই দাগ সন্তান প্রসবের পর চলে যায়। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই দাগ থেকে যেতে পারে।
৯) ডায়াবেটিস
গর্ভাবস্থায় ১০ শতাংশ নারীর ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়। তবে সন্তান প্রসবের পরেও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকেই যায়। যেসব নারীর গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়, তাদের অর্ধেকেরই টাইপ টু ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে পরবর্তীতে।
১০) সেক্স ড্রাইভ
সেক্স ড্রাইভ বা যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যেতে পারে সন্তান প্রসবের পর। এক বছর পর্যন্ত তা কম থাকতে পারে। মূলত সন্তানের পেছনে সময় দিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাবার কারণেই সেক্স ড্রাইভ কম থাকে। শুধু তাই নয়, অর্গাজম বা যৌনসুখের মাত্রাও কমে যেতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে।
১১) ভেরিকোস ভেইন এবং হেমরয়েড
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরের কিছু অংশে বিশেষ করে পায়ে নীল, ফোলা এবং ব্যথাযুক্ত শিরা দেখা যায়। এগুলোকে বলে ভেরিকোস ভেইন। এসব শিরা যদি রেক্টাম বা পায়ুপথে দেখা যায়, সেগুলোকে বলে হেমরয়েড। সন্তান জন্মের ছয় থেকে বারো মাসের পর এগুলো চলে যেতে পারে।
১২) জরায়ু বড় হয়ে যাওয়া
সাধারণত একটি নাশপাতির সমান হয় জরায়ু। কিন্তু গর্ভাবস্থায় তা একটি তরমুজের মত বড় হয়ে যেতে পারে। সন্তান প্রসবের পর তা আবার ছোট হয়ে যায়। কিন্তু আগের অবস্থায় কখনোই ফিরে যায় না। মেনোপজের পর অবশ্য নাশপাতির চেয়েও ছোট হয়ে যায় জরায়ু।
১৩) অ্যাবডমিনাল সেপারেশন
গর্ভাবস্থায় নারীর পেটে আরও একটি পরিবর্তন আসে, তাকে বলা হয় ডায়াস্ট্যাসিস রেক্টাই অ্যাবডমিনিস। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পেটের পেশীগুলো একে ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাধারণত প্রসবের পর ধীরে ধীরে পেশীগুলো আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই পেশীগুলো আলাদা রয়ে যায়।
১৪) চওড়া নিতম্ব
নারীরা অনেক সময়েই খেয়াল করেন সন্তান ধারণের পর তার নিতম্ব চওড়া হয়ে গেছে। মূলত এই এলাকায় আগের তুলনায় বেশি চর্বি জমা হবার কারণেই তা চওড়া হয়ে যায়।
সূত্র: লাইভসায়েন্স
প্রিয় লাইফ/ আর বি