কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ভাত শালিক পাখি। ছবি: লেখক

ভাত শালিকের ভালোবাসায়...

এম এ মোমেন
আলোকচিত্রী,লেখক
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৯:২১
আপডেট: ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৯:২১

ছোট বেলায় পাখি পালনের প্রতি আলাদা একটা শখ ছিল। স্কুল ছুটি হলে নতুবা বন্ধ থাকলে পাখির খোঁজে বের হতাম। পাখি পালন বলতে একটা পাখি খাঁজার ভেতর বন্দী রেখে নিজের আয়ত্ত্বে আনার ব্যর্থ চেষ্টা জীবনে কম করিনি।

গ্রামের যে কারও বাড়িতে পোষা পাখি দেখলে খুব আপসোস হতো। মনে মনে ভাবতাম আমারও যদি একটা পোষা পাখি থাকত, কথা বলতে পারত। সাধারণত গ্রামের বেশির ভাগ পাখিপ্রেমী মানুষের ভাত শালিক পাখির প্রতি বেশি টান থাকত। আমরা গ্রামে যেই পাখিটাকে শালিক বা শাড়ো পাখি বলি। আমি বেশ কয়েকটা ভাত শালিকের বাচ্চা বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করেছিলাম।

ভাত শালিক পাখি সংগ্রহ করা খুব যে কঠিন ছিল তা নয়। গাছের ফোকোরে নতুবা কারও কলস টাঙ্গানো গাছে সাধারণত ভাত শালিক পাখিরা বাসা বাঁধে। বছরের একটা সময় ভাত শালিক পাখিরা বাচ্চা দিত। সেই বাচ্চা যেভাবেই হোক জোগার করতাম। মঝে মধ্যে কিছু টাকা দিয়ে ভাত শালিকের বাচ্চা কিনেও নিতাম। কিন্তু দুভার্গ কারণে আমি অনেক চেষ্টার পরেও পাখি গুলোকে পোষ মানাতে পারিনি।

এটা আমার ছোট বেলায় সবচেয়ে দুঃখের একটা বিষয় ছিল। ভাত শালিকের বাচ্চা যখন নিয়ে আসতাম তখন স্কুল শেষে কাচের একটা বোতলে ফড়িং শিকার করতাম। ভাত শালিকের অন্যতম প্রিয় খাবার হলো ঘাস ফড়িং। সাধারণত ভাত শালিক সর্বভূক প্রাণি হলেও তাদের পছন্দের খাবার ছিল ঘাস ফড়িং কেঁচো, ফল, শষ্যদানা, বীজ, ছোট সরীসৃপ এবং মানুষের ফেলে দেওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট তাদের প্রধান খাবার ছিল।

ভাত শালিকের আরেকটা পছন্দের খাবার হলো খেজুরের রস। খেজুর রসের কলসে বসে তারা রস খেতে খুব পছন্দ করে। আমি স্কুল শেষে ফড়িং ধরার কাজ শেষ করে বাচ্চাগুলোকে নিজের মতো করে খাওয়াতাম। রাতের বেলায় সন্তানের মতো যত্ন করে খড় কিংবা ঘাসের শুকনো পাতা বিছিয়ে রাখতাম যাতে বাচ্চাগুলো কষ্ট না পায়।

ভাত শালিকের নামের পেছনে তাদের চলাচল ও আচার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে নাম রাখা হয়েছে অ্যাক্রিডোথিরিস যার অর্থ হলো পঙ্গপাল বা শিকারী। আমি প্রতিবারই ব্যর্থ হতাম এই বাচ্চাগুলোকে বড় করতে।

একটু বড় হতেই খাঁচা থেকে বের করে দিতাম আর তারা সেই সুযোগের ফলে দুই একদিনে নিজেদের ঠিকানায় পাড়ি জমাতো। আমি কষ্ট পেতাম। আবার চেষ্টা করতাম, আবার ব্যর্থ হতাম। এভাবে আমি কম করে হলেও দশটা বাচ্চাকে বড় করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি!!

ভাত শালিক মানুষের কথা নকল করতে পারে, টিয়া বা ময়না পাখিও পারে কিন্তু টিয়া বা ময়না পাখি পাওয়া দুষ্কর বিষয়। তাই ভাত শালিকই ছিল প্রধান আকর্ষন। অনেক বছর পর সেদিন এক সাথে কয়েকশ ভাত শালিক দেখতে পেয়ে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ঢাকার উদ্দেশ্যে যেতে বাসের বিরতিতে বগুড়ার ফুটভিলেজে দুপুরের খাবার জন্য নামেছি। নেমেই দেখি শত শত ভাত শালিক এক জায়গায় জড়ো হয়ে মানুষের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খাচ্ছে।

আমি এই দৃশ্য দেখে কোনোভাবেই লোভ সামলাতে পারলাম না। ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে তাদের সাথেই কুড়ি মিনিট ভালোবাসায় আবদ্ধ হলাম। দু’টো চানাচুর আর ভাজা চিড়ার প্যাকেট কিনে নিয়ে পাখিগুলোকে জড়ো করলাম আমার কাছে। একটু খাবারেই তারা খুব আপন হয়ে যায়। মনে হয় ফুটপাতের কোনো অসহায় ব্যক্তির অনাহারী পেটের তীব্র জ্বালায় ডাস্টবিনের ফেলে দেওয়া খাবার যেভাবে কুড়িয়ে খায় ঠিক কঠিন সাহসের সাথেও শতশত ভাত শালিক একটু খাবারের জন্য মানুষের কাছে ছুটে আসছে।

হলুদ রাঙ্গা ঠোটের পাখিগুলোকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এদিকে গাড়ির সুপারভাইজারের ডাক পড়েছে। যেতে হবে। এই পাখিগুলোকে ছেলে গাড়িতে উঠলাম, ওদের ভালোবাসায় আমিও যে সিক্ত হয়ে গেলাম...।

প্রিয় সাহিত্য/কামরুল