কল সেন্টারে এখন ৭০ জন কাজ করেন। ছবি: বিবিসি বাংলা
জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে বেশির ভাগই 'অপ্রয়োজনীয় ও ভুয়া কল'
আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮, ০১:২০
(প্রিয়.কম) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯ পরীক্ষামূলক ভাবে চালানোর পর গত ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে প্রশিক্ষিত এজেন্টরা জরুরি ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশ কিংবা এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
এই নম্বরের দায়িত্বে থাকা পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্যের বরাতে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ লাখের মতো কল এসেছে।
এর মধ্যে ২৪ লাখই অপ্রয়োজনীয় কল, ভুয়া কল বা অনেক ক্ষেত্রে কৌতূহলী হয়ে ফোন করেছেন অনেকে। ১৮ লাখ ফোন কলই ছিল যেখানে কলার কোনো কথাই বলেননি। শুধু পুলিশের কণ্ঠ শুনে ফোন কেটে দিয়েছেন।
আর ছয় লাখ ছিল আজে আজে কথাবার্তা।
তবে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত সুমি। বোন ও নিজের দুজনেরই পরীক্ষা চলার সময় বাড়ির সামনে রাত দেড়টা পর্যন্ত ভয়ানক জোরে হৈ হুল্লোড় আর গান বাজছিল।
সুরাইয়া জান্নাত সমস্যা সমাধানে জরুরী সেবা নম্বরের সহায়তা নিয়েছিলেন।
সুমি বলেন, 'বাসার ঠিক উল্টো পাশে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। রাত দেড়টা পর্যন্ত অনেক জোরে হিন্দি গান বাজছে। আমার বোনের পরীক্ষা চলে। আমারও তখন হাইকোর্টের পরীক্ষা চলে। তারপর আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর ওরা আমাকে মোহাম্মদপুর থানার সাথে কানেক্ট করে দেয়। সব মিলিয়ে দশ মিনিট লেগেছিল। ওরা এসে কথা বার্তা বলে গান বন্ধ করে দিয়ে যায়।'
অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকবাল বাহার বলেন, 'অনেকেই কল করছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে তখন কিছু বলছে না। আর ক্র্যাংক কলকে আমি বলছি অবাঞ্ছিত কল। এই কলটি করে তারা আসলে কোন সাহায্যের বিষয়ে বা প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে কথা বলে না। এমন কলার নাম্বারটি ব্যস্ত রাখে এবং তাতে প্রকৃত অর্থে যার সাহায্য দরকার সে বঞ্চিত হয়।'
বিশ্বব্যাপী নিয়ম হল সরাসরি জরুরী নম্বরের দায়িত্ব প্রাপ্তরাই সংশ্লিষ্টদের জানাবেন এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কাছে জরুরী সেবাদানকারিদের পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু ভিন্ন ধরনের গল্প শোনালেন ঢাকার বাংলামটর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক।
ওই মালিক বলেন, 'আমার রেস্টুরেন্টে চাঁদাবাজির ঘটনা সম্পর্কে নালিশ জানাতে ফোন করেছিলাম। আমাকে প্রথমে স্থানীয় থানার ফোন নম্বর ধরিয়ে দেয়া হল। সেখান থেকে দেয়া হল ডিউটি অভিসারের নম্বর। তিনি জানালেন এটা তার অঞ্চলের নয়। যখন বুঝলেন তারই অঞ্চলের তখন আর এক অফিসারের নম্বর দিলেন। তিনি বললেন ব্যস্ততার কথা। এতে অনেক সময় চলে গেলো যে আমি নিজেই অন্য উপায়ে, মানে কিছু টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে ফেললাম।'
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী এমন কলের মোটে ৩৭ হাজারের ক্ষেত্রে তারা সেবা দিয়েছেন। অর্থাৎ ১৩ লাখের মতো বিশাল সংখ্যক কলার কোন সাহায্য পাননি।
কিন্তু যে ১৩ লাখ কলার সাহায্য পাননি তার কারণ হিসেবে মোঃ ইকবাল বাহার বলছেন, 'সাত লাখ কল এসেছে নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে যারা মূলত মোবাইল অপারেটরদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন যা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে সবাই সেবা পেয়েছে। সবার কল আমরা ধরেছি।' কেউ সহায়তা পাননি সেটি মানতে রাজি নন তিনি।