কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

You have reached your daily news limit

Please log in to continue


বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান, নিহত ২

রাজধানীর বসিলায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় অন্তত দুই জঙ্গির    মৃত্যু হয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা থেকে অভিযান শুরু করা হয়। এসময় র‌্যাব ও জঙ্গিদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। প্রায় ১২ ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযান শেষ হয়েছে গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটায়। অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত দুইজন জঙ্গি নিহত হয়। পুলিশ মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জঙ্গিদের মরদেহের পাশাপাশি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারটি অবিস্ফোরিত আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস)। র‌্যাব প্রাথমিকভাবে নিহত জঙ্গিদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। সুজন (২৫) ও সুমন (২৩) নামের ওই দুই জঙ্গি নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্য। পরিচয় গোপন করে দেড় মাস আগে তারা টিনশেড বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। এ ঘটনায় তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তারা হলেন, সোহাগ, মৌসুমি ও ইউসুফ।র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল মেট্রো হাউজিংয়ের একটি বাড়িতে বেশ কিছু দিন ধরে জঙ্গিরা আস্তানা তৈরি করে বসবাস করছে। এ খবর পাওয়ার পর রোববার রাত তিনটার দিকে র‌্যাব সদস্যরা ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে। বাড়ির একপাশে মসজিদ আর অন্যপাশে কয়েকটি ছোট ছোট ঘর ছিল। রোববার রাতে মসজিদের মেঝেতে মশারি টানিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন ইমাম ইউসুফ। তার পাশের ঘরে ছিলেন কেয়ারটেকার সোহাগ, তার স্ত্রী মৌসুমী ও তাদের দুই সন্তান। র‌্যাব সদস্যরা প্রথমে সোহাগের ঘরের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে। তখন ভেতর থেকে সাড়া দেন তার স্ত্রী মৌসুমি। র‌্যাব সদস্যদের অনুরোধে মৌসুমী ঘরের দরজা খুলে দেন। সঙ্গে বের হয়ে আসেন কেয়ারটেকার সোহাগ। তখন তাদের পাশের আরেকটি ঘর থেকে জিকিরের শব্দ আসছিল। তখন র‌্যাব সোহাগ ও মৌসুমিকে জিজ্ঞেস করেন পাশের কক্ষে কারা জিকির করছেন। তাদেরকে বাইরে আসতে বলেন। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে পাশের ঘর থেকে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে জঙ্গিরা। মসজিদের ইমাম, সোহাগ ও মৌসুমিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে পাল্টা গুলি ছুঁড়ে র‌্যাব সদস্যরাও। ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর থেকেই আমরা নিয়মিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি। বসিলার এই বাড়িটিতে জঙ্গিরা শক্ত অবস্থানে ছিল। তারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। একটি বড় ধরনের আইইডি নিক্ষেপ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১শ’ ৫০ রাউন্ড গুলি চালাতে হয়েছে। ধারণা করছি একটি আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা নিহত হয়েছে। বিস্ফোরণে টিন শেডের ঘরটি উড়ে যায় এবং আগুন ধরে। পরে সকাল পৌনে ৯ টার দিকে ড্রোন উড়িয়ে ঘটনাস্থলের ভেতর ও বাইরের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হয়। ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র। যা দিয়ে অনেক দুর থেকে ঘটনাস্থলের কথাবার্তা শোনা যায়। নিরাপদ অবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পর  র‌্যাব সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা ভেতরে গিয়ে দেখেন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে জঙ্গিদের শরীরের বিভিন্ন অংশ। ঘটনাস্থলে আমরা তিনটি পায়ের অস্তিত্ব পেয়েছি। এ থেকে ধারণা করেছি সেখানে দুজন জঙ্গি ছিল। পরে সেখানে ডগস্কোয়াড, সিআইডির ক্রাইম সিন, র‌্যাবের ফরেনসিক টিম যায়। আলামত সংগ্রহ করে আসার পর নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় র‌্যাব সদস্যরা। সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বসিলা রোড থেকে র‌্যাব-২ সদরদপ্তর পার হয়ে বাম দিকের রাস্তা ধরে ভেতরে প্রবেশ করলেই মেট্রোহাউজিং। বসিলার এই এলাকা নিয়ে চলছে দুই থানার টানাটানি। মোহাম্মদপুর থানা বলছে এটি হাজারীবাগ থানার এলাকা আর হাজারীবাগ থানা বলছে এটি মোহাম্মদপুর থানার এলাকা। এরকম ভুল বুঝাবুঝিতে ওই এলাকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ কোন থানাই করে না। মেট্রো হাউজিংয়ের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় এখানকার অধিকাংশ বাড়িই নির্মানাধীন। এসব ভবনের কিছু ফ্ল্যাট/ঘর ভাড়া দেয়া হয়েছে। ঠিকমত রাস্তাঘাটও মেরামতও করা হয়নি। এই হাউজিংয়ের ভেতরে খালপাড় রোডের শেষ মাথায় অবস্থান আব্দুল ওয়াহাবের বাড়ির। এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ওয়াহাব।র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে সুমন ও সুজন নামের ওই দুই ব্যক্তি বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য বাড়িটিতে যান। কেয়ারটেকার সোহাগ তখন তাদেরকে ব্যাচেলার ভাড়া দেয়া হবে না বলে জানান। কিন্তু তারা জানান, ব্যাচেলার নয় বরং পরিবার নিয়েই তারা থাকবেন। একজন নিজেকে একটি এনজিও অফিসের নিরাপত্তাকর্মী ও আরেকজন ভ্যান চালক হিসাবে পরিচয় দেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের তথ্য দেয়ার কথা থাকলেও তারা সেটা দেয়নি। পরে ১ হাজার ৫শ’ টাকার বিনিময়ে সোহাগ তাদেরকে সেই বাসা ভাড়া দেন।  এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঘটনার রাতের বর্ণনা। ঘটনাস্থলের পাশেই দুই বছরের বাচ্চা ও স্বামীকে নিয়ে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন শান্তি বেগম। তিনি বলেন, রাতে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে চমকে ঘুম থেকে উঠি। আমার সন্তানও কান্না শুরু করে। তখন র‌্যাব সদস্যরা এসে জানান, আপনারা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এখানে গোলাগুলি হচ্ছে। তিনিও ঘরে তালা না দিয়েই সন্তানকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাড়ির বাইরে। নিতে ভুলে যান মোবাইল ফোনটিও। এরপর সারারাত উৎকণ্ঠা নিয়ে কাটান তিনি। ছিলেন বাইরে। জঙ্গি আস্তানার ঠিক সামনের বাড়িতে থাকেন হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, গতকাল আমি পরিবারের সঙ্গেই ঘুমিয়ে ছিলাম। রাতে হঠাৎ করে গুলির শব্দ শুনতে পাই। দরজার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখি বাইরে র‌্যাব সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। তারা আমাদেরকে বাইরে চলে আসার কথা বলেন। পরে আমরা সবাই বের হয়ে যাই। তিনি বলেন, ওয়াহাব মসজিদে আমি নামাজ পড়তাম। সপ্তাহ খানেক আগে মাগরিবের নামাজ পড়েছি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র সাতজন মানুষ। নামাজ শেষে সুরা পাঠ করা হতো। আবার সেই সুরার বাংলা তর্জমাও পড়া হতো। মসজিদের ঠিক পাশের বাড়িটি রহিমা বেগমের। তার বাড়িতে গরু, ছাগল, হাস, মুরগি পালন করা হয়। গত রোববার তার একটি হাস হারিয়ে যায়। বিভিন্ন বাড়িতে খোঁজ করতে থাকেন তিনি। গিয়েছিলেন ‘আস্তানা’টিতেও। তখন সোহাগের স্ত্রী মৌসুমী রান্না করছিলেন। জানতে চাইলে মৌসুমী জানান, ডাল আর ব্রয়লার মুরগি রান্না করছি। হুজুরদের খাওয়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, তখন দেখেছি দু’জন জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ছিলেন। আর বাড়িতে মোট লোক ছিলো ৬ জন।‘আস্তানা’টির উত্তর পশ্চিম কোণে আরেকটি টিনের ছাপড়া বাড়ি। সেখানে বাস করেন ঢাকা স্টিলের কর্মচারী জুনায়েদ আহমেদ ও শফিকুল ইসলাম। তারা থাকেন পরিবার নিয়ে। তারা জানান, স্থানটিতে আগে গরু ছাগল পালন করা হতো। কিন্তু মাদকসেবীদের অত্যাচারে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তারা আরো বলেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকে দু’জন শার্ট প্যান্ট পড়া লোকের আসা যাওয়া খেয়াল করেন। তারা একসঙ্গে ‘আস্তানায়’ ঢুকতো বের হতো। তবে এই দু’জনই সুজন-সুমন কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তারা।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন