দ্রব্যমূল্য যেন ছুটে চলে আকাশপানে। অকল্পনীয় উন্নয়ন, রাজনীতি টানাপোড়েন, আগামীর ভাবনা অথবা শঙ্কা—সবকিছু ছাপিয়ে বাজারদরই এখন বেশি আলোচ্য বিষয়। দ্রব্যমূল্য আজ এখানে তো কাল ওখানে। তবে নিচের দিকে নয়, কেবল ঊর্ধ্বমুখী। কোনো একটি অজুহাত পেলেই দ্রব্যমূল্য বাড়ে। রোজা-ঈদ-বাজেট থেকে শুরু করে হেন কোনো ইস্যু নেই যা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অজুহাত নয়। আবার কখনো কখনো অজুহাত তৈরি করা হয়। এটি যেন সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সাধারণ মানুষের জন্য এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে অসাধারণ বিড়ম্বনা।
ইচ্ছে করলেই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন বিক্রেতারা এবং হচ্ছেও তাই। পাইকারি থেকে খুচরা সবই চলে একই প্রবণতায়। এ ধারায় প্রচলিত শব্দমালা, বাজারে আগুন, দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া—এসব কথাবার্তা শুনতে শুনতে মানুষ যেন অনেকটাই ধাতস্থ হয়ে গেছে। জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক এবং আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস—এ বচনও যেন এখন পানসে।
অনেকের বিবেচনায়, দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষের শ্বাস যায় যায় দশা! এর মূলে আছে, বাজারদরের ‘ইচ্ছে ঘোড়া’। ধাপের পরিবর্তন। যেমন ডিজিটাল। ইচ্ছে করলেই বাড়িয়ে দেওয়া যায় নিত্যপণ্যের দাম। ঠেকাবার কেউ নেই। অবশ্য, কে কাকে ঠেকায়! ফলে প্রতিকার নেই। দৃশ্যমান কোনো প্রতিবাদও নেই। একসময় মানুষকে প্রতিবাদী করতে আসাদের রক্তমাখা শার্টই ছিল যথেষ্ট। সময়ের পরিক্রমায় সেই অবস্থা কেটে গেছে অনেক আগে।
মানুষ যেন সবকিছুতেই মানিয়ে চলার মানসিকতায় ‘উন্নীত’। অথবা আক্রান্ত। বিশেষ করে মাননীয়দের বেলায়। রাষ্ট্র এখানে নিয়ে গেছে। ভালো-মন্দ যাই হোক, দেশের মানুষ যেন সর্বংসহা। ধরণির মতো। মানুষ প্রতিনিয়ত সহনশীলতার পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। আমজনতার এ পরীক্ষা চলছে সব ক্ষেত্রে। তবে প্রতিদিন সহনশীলতার পরীক্ষা দিতে হয় নিত্যপণ্যের বাজারে। আর আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মানুষের সহনশীলতার চরম পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রায়ই নানান বয়ান ছাড়েন। এ ধারায় ২৬ জুন সংসদে জানান দিলেন, তিনি ৫৬ বছর ধরে রাজনীতি করেন! তার ব্যবসা ৪০-৪২ বছরের। তার হিসেবে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়ই আছে। ভাবখানা এই, উদ্বেগের কিছু নেই।