কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

You have reached your daily news limit

Please log in to continue


এই জতুগৃহ আমার দেশ না

সত্য কতটা জ্বলন্ত হয়, বঙ্গবাজারের আগুন তা দেখালো। সেই সত্যের আঁচ লাগছে আমাদের চামড়ায়। অসহায়ত্বের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-গভীরতা কত, তা বাংলাদেশ এবং তার রাজধানীর মানুষের চাইতে কে আর বেশি জানে? এ শহরের আগুন কখনও নেভে না! অপমৃত্যু কেউ ঠেকায় না! এটাই হলো বঙ্গবাজারের আগুনের জ্বলন্ত সত্য। বঙ্গবাজার মার্কেটের প্রতি আগুনের ভালোবাসাও কখনও কমে না। কয়েক বছর পরপরই পোড়ে এখানকার ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কপাল। আমাদের স্মৃতিও এক ব্ল্যাকবোর্ড। নতুন নতুন দুর্যোগের ডাস্টারে মুছে যায় আগেকার ট্র্যাজেডির দুঃখ। শুধু কিছু জীবন চলে যায়, কিছু পরিবার বসে যায়, অনেকের বুকে জমে অব্যক্ত যন্ত্রণা। আর তলে তলে ঢাকা হয়ে ওঠে এক বিপুল গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র।

নবারুণ ভট্টাচার্য তাঁর হারবার্ট উপন্যাসে লিখেছেন, কখন কোথায় বিষ্ফোরণ ঘটবে তা রাষ্ট্রের জানতে এখনো বাকি আছে। আমাদের দেশটাও বিস্ফোরণের মাইনফিল্ড হয়ে আছে। কখন কোথায় আগুন লাগবে, ভবন ধসবে, মানুষ মরবে, সম্পদ তছনছ হবে, তা রাষ্ট্র আগাম না-ই জানতে পারে; কিন্তু ঝুঁকি তো কমাতে পারে। বহুতল উন্নয়ন করছি, স্মার্ট বাংলাদেশ বানাচ্ছি। অথচ জীবনের নিরাপত্তা, জীবনের দাম, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিনকে দিন কমছে। এই স্মার্টনেস, এই উন্নয়ন দিয়ে রাজনৈতিক ঠিকাদাররা যা করার করুন, মানুষের কী লাভ?

রাষ্ট্র কি শুধুই একটা যন্ত্র, মানুষের দুঃখে কাঁপবেও না কাঁদবেও না!

গত বছরই সীতাকুণ্ডে রাসায়নিকের গুদাম বিস্ফোরণে মারা গেছেন ৪৩ জন। সিদ্দিক বাজার ট্র্যাজেডিতে ২৪ জনের মৃত্যুর ধাক্কা ফুরায়নি, সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণের ক্ষত মোছেনি। তার আগের বছর ঢাকা থেকে একটু দূরে হাশেম ফুডসের আগুনে ৫৫ জন মানুষ কয়লা হয়ে গেলেন। তার আগের বছর নিমতলী, তার আগে গুলশান, তার আগে রানা প্লাজা, তার আগে তাজরীন। মড়ার ওপর খাঁড়র ঘা বঙ্গবাজারের নারকীয় আগুন। ঈদের আগে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী, তাদের ওপর নির্ভরশীল আরও ১০–১৫ হাজার শ্রমিক, এই বাজারের সঙ্গে লেনদেন করা সারাদেশের আরও অনেক ছোটো ব্যবসায়ীর এত বড় সর্বনাশ কী মানা যায়!

আমরা সত্যিই অসহায়। কতটা অসহায় তা দেখিয়ে দিল আগুনের লাইভ সম্প্রচারের একটি দৃশ্য। এলাকাটায় কোনো পানির জলাধার বা পুকুর নেই। শুধু ভবন আর ভবন। ফায়ার সার্ভিসের ট্যাংক থেকে পাইপে পানি ছিটানো হচ্ছে। সেই পাইপের জায়গায় জায়গায় আবার ফুটা। তা দেখে এক শ্রমজীবী নারী নিজের শাড়ির আঁচল চেপে সেই ফুটা বন্ধ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন, যাতে প্রতিটি বিন্দু পানি আগুন নেভানোর কাজে লাগে। গুবড়ে পোকা দুর্যোগের সময় হাত-পা আকাশের দিকে তুলে ধরে আকাশের ভেঙে পড়া ঠেকাতে চায়। আহা রে। তবুও তো চেষ্টা করে। আমাদের এই নারী মরিয়া হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ফুটা পাইপ নিজের আঁচল দিয়ে বুজে দিতে গেছেন। তাঁর আন্তরিকতার ছিঁটেফোঁটাও যদি আমাদের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যেত।

এটাই মানুষ। যার যা কিছু আছে তা নিয়েই যে জাতি মুক্তিযুদ্ধ লড়তে পারে, তারা আজও যার যা কিছু আছে তা নিয়ে মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে ছুটে যায়। রানা প্লাজায় উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান বেশ কিছু উদ্ধারকর্মী। কিন্তু এই চিত্র কি আমাদের বহুতল উন্নয়নের গুমর ফাঁস করে দেয় না!

ওই নিঃস্ব নারীর মতোই কি আমাদের রাষ্ট্রের সক্ষমতা? চারপাশে বিশাল বিশাল অট্টালিকা, পুলিশ ভবন, নগর ভবন। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরটাও ঠিক বঙ্গবাজারের সামনেই। একটু দূরেই বঙ্গভবন। তার মাঝখানের এই বিশাল ব্যবসাকেন্দ্র কেন বারবার আগুনে পুড়বে? এটাকে সুরক্ষিত করা হয় না কেন? সুরক্ষা মানে ছোটো ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে বড় শপিং মল বানিয়ে বড় ব্যবসায়ীদের মওকা করে দেওয়া নয়। সুরক্ষা মানে এই ব্যবসায়ীদের রেখেই স্থানটাকে টেকসই ও নিরাপদ করা। সুরক্ষা মানে দুর্বল প্রস্তুতি নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে না দেওয়া। সীতাকুণ্ডের আগুন নেভাতে মারা গেছেন ৯ জন বীর ফায়ার ব্রিগেডার। আমি এই সুযোগে আমাদের দমকল কর্মীদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাতে চাই। আর যে যা–ই করুন, তাঁরা কখনও সাহস হারান না, গাফলতি করেন না।  

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন