কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

You have reached your daily news limit

Please log in to continue


ঔপনিবেশিক এবং স্বাধীন বাঙালি কেরানি

ইংরেজদেরও আগে পর্তুগিজদের হাত ধরে বঙ্গ-ভারত উপমহাদেশে কেরানি (পষবৎশ) বা করণিক নামের কলম-পেশা আধা-শ্রমিক, আধা-কর্মচারী প্রজাতিটির উদ্ভব। পর্তুগিজ বংবৎবাবহঃব শব্দের সঙ্গে এর কার্যকরণ সম্পর্ক। দখল করা বন্দর গোয়া, দমন, দিউ, প-িচেরি, কালিকট ছিল ইউরোপীয় বণিকদের ঋরষব বা নথিপত্র তৈরির আদিভূমি। তখন তাদের ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য বিজয় বা উপনিবেশ স্থাপন ছিল কল্পনার অতীত। পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে উপনিবেশ স্থাপন এবং কলকাতাকে রাজধানী করে প্রশাসনিক কেন্দ্রভূমি করে নেয় ইংরেজরা। তখন থেকেই বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো দ্রুত তৈরি হতে থাকে। তাই প্রধান কাজ হয়ে ওঠে ফাইল বা নথিপত্র তৈরি এবং সংরক্ষণ করা। বিলেতে তখন কাজের যেমনি আকাল তেমনি মাস-মায়নাও কম। কাজ এবং মায়না খানিকটা অধিক ছিল ঔপনিবেশিক রাজধানী কলকাতায়। সেই লোভে বিলেতের অল্প পাস দেওয়া তরুণরা দলে দলে কলকাতার উদ্দেশ্যে জাহাজে চেপে বসে। অল্প মেধার (বিলেতের তুলনায়) ইংরেজ দরিদ্র ঘরের তরুণদের কাছে তখন কলকাতার মাস-মায়না ৩০ থেকে ৩৫ রুপি কম কীসে? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ইংরেজ শাসকদের অধিক প্রয়োজন ছিল কম মায়নার কেরানি। তাই ইংরেজরা কেরানি বা ফাইল তৈরির ইংরেজি (কিছুটা ফার্সি) জানা উপজীবী শ্রেণি তৈরির জন্য বাংলার মূল শহর কলকাতা তো বটেই, হিন্দু জমিদারদের সহায়তায় জেলা শহরেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রতিষ্ঠা করে।

দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যের পতন এবং পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজের পতন, শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহের বার্মায় নির্বাসন, লখনৌর নবাবকে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে তুলে এনে বন্দি করার স্মৃতিবাহী মুসলিম সমাজ সংগত কারণেই জাতি হিসেবে ইংরেজ এবং ভাষা হিসেবে ইংরেজির বিপক্ষে। তাই ইংরেজি শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেল মুসলিম সমাজ। সুযোগটা লুফে নিল কায়েত-বামুনের মতো উচ্চবর্গের হিন্দুরা। নীচুবর্ণের হিন্দুরা প্রায় শতভাগই ছিল ক্ষুধার্ত-দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত কৃষক। এমনিতেই শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহও ছিল না। ইংরেজি ভাষা উদরে প্রবেশ করানোর চেয়ে তাদের জীবন-বাস্তবতা ছিল ক্ষুধার্ত পেটের আগুন নেভানো ভাত। অন্যদিকে অলিখিত নিষেধ ছিল শিক্ষাঙ্গনে পা-ফেলা। তাই উপনিবেশ যুগে ইংরেজি জানা সিংহভাগ কেরানিই ছিল উচ্চবর্গের হিন্দু। নীচুবর্গের হিন্দুদের দেখা মিলত ইংরেজদের চাকর মহলে। অথবা ধর্মান্তরিত আদিবাসীদের।

নথিপত্র বা ফাইল এবং কেরানি, এরা একে অন্যের প্রতিকল্প বা ছায়াশরীর। বঙ্গ-ভারতে প্লেগ, কলেরা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর মহামারী রূপে দেখা দিলে বিলেত থেকে কেরানি রপ্তানি অনেকটা কমে আসে। এর ফলে কেরানি উৎপাদনের জন্য ইংরেজ শাসকরা বর্তমান গাঙ্গেয় অর্থাৎ গঙ্গা তীরবর্তী বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গের অঞ্চল তো বটেই, পূর্ববঙ্গের ঢাকা অঞ্চল, বিশেষ করে বিক্রমপুর থেকে সিলেট, চট্টগ্রামের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের প্রতি দৃষ্টি দেয়। জমিদার (নব্য) শ্রেণি অতি উৎসাহে ‘স্যার’ পদবি থেকে শুরু করে ‘বিদ্যারতœ’ ‘বিদ্যাবিভূষণ’ ‘জ্ঞানরতœ’, ‘বিদ্যোৎসাহী’, ‘বিদ্যা বিনোদ’, ইত্যাদি পদবিতে অলংকৃত হতেন। কোনো নিম্নবর্গের হিন্দুর ভাগ্যে এমন পদবিপ্রাপ্তি ছিল কল্পনার অতীত। এর ফলে ‘ইংলিশ হাই স্কুল’ থেকে উৎপাদিত বামুন, কায়েত, বৈদ্য বংশের ছেলেরা ‘দু’পাতা ইংরেজি শিখে’ কলকাতার কেরানি হয়ে গেল। অধরাই রয়ে গেল ‘কেরানি বাবু’ পদবি লাভ। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে তৎকালের ওই কেরানিরা বর্তমানের কেরানিদের চেয়ে অতি উত্তম ইংরেজি জানতেন। আজও জনশ্রুতি হয়ে আছে তাদের ‘ইংরেজি মুসাবিদা’। আশ্চর্য এটাই যে বাংলার শহর-গ্রামে আজও ব্যক্তির পেশা বা চাকরির নামে রয়েছে অসংখ্য বাড়ি। ডেপুটি বাড়ি, দারোগা বাড়ি, কবিরাজ বাড়ি, ডাক্তার বাড়ি, প-িত বাড়ি, মাস্টার বাড়ি ইত্যাদি বাড়ি। কিন্তু সারা তল্লাট খুঁজেও মিলবে না একটি ‘কেরানি বাড়ি।’ কেন নেই? এটাই হাজার কথার এককথা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন