কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

You have reached your daily news limit

Please log in to continue


পকেট কাটার সংস্কৃতি

ম্যারাথন পকেটমার হওয়ার সংবাদটি দেশের প্রায় সবগুলো সংবাদপত্রই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। ফলোআপ সংবাদে কয়েকটিতে আবার পকেটমার সচিত্র এসেছেন। তার কাছাকাছি সংস্কৃতিমন্ত্রী আছেন, পুলিশও আছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবাই অনুৎপাদনশীল কাজে হাত এবং আঙুল নাড়ছেন। কিন্তু পকেটমার জানেন (নাকি জানেন না?) ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট সোহাগ করে তাকে বলা হয় ‘ফিঙ্গারস্মিথ’। আর হাতের আঙুল অবশ্যই উৎপাদনশীল।

গোল্ডস্মিথস্বর্ণকার, সিলভারস্মিথরৌপ্যকার, কপারস্মিথতাম্রকার, ব্ল্যাকস্মিথকামার। ওয়াগনস্মিথ, অ্যারোস্মিথ, প্ল্যাটিনামস্মিথও আছে। আমার জানাই ছিল না যে এ ধরনের স্মিথের সংখ্যা জবরদস্ত ইংরেজি অভিধানে সত্তর ছাড়িয়ে। গুরুত্বপূর্ণ ‘ফিঙ্গারস্মিথ’ মানে আঙুলের কারবারি পিকপকেট বা পকেটমার। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে শব্দটি পকেটমার বোঝাতে জেমস হার্ডি ভক্স (১৭৮৩-১৮৪১)-এর স্মৃতিকথায় স্থান পেয়েছে। তার স্মৃতিকথা এবং ‘এ ভোকাবুলারি অব দ্য ফ্লাশ ল্যাঙ্গুয়েজ’ ১৮১৯ সালে প্রকাশিত হয়।

ব্যক্তিজীবনে লেখক জেমস হার্ডি ভক্স একজন পকেটমার, একজন চোর এবং জালনোট চালানকারী। ১৮০০ সালের মধ্যেই বিশেষ করে পেশাদার পকেটমার হিসেবে তিনি নিজের পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তিনি অনেকবার গ্রেপ্তার হন এবং সংশোধনের অযোগ্য অপরাধী হিসেবে অন্য অপরাধীদের সঙ্গে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় চালান দেওয়া হয়। ব্রিটেনের ‘আন্দামান’ই আজকের অস্ট্রেলিয়া। তিনি নিজে লিখেছেন এবং তাকে নিয়েও গ্রন্থ রচিত হয়েছে, সিনেমা-নাটক হয়েছে। ফিঙ্গারস্মিথের মতো সৃজনশীল শব্দ যিনি ভাষাকে উপহার দিতে পারেন তাকে নিয়ে তো আলোচনা হতেই পারে।

আমাদের দেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী তার দলের স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সঙ্গে নিয়ে খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় কপিলমুনি বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে সেখানকার সংসদ সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও ছিলেন। পুষ্পস্তবক ও পুষ্পমাল্য অর্পণের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পনেরো মিনিটের বেশি সময় লাগেনি। তারপর অভ্যাগতদের কজন পকেটে হাত দিয়ে হায় হায় করে উঠে কপালে হাত দিতে বাধ্য হলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি যুগল কিশোর দে’র পকেট থেকে গায়েব ১৮০০ টাকা, সাংবাদিক তপন পালের ৫০০০ টাকা নিরুদ্দেশ আর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেই ৯০০০ টাকা। এ ছাড়া ভিকটিম আরও তিনজন। পরিকল্পনামন্ত্রীর আইফোন হাওয়া হয়ে গেলেও ফিঙ্গারস্মিথ সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে সুবিধা করতে পারেননি। কপিলমুনিতেও ফোন খোয়া যায় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সমীরণ সাধু এবং প্রেস ক্লাবের মহাসচিব আবদুর রাজ্জাক রাজুর।

পকেটমার পালালে বুদ্ধি বাড়ারই কথা। বৃদ্ধিপ্রাপ্তরা ফটো সাংবাদিকদের তোলা ছবি বিশ্লেষণ শুরু করলেন এবং তারা একাধিক ছবিতে দেখলেন মন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা খর্বাকৃতি ও মাঝবয়সী কভিড-১৯ সচেতন (যদিও মাস্ক তার থুঁতনিতে ছিল, নেতাদের কারও কারও ছিলই না) একজন পুরুষ যথেষ্ট কৌশলে আওয়ামী লীগ প্রধানের পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এ কী দুঃসাহস! যদিও কোনো কোনো সংবাদপত্রে কায়দাটাকে অভিনব বলা হয়েছে, বাস্তবে তাতে নতুনত্ব কমই ছিল, নতুন ছিল ম্যারাথন পকেট মারার কারবারটি।

আশ্বস্ত করার মতো বিষয় হচ্ছে দুদিন পর পকেটমার ধরা পড়েছেন। ২৮ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আবদুর রউফ ডিগ্রি কলেজের মাঠে বিএনপির সম্মেলনে আঙুল চালাতে দুই মাইক্রোবাসে সওয়ার হয়ে ১৬ জন পকেটমার আসেন। তাদের প্রায় সবারই আঙুল চালনা সফল হলেও আন্তঃজেলা পকেটমার দলের একজন সদস্য ধরা পড়ে যান। অন্য সতর্ক সদস্যরা মাইক্রোবাসে চেপে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শহরে জজ কোর্টের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে সবাইকে ধরতে সমর্থ হয়। তাদের কাছে থেকে ১০টি মোবাইল ফোন এবং ৬১ হাজার টাকা জব্দ হয়। ১৬ জনের কাছ থেকে ৬১ হাজার! মানি লন্ডাররা শুনলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়বেন।

এ বছর জুন মাসেই বগুড়া চেলোপাড়ার সান্দারপট্টির (পকেটমার পল্লী হিসেবে নাকি পরিচিত) ২৯ জন ‘কুখ্যাত পকেটমার’-এর ছবি বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ি প্রকাশ করেছে। এখানে নিবাসী পকেটমার প্রায় ২০০, অন্যরা সচিত্র প্রকাশিত হওয়ার মতো ‘কুখ্যাত’ হয়ে ওঠেননি। এখানকার আবাসনের মান যাই হোক প্রতিবেশী জেলায় কারও কারও বহুতল অট্টালিকাও রয়েছে। এত দিন ধরে যে পেশায় লেগে আছেন, কমবেশি দক্ষতা অর্জন করেছেন, তা ছেড়ে যেতে কি মন চায়?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন