শুধু পর্যবেক্ষণ নয়, সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন
কভিড-পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি যখন জেগে উঠতে শুরু করছে, তখনই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের উৎস হিসেবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিশেষ গুরুত্ব, বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে রাশিয়ার অবস্থান এবং যুদ্ধে পরোক্ষভাবে পশ্চিমাদের জড়িয়ে পড়ার কারণে এই যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব কমবেশি সব দেশে পড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মূলত যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বরাজনীতিতে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তার অভিঘাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
এই যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনীতি তথা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও মূল্য পরিশোধ পদ্ধতির (পেমেন্ট সিস্টেম) ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাগুলো বিবেচনা করতে হবে। আমাদের অর্থনীতির বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ ও বহির্দেশীয় সমস্যার আন্তঃসম্পর্ক বিবেচনায় নিতে হবে। তবে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যবেক্ষণের নামে শান্ত পরিস্থিতির অপেক্ষায় না থেকে যা করার আমাদেরই করতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের অর্থনীতিতে খাতভিত্তিক সূচকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সামষ্টিক সূচকের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল আট থেকে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমান। সেটা এখন ছয় মাসে নেমে এসেছে এবং এটা ঘটেছে অতিদ্রুত, বেশি সময় লাগেনি। লক্ষ করার মতো বিষয় যে এপ্রিল-মে মাসেই এই অবনমনটা বেশি ঘটেছে। এখন রিজার্ভ রক্ষায় মনোযোগ বাড়াতে হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতির বেলায়ও দেখা গেছে, পর্যবেক্ষণের নামে অপেক্ষা বা হাত গুটিয়ে বসে থাকে কর্তৃপক্ষ। সরকার অবশ্য বলছে যে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কম, কিন্তু বাস্তবে আমরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির লক্ষণগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। খাদ্যপণ্য, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য, যাতায়াত, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব কিছুরই মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। সব ধরনের পণ্য ও সেবার দামই ঊর্ধ্বমুখী এবং সব শ্রেণির মানুষই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই মূল্যস্ফীতি দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছে। এদের আয় বাড়েনি মোটেও; কিন্তু তাদের ওপর কয়েক গুণ ব্যয়ের চাপ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, মূল্যস্ফীতির কারণ শুধু অভ্যন্তরীণ ছিল না, এর সঙ্গে বাইরের কারণগুলোও ভূমিকা রাখছে। বিশ্বে তেলের দাম বেড়েছে, জাহাজভাড়া বেড়েছে, জাহাজ চলাচলেও সময় বেশি লাগছে। তাই অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুটিকেই সমানভাবে দেখতে হবে। কিন্তু এসব সমস্যা মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ অবিলম্বে প্রয়োজন।