কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

You have reached your daily news limit

Please log in to continue


২০২১: ২১টি ভাবনা

১. ২০২১ সালের প্রথম দিনে সবাই যখন আনন্দ-ফুর্তি করছে কিংবা পুরোনো বছরটিকে ছেড়ে নতুন সময়ের দিকে হাত বাড়িয়েছে, আমি তখন লিখতে বসেছি। লেখার সময় আমি সাধারণত গান শুনি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। যদি বলি নিজেকে সবচেয়ে ভালো উপহারটা কী, তাহলে সেটা বলতেই হবে- লিখতে বসা। পুরোটাই নিজের জগতে ঢুকে যাওয়া। সেই জগতে আর কারো থাকার সুযোগ নেই। তবে মাঝে মাঝে জগজিৎ আর চিত্রাকে নিয়ে আসি বৈকি! এই যেমন এখন! তাদের গানের কথা আমি বুঝি না। কিন্তু তাদের সুর আমাকে কোথায় যে নিয়ে যায়, আমি নিজেও বুঝতে পারি না। স্রষ্টার কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা যে, তাদের আমার জীবনের সময়ে পেয়েছিলাম! অনেক বড় একটা প্রাপ্তি! ২. জীবন থেকে আরেকটা বছর খসে পড়ল। যেটুকু আয়ু নিয়ে এসেছিলাম, সেখান থেকে একটা বছর বিয়োগ হলো। জীবনে সময় দিয়ে সব কিনতে হয়। যতই সময় ব্যয় করছি, জীবনে অভিজ্ঞতা জমা হচ্ছে। একদিন সেই সবকিছু বেলুনের মতো শূন্যে উড়িয়ে দিয়ে এই গ্রহ ছেড়ে চলে যেতে হবে। সেই হিসাবে গত বছরটা নিয়ে আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। এই গ্রহের যা বয়স, তাতে নিশ্চয়ই এমন কঠিন সময় আরো এসেছে। আমরা তার সব জানি না। মানুষের জ্ঞানের সীমানা খুবই সামান্য। এতই সামান্য যে, এখনো মঙ্গলগ্রহে কী আছে, সেটাই জানা শেষ হয়নি। পুরো সৌরমণ্ডল, ইউনিভার্স তো অনেক দূর। তার সেই অল্প জানা নিয়েই আমরা কত রাজা-উজির মেরে যাচ্ছি। গত বছর যা শিখিয়ে দিয়ে গেল তা হলো, প্রকৃতি কতটা নিষ্ঠুর হয়ে যেতে পারে, তা একটু দেখিয়ে দিয়ে গেল যেন! ৩. আমার ধারণা, প্রকৃতি আরো ভয়ংকর রূপ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে প্রকৃতি আরো রুদ্র হতে শুরু করবে। প্রকৃতি সবচেয়ে বড় থাবাটা দেবে যখন সে তার বরফগুলো গলিয়ে দিতে শুরু করবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা যে বাড়ছে, সেটা তো সত্যি। এটা কারো মনগড়া বিষয় নয়। মানুষ যেভাবে প্রকৃতির ওপর নির্যাতন করছে, তাতে এটাই অনিবার্য। ধরিত্রীর নেয়ার সীমা আছে। সেই সীমা আমরা পার করে যাচ্ছি। ফলে সে তার বরফ গলিয়ে দেবে। তখন পুরো পৃথিবীর অনেক জনপদ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আমরা এখন যেখানে আছি, সেখান থেকে অনেক জনপদ ছিটকে হারিয়ে যাবে। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় আমরা ঠেকাতে পারব বলে মনে হয় না। আমরা কেবল ঠেকা নিয়ে ওটাকে বিলম্বিত করাচ্ছি। পরিবেশ একটা কঠিন বিষয়- এটা এই গ্রহের অনেক দেশই বুঝতে পারছে না। আমাদের মাকে আমরা যেভাবে গ্র্যান্টেড ভেবে নিই, গ্রহ-মাতাকেও তাই ধরে নিয়েছি। ৪. এই পৃথিবীর যত বিপত্তি তার ভেতর আমি যেটাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, সেটা হলো যুদ্ধ। যুদ্ধে নিজে মারা যাব, সেই জন্য ভয় নয়। ভয় পাই শিশুদের জন্য। যুদ্ধের সময় পরিবারগুলো যেভাবে ছিটকে পড়ে, আর তখন শিশুদের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়। আমি নিজের চোখে যুদ্ধ দেখিনি। তবে ছবি, সিনেমা এবং ডকুমেন্টারি দেখেই আমি কাঁদতে কাঁদতে শেষ। আমি এই পৃথিবীর অনেক কিছু সহ্য করতে পারি, কিন্তু বাচ্চাদের কান্না সহ্য করতে পারি না। যুদ্ধের সময় বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য মা-বাবারা যেভাবে ছুটে বেড়ান, সৈন্যরা বাচ্চাদের যেভাবে মেরে ফেলে কিংবা একটি শিশু পরিবার থেকে ছিটকে পড়ল- সে কাঁদছে তার মায়ের কাছে যাবে। এই দৃশ্য আমাকে যেন কোনো দিন দেখতে না হয়। তার আগেই আমি এই গ্রহ ছাড়তে চাই। বাংলাদেশকে ৭১-এর পর আর যুদ্ধ দেখতে হয়নি। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সেই তুলনায় গত বছরটা অনেক ভালো গিয়েছে! ৫. আমার কয়েকজন ছোট ভাই হিমালয় দেখতে গেছে। বেজক্যাম্প ঘুরে এসে সে কী তাদের আনন্দ! তারা যখন আমাকে সেই গল্পগুলো বলতে থাকে, আমি হিমালয়ে আটকে যাই না, আমি তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। জীবন কতটা সুন্দর! তাদের একটা গল্প এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। ওরা যখন পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠছে, নিচ থেকে দেখতে পেল আরেকটু গেলেই পাহাড়ের চূড়া। মহা-উত্তেজিত। এই তো পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলাম। মাইল খানেক গিয়ে এই পাহাড়ের মাথায় উঠে দেখতে পেল, ওই যেটাকে ভেবেছিল সবচেয়ে উঁচু পাহাড়, সেটা এখনো অনেক দূর। এবং মাঝখানে একটা বিশাল উতরাই। ওই পাহাড়ের চূড়ায় যেতে গেলে এখন তাদের আবার নিচে নামতে হবে। তারপর আবার শুরু করতে হবে। ওদের কাছ থেকে শিখেছিলাম, জীবনটাও তাই! ৬. জীবনের এই চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলতি পথে অনেক পথিকের সঙ্গে দেখা হয়। কেউ কেউ সাথী হয়, কেউ আবার নিজের মতো চলে যায়। অনেক সময় সাথীরাও হাত ছেড়ে দেয়। তারাও তাদের হিসাবমতো ভিন্নপথে পাহাড়ের চূড়ায় যেতে চায়। কেউ কেউ বেজক্যাম্প পর্যন্তই থাকে, আর যেতেও চায় না। ২০২০ সালেও কত মানুষ কত সাথীহারা হয়ে গেছে। কত মানুষ কত দিকে ছিটকে পড়েছে। কাছের মানুষ হারিয়ে গেছে, দূরে চলে গেছে- অনেক দূর! হিমালয় অতিক্রম করা যায়, কিন্তু সেই দূরত্ব অতিক্রম করা যায় না। ক্ষুদ্রতম সময়ের এই জীবনে দীর্ঘতম দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়! ২০২১ সালে যেন মানুষ আরো কাছে আসে, সেটাই প্রত্যাশা! ৭. গত বছর যা ঘটল, তার ধাক্কাটা অনেক জটিল। মানুষকে মৌলিক কিছু জায়গায় এটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বিশেষ করে জীবন এবং জীবিকা। মানুষ এই যে ছুটে বেড়ায়, তার একটি বড় অংশ হলো জীবিকা। জীবিকাই মূলত মানুষকে গ্রহের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে যায়। এই যে মানুষ পঙ্গপালের মতো বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে চাইছে, তার বড় একটি কারণ হলো জীবিকা। অল্প কিছু মানুষ ভিন্ন কারণে বাইরে পা বাড়ায়, কিংবা অন্য দেশে গিয়ে থাকতে শুরু করে। গত বছরটা এই জীবিকার ওপর কিছু ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন এনে দিয়েছে, যা আর আগের জায়গায় ফিরবে না। এই গ্রহের মানুষ সেটাকেই মেনে নিয়ে দিন পার করবে। ৮. ২০২১ সাল থেকে কর্মের নতুন ধরনের সঙ্গে মানুষ নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করবে। যেই পরিবর্তন হতে লাগত আরো ১০ বছর, সেটা হয়ে গেল ১ বছরেই। পুরো পৃথিবী আরো বেশি মেশিননির্ভর হয়ে উঠবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিননির্ভরতা আরো বেড়ে গেল। উন্নত দেশগুলো আগে যা মানুষ দিয়ে করাত, এখন সে মেশিন দিয়ে করতে শুরু করেছে। এবং এই প্রক্রিয়া আরো দ্রুতগতিতে চলতে থাকবে। মানুষের কাজের চাহিদা পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ৯. গত ৫০ বছরে এই পৃথিবীতে সবকিছুরই প্রবৃদ্ধি ছিল, তার মূল কারণ হলো বাজার বড় হয়েছিল। মানুষ বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে তাদের চাহিদা বেড়েছে। সেটা বিশ্বজুড়েই। কোক আরো বেশি পানীয় বিক্রি করেছে, বাটা আরো বেশি জুতা, অন্যরা আরো বেশি খাবার, আরো বেশি পোশাক, আরো বেশি ফ্যাশন, আরো বেশি মিউজিক, আরো বেশি শ্রোতা, আরো বেশি ব্লগার! সবকিছু মিলিয়েই ঊর্ধ্বগতি। বাজার বড় হলে সবার উপর্জন বেশি। মানুষ মূলত আরো বেশি পণ্যে পরিণত হয়েছে। যদি ১ কোটি মানুষ জন্ম দিয়ে আরো বেশি পণ্য বিক্রি করা যায়, ক্ষতি কী! তা হলে মানুষ জন্ম দাও! এটাই ছিল মূল দর্শন। ১০. অনেক শতক পরে এসে এই প্রথম মানুষ আবারো ভাবতে শুরু করেছে, এনাফ ইস এনাফ! আর মানুষ নয়। এবার এর ভেতর বাঁচার চেষ্টা করো। মানুষ হলো এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। গরু যা পারে না, মানুষ তা পারে! সেই বুদ্ধিমান প্রাণীগুলো এবার ভাবতে শুরু করেছে, আর মানুষ বাড়ানো যাবে না। মানুষ নিজের অস্তিত্বের জন্য খুবই হিংস্র কাজ করতে পারে, যা হয়তো সিংহ কল্পনাও করবে না। মানুষ আসলেই খুব হিংস্রতম প্রাণী। আবার এই মানুষই আবার খুবই সংবেদনশীল! মানুষের ভেতর এই দুই এক্সস্ট্রিম আছে। সেই মানুষরা এবারে তাদের নিংন্ত্রণ আনার পথে নামছে। তাই হয়তো আরো বেশি রোবটের প্রয়োজন হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন