কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাজেট বিশ্লেষণ: তরুণদের বাজেট ভাবনা

প্রথম আলো প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২০, ০৯:২২

‘নিউ নরমালের’ সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কঠিন হবে ফারজানা তাসনিম, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় করোনা পরিস্থিতিতে টালমাটাল অর্থনীতি সামাল দিতে ঠিক কোন ধরনের বাজেট কার্যকর হবে, সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেই কারও। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এই বাজেটে করোনাকালে স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটবে, এমনটাই আশা করেছিলাম। তবে এই মুহূর্তে মানুষকে সুরক্ষা দিতে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর জন্য যে বাজেটের প্রয়োজন ছিল, সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।মার্চের মাঝামাঝি থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর সাধারণ শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন কার্যক্রম শুরু করলেও থমকে আছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাদান। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রযুক্তি বাদ দিলে শুধু শিক্ষার জন্য রাখা হয়েছে কেবল ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এদিকে, প্রান্তিক এলাকায় থাকা শিক্ষার্থীদের বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারিনি।  এই বাজেটে জরুরি অবস্থায় শিক্ষার চাহিদা পূরণ করতে শিক্ষকদের কীভাবে প্রস্তুত করা হবে কিংবা করোনা শেষের ‘নিউ নরমালের’ সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যাবে, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

বাজেট দেখে মনে হয়েছে, করোনা যেমন হঠাৎ করে এসেছে, তেমনি হঠাৎ করেই চলে যাবে, এমনটা ধরে নিয়ে আগানো হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি ঠিক হতে আরও প্রায় দুই-তিন বছরও সময় লাগতে পারে। তত দিন নিশ্চয়ই শিক্ষাব্যবস্থা থেমে থাকবে না। সেশনজট নামক বিভীষিকা এড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই গ্যাপ কীভাবে পূরণ করা যায়, তা চিন্তার বিষয়। প্রস্তাবিত বাজেটের একটি ইতিবাচক দিক দেশি পণ্যের দাম কমানো। অন্যদিকে বাড়ছে বিদেশি পণ্যের দাম। আমদানি করা পেঁয়াজ, লবণ, মধু, দুধ, দুগ্ধজাতীয় পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তবে মুঠোফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়বে।

করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক চাষি, ভূমিহীন কৃষক বা স্বল্প মূলধনের কৃষি উদ্যোক্তারা। দেশের এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা হবে না বলা হলেও বাজেটে এই কৃষকদের জন্য আলাদা কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতের প্রধান উপকরণসমূহ বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক আমদানিতে শূন্য শুল্ক হার অব্যাহত রাখা হয়েছে। ধান রোপণ, কাটা ও মাড়াইয়ের যন্ত্র কিনতে ঋণসহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে লাভবান হবে মাঝারি বা তার উচ্চপর্যায়ের চাষিরা। প্রান্তিক চাষিরা ঋণ সুবিধার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হবেন, তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে না পারলে প্রকৃত অভাবগ্রস্তরা সুবিধাবঞ্চিত হবেন।

প্রস্তাবিত গতানুগতিক বাজেটে রয়েছে আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি। তবে দুর্নীতি বন্ধ করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মেলবন্ধনে সুপরিকল্পিতভাবে অর্থ বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করা সম্ভব বলেই আমার বিশ্বাস। কর্মসংস্থান বাড়াতে উদ্যোগ দরকার  রাজীব কুমার রায়, এমবিএ, এসিএমএ, ফাইন্যান্স ম্যানেজার, বিআইএফপিসিএল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট করহার এবারের বাজেটে আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। আমি মনে করি এটি খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। অনেক দিন ধরেই করপোরেট কর কমানোর দাবি করে আসছিলেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। এবার সেখানে কিছুটা হলেও সরকার নজর দিয়েছে।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা খতিয়ে দেখছেন। আমি মনে করি, করপোরেট কর কমানোর এ সিদ্ধান্ত বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে এখানে একটি কথা বলা দরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আমাদের দেশের করপোরেট করহার আরও কমিয়ে আনা দরকার।  আবার অন্যদিক তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহার কমানোর ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে কর ব্যবধান কমে গেছে। এতে করে কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগ্রহ কমে যেতে পারে। তাই মনে করি, তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান কমপক্ষে ১০ শতাংশ রাখা উচিত। বাজেট পাস হওয়ার আগে তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারও সমানভাবে কমানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। 

আমরা দেখছি, করোনার কারণে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকসহ বেসরকারি খাতে কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ প্রবণতা বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। এমনিতেই আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। সেটি আরও বেড়ে গেলে অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই বিদ্যমান কর্মসংস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের দিক থেকে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকা উচিত।   আমরা সব সময় দেখি, বিদ্যমান করদাতাদের ওপর করের চাপ বাড়িয়ে সরকার রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। অথচ নতুন করদাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি উদ্যোগ দেখা যায় না। বিদ্যমান করদাতাদের ওপর করের চাপ বাড়ানো হলে তাতে কর ফাঁকির প্রবণতাও বাড়বে। আগামী অর্থবছর সরকার নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে বিশেষ উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছি। এখনকার দুশ্চিন্তা লাঘবের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই মনীষা কুণ্ডু, ব্যাংকার করোনা ও কর্মসংস্থান—এ দুটি নিয়েই এখন দেশের অধিকাংশ মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত।

একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা। তরুণ চাকরিজীবী ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাজেটে নীতি সহায়তার মাধ্যমে মানুষের এ দুশ্চিন্তা লাঘবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো ঘোষণা দেখতে পাইনি। করোনার এ সময়ে দরকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। চিকিৎসা পাওয়া এ দেশে যেকোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার। নাগরিকের সেই অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সে জন্য বেসরকারি সব হাসপাতালকে এ চিকিৎসা কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে বিনা খরচে ওই সব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারে, তার জন্য বাজেটে সরকার আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু তার প্রতিফলন দেখতে পাইনি। 

এ ছাড়া চিকিৎসা গবেষণায় সরকারের অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। হাসপাতালগুলোতে অতিদ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সুবিধা বাড়াতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।  এবারের বাজেটে সরকার ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়েছে। কমিয়েছে করহারও। এতে আমার মতো সাধারণ করদাতারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। আবার করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলেও নিত্যদিনের জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় অনেক সেবা ও পণ্যের ওপর শুল্ক, ভ্যাট, সেবা মাশুল বাড়ানো হয়েছে। তাতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর যে সুবিধা সাধারণ মানুষের পাওয়ার কথা, শেষ পর্যন্ত তা হয়তো মিলবে না। নানাভাবে খরচের চাপে থাকবে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ। মোবাইল ফোনের সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি সাধারণ মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি, ব্যাংকসহ বেসরকারি খাতে কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একেকজন চাকরিজীবীর সঙ্গে একেকটি পরিবার যুক্ত। এখন ছাঁটাই কিংবা বেতন কমানো হলে তাতে চাকরিজীবী পরিবারগুলো হঠাৎ করে বড় ধরনের বিপদে পড়বে। আমি মনে করি, যেসব প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কমাবে না, সরকার তাদের করছাড়ের বিশেষ সুবিধা দিক।  একজন ব্যাংকার হিসেবে আমি দেখছি, মানুষের সঞ্চয়ের প্রবণতা ও সক্ষমতা দুটোই কমে গেছে। অনেকে সঞ্চয় ভাঙিয়ে চলছেন। সঞ্চয় বা আমানত কমে গেলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতাও কমে যাবে। সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখকর হবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও