কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

চিড়িয়াখানায় বাঘের কবলে নাদেজদা শ্রীবাস্তব । ছবি: ডেইলি মেইল

বাঘের কবলে দশ মিনিট

জাহিদুল ইসলাম জন
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৫২
আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৫২


(প্রিয়.কম) বাঘের সঙ্গে দশ মিনিট ধরে লড়াই চালিয়েছেন তিনি। এখন দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাড চিড়িয়াখানার রক্ষক তিন সন্তানের মা ৪৪ বছর বয়সী নাদেজদা শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন তার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প।

দুই সপ্তাহ আগে যখন শ্রীবাস্তবের ওপরে বাঘের আক্রমণের ছবি প্রথম প্রকাশ পায় তা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন অনেকেই। টাইফুন নামের পুরুষ বাঘটি টানা দশ মিনিট ধরে আক্রমণ চালিয়ে গেছে তার ওপর। অবশেষে দর্শণার্থীদের ছুড়ে দেওয়া একের পর এক ভারী বস্তুর আঘাতে শ্রীবস্তবকে ফেলে পালায় সে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শ্রীবাস্তব ডেইলি মেইলকে বলছিলেন তার সেই মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। আর অন্যদিনের মতোই ১৬ বছর বয়সী টাইফুনকে খাবার দিতে তার খাঁচায় ঢুকেছিলেন তিনি। পৃথিবীর অন্যতম বড় বাঘ হিসেবে ধরা হয় এটাকে। তাই তার জন্য সবসময়ই থাকতে হতো বিশেষ সতর্ক।

কিন্তু ৫ নভেম্বর যখন সেই খাঁচায় ঢোকেন ভুলে যান দরজা বন্ধ করতে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে দেখলেন আধমিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে বাঘটি। শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাঘটির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন তিনি। ‘চলে যাও, আমাকে যেতে দাও -বলতে বলতে ভাবছিলাম হয়তো আমাকে ছেড়ে দেবে বাঘটি’, বলছিলেন শ্রীবাস্তব।

কয়েক মুহুর্তেই ভুল ভাঙলো তার। ‘দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিলো সবকিছু। টাইফুন আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়’, বলেন তিনি। ‘খুব হিংস্র হয়ে উঠেছিলো এমন নয়, গর্জন করছিলো আর আমার হাত চাটছিলো’, যোগ করেন শ্রীবাস্তব।

শ্রীবাস্তব বলে চলেন, কনুই আর আর হাত বাঘটির চোয়ালে ঢুকিয়ে চেষ্টা করছিলাম যেন আমার মাথা বা ঘাড়ে আঘাত করতে না পারে। হঠাৎ করে বাঘটি যখন তার থাবা আলগা করলো মনে হলো একটা সুযোগ পাওয়া গেলো।

বাঘের সঙ্গে শ্রীবাস্তবের লড়াই চলেছিলো দশ মিনিট। ডেইলি মেইলের সৌজন্যে পাওয়া ছবি
বাঘের সঙ্গে শ্রীবাস্তবের লড়াই চলেছিলো দশ মিনিট। ডেইলি মেইলের সৌজন্যে পাওয়া ছবি

‘চেষ্টা করছিলাম ক্রল করে সরে যাওয়ার, কিন্তু কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই বাঘটি পুরো শরীর নিয়ে আমার ওপরে পড়ে যায়। বুঝতে পারছিলাম না এটা আমার সঙ্গে খেলছে কি না।’

‘বুঝতে পারছিলাম নিরাপদে দাঁড়ানো চিড়িয়াখানার দর্শণার্থীরা ঘটনা দেখছে। তার আশা করছিল, আমি হয়েতো বেঁচে ফিরবো। কেই একজন চিৎকার করে লাঠি ধরার পরামর্শ দিচ্ছিলো। কিন্তু আমি জানতাম কোনো লাঠিই আমাকে এই হিংস্র বাঘ থেকে রক্ষা করতে পারবে না,’ বলে চলেন তিনি।

‘কিন্তু আমি সাড়া দিতে পারছিলাম না। কেথা বলে শক্তি নষ্ট করার পরিস্থিতিও ছিলো না। হিংত্র ্রিাণীটিকে বাগে আনতে সমস্ত মনোযোগ তার দিকেই দিতে হচ্ছিলো।
খেয়াল করলাম। বাহুতে আঘাত লেগেছে। রক্ত ঝরছে। পা দিয়ে শরীরের ওপর থেকে এটাকে সরানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বাঘটা আমার পায়ের বুটটাও ছুড়ে ফেলে দিলো।’

আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন শ্রীবাস্তব। অপেক্ষা করছিলেন মৃত্যুর। মা আর সন্তানদের কথা মনে পড়ছিলো। হঠাৎ করেই যেন সম্বিত ফিরে পেলেন তিনি। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই হবে।

ভয় আর ব্যাথা ভুলে হঠাৎ করে শ্রীবাস্তব দেখলেন বাঘটি পিছু হটছে। দর্শণার্থীদের ছুড়ে দেওয়া একরে পর এক পাথর, ভাঙা চেয়ার টেবিল বাঘটিকে ক্লান্ত করে তুলেছিলো হয়তো। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু পরে এই ঘটনার জন্য চিড়িয়াখানার প্রধান তাকেই দোষারোপ করেন। তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের পাশাপাশি অপরাধীর ব্যবস্থার নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

১৬ বছর বয়সী টাইফুনকে বিবেচনা করা হয় পৃথিবীর অন্যতম বড় বাঘ হিসেবে।

১৬ বছর বয়সী টাইফুনকে বিবেচনা করা হয় পৃথিবীর অন্যতম বড় বাঘ হিসেবে।

পাঁজর ভেঙ্গেছে, হাত কেটেছে, আঙ্গুল ভেঙেছে। তবে স্নায়ুগুলো ভালো আছে। কিন্তু তাকে সুস্থ হওয়ার আগে যেতে হবে দীর্ঘ পুর্নবাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

শ্রীবাস্তব বলেন, দর্শণার্থী অনেকের কাছ থেকেই শুভেচ্ছা পেয়েছেন তিনি। তাদের কারণেই বেঁচে ফিরেছেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

১৫ বছর ধরে চিড়িয়াখানয় কাজ করেন শ্রীবাস্তব। তিনি জানেন এই ভুলের পর আর কাজে যোগ দেওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘প্রাণীদের আমি ভালোবাসি, বাড় আর ছোট বিড়াল, ভা্ল্লুক সবাই তার কাছে প্রিয়। তবে বোধ হয় ভাল্লুককেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। তারা চালাক, বন্ধুসুলভ আর বুদ্ধিমান।’

চিড়িয়াখানার পরিচালক স্টিভেনা সোকোলোভা বলেন, দর্শণার্থীরা যা কিছু করেছে তার সবকিছু্ ঠিক। শ্রীবাস্তববে বাঁচানোর জন্য তারা যা করেছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ।