কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সুচির ‘সম্মান’ ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী জোরালো হচ্ছে সুচিকে দেওয়া ‘সম্মান’ ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি

জাহিদুল ইসলাম জন
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:০৭
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:০৭

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর অব্যাহত দমন-পীড়নের বিষয়ে নিরব থাকায় বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হচ্ছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি। বিশ্বের বিভিন্ন শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া তাকে সম্মানসূচক বিভিন্ন ডিগ্রি ও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ মহাসচিব সুচিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে রাখা ভাষণটিই হয়তো তার জন্য হতে যাচ্ছে ‘শেষ সুযোগ’।

কয়েক দশকের সামরিক শাসনের ইতি ঘটিয়ে গত বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে মিয়ানমারে গঠিত একটি ‘ডি ফ্যাক্টো’ সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুচি। নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে গত ২৫ আগস্ট থেকে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। দমন-পীড়নের মুখে এখন পর্যন্ত রাজ্যটি থেকে চার লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন এসব রোহিঙ্গা।

এমন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে নিরব থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন সুচি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাবি উঠেছে তাকে দেওয়া সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার। যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি শহর থেকে তার সম্মানসূচক ‘ফ্রিডম অব সিটি’ সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাসে দেশটি সফরের সময় লন্ডনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সম্মান ‘ফ্রিডম অব সিটি’ পান মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। কিন্তু রাখাইনে আগ্রাসনের মুখে তার নিরবতায় শহরটির স্থানীয় সরকার সদস্যরা তাকে এই সম্মান দেওয়াকে নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন।

লন্ডনের কাউন্সিলর স্কয়ার মাইল সুচিকে দেওয়া সম্মানসূচক পদ ফিরিয়ে নিতে শহর কর্তৃপক্ষ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে বৃটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। কর্তৃপক্ষকে দেওয়া এক চিঠিতে থমাস এন্ডারসন নামে অপর এক কাউন্সিলর বলেন, ‘লন্ডন বহুজাতিক জনগোষ্ঠীর একটি চমৎকার বাসস্থান। এখানে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রচুর সংখ্যক বাসিন্দা রয়েছে। সুচির বিষয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেবে।’

১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া সুচি ইতোমধ্যে মালালা ইউসুফজাই, ডেসমন্ট টুটুর মতো অন্য নোবেল বিজয়ীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সুচির নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবির পাশাপাশি কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্বও ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন শহরে সু চির সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ

যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে সুচির সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন শহর কর্তৃপক্ষের দেওয়া ‘ফি্রডম অব সিটি’ পান সুচি। তার এই সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নিতে বিতর্ক শুরু করেছেন শহরটির কাউন্সিলররা। ম্যানিক্স ফ্লিন নামে এক কাউন্সিলর তার সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তাদের ‘হাতে রক্ত’ থাকতে পারে।

সহিংসতায় সুচির অব্যাহত নিরবতা বিষয়ে সরব হচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও। ২০১২ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে দেওয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ফিরিয়ে নিতে সেখানে শুরু হয়েছে প্রচারণা। ১৫ বছরের গৃহবন্দিত্বের অবসান ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সফরের সময় তাকে এই ডিগ্রি দেওয়া হয়। মিয়ানমারে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় সে সময় অক্সফোর্ডে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন সুচি। তবে প্রচারণায় নেতৃস্থানীয় একজন ড. হ্যাজেল ডয়ি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের বিষয়ে একই মনোভাব ধরে রাখতে ব্যর্থ সুচির বিষয়ে মোহমুক্তি ঘটানোর দরকার।’

বিতর্ক শুরু হয়েছে দক্ষিণ ইয়র্ক শায়ারের শেফিল্ডেও। সুচিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে কাউন্সিলররা তাকে দেওয়া ‘ফি্রডম অব সিটি’ ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিতর্ক শুরু করেছেন। এদিকে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সুচির নামে থাকা ছাত্র সংসদের একটি কক্ষের নাম ইতোমধ্যে পরিবর্তন করে ফেলেছেন। সুচির নাম মুছে দিয়ে সেখানে ১৮৩২ সালে কলেরা বিস্তার রোধে ভূমিকা রাখা কিটি উইলকিনসনের নামফলক লাগানো হয়েছে। ছাত্র সংসদের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট আনন্দ মোহন জানিয়েছেন, এই নাম পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী।

এমন সমালোচনার মুখে থাকা সুচি আগামী মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসছেন। আর এটিকেই রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের ‘শেষ সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বিবিসির হার্ডটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখন যদি তিনি পরিস্থিতি উল্টো পথে পরিচালিত করতে না পারেন, তাহলে আমার মনে হয়, বিপর্যয়টা হবে ভয়ঙ্কর। আর সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী করে এর সমাধান সম্ভব- তার কোনো উপায় আমি দেখছি না।’ 

প্রিয় সংবাদ/শান্ত