চাঁদের মাঝে আরবিতে লেখা মুহাম্মাদ। ছবি: সংগৃহীত
রাসূল (সা.)-এর পিতা-মাতা জান্নাতে যাবেন নাকি জাহান্নামে?
আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:২৮
(প্রিয়.কম) আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি এই পৃথিবীর জন্য হরমত স্বরূপ। আল্লাপাক তাকে এই পৃথিবীর জন্য রহমন হিসেবেই পাঠিয়েছেন। তিনি সমস্ত মানব জাতিকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন। তাদেরকে জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের পথে আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের নবী (সা.) এর পিতা-মাতা যখন ইন্তেকাল করেছেন তখন সেখানে কোনো ধর্ম ছিল না। তারা কি সঠিক ধর্মের ডাক শুনেছেন। তারা কি আল্লাহর ইবাদত করতেন? তারা আসলে কোথায় যাবে? তারা কি জান্নাত লাভ করবেন? না জাহান্নামে যাবেন? এই প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রথমত দুইটি মত পাওয়া যায়। অবশ্য এই দুইটি মতে বাহিরেও আরও মত আছে।
প্রথমত: নবী (সা.) এর পিতা-মাতা উভয়ই জাহান্নামে যাবে। কেননা তারা যখন ইন্তেকাল করেছেন তখন তারা কোনো ধর্মের উপর ছিলেন না। তাছাড়া এই বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর একটি হাদিসও পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহ আমাকে অনুমতি প্রদান করেননি। আমি তার কবর জিয়ারত করার জন্যও অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু সেটাও আমাকে দেওয়া হয়নি। (সহীহ মুসলিম)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত। (সূরা-আত তাওবা, আয়াত-১১৩)
কোনো ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আবেদন জানানোর অনিবার্য অর্থ হচ্ছে এই যে, আমরা তার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তাকে ভালোবাসি। আমরা তার দোষকে ক্ষমাযোগ্য মনে করি। যারা বিশ্বস্তদের অন্তরভুক্ত এবং শুধুমাত্র গোনাহগার তাদের ক্ষেত্রে এ দুটো কথাই উপযুক্ত। যদি শুধুমাত্র আমাদের আত্মীয় বলে আমরা তাকে মাফ করে দিতে চাই তাহলে এর মানে হবে, আমাদের কাছে আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ততার দাবির তুলনায় অনেক বেশি মূল্যবান। আল্লাহ ও তার দীনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা নির্ভেজাল ও শর্তহীন নয়। আল্লাহদ্রোহীদের সাথে আমরা যে সম্পর্কে জুড়ে রেখেছি তার ফলে আমরা চাচ্ছি, আল্লাহ নিজেও যেন এ সম্পর্ক গ্রহণ করেন এবং আমাদের আত্মীয়কে যেন অবশ্যই ক্ষমা করে দেন, যদিও এ একই অপরাধ করার কারণে অন্যান্য অপরাধীদেরকে তিনি জাহান্নামের শাস্তি দিয়ে থাকেন। এই কারণে আল্লাহপাক বলেছেন, তোমারা মুশরিকদের জন্য মগফিরাতের দোয়া করো না। বরং তিনি বলেছেন তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা তোমাদের পক্ষে শোভা পায় না। অর্থাৎ আমার মানা করায় যদি তোমরা বিরত থাক তাহলে তো এর তেমন কোনো গুরুত্ব থাকে না। মূলত তোমাদের মধ্যে আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার অনুভূতি এত বেশি তীব্র হওয়া উচিত যার ফলে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারীদের সাথে সহানুভূতির সম্পর্ক রাখা এবং তাদের অপরাধকে ক্ষমাযোগ্য মনে করা তোমাদের নিজেদের কাছেই অশোভন ঠেকে।
সুতরাং এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, রাসূল (সা.)-এর পিতা-মাতা যদি সঠিক পথে, আল্লাহর পথে থাকতেন তাহলে অবশ্যই আল্লাহপাক তার নবীকে পিতা-মাতার জন্য প্রার্থনা করার অনুমতি দিতেন।
দ্বিতীয়ত: নবী (সা.)-এর পিতা-মাতা জান্নাতে যাবে। কেননা মহান আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিই সৎপথ অবলম্বন করে, তার সৎপথ অবলম্বন তার নিজের জন্যই কল্যাণকর হয়। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, তার পথভ্রষ্টতার ধ্বংসকারিতা তার ওপরই বর্তায়। কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না। আর আমি (হক ও বাতিলের পার্থক্য বুঝাবার জন্য) একজন পয়গম্বর না পাঠিয়ে দেয়া পর্যন্ত কাউকে আযাব দেই না। (সূরা-নবী ইসরাঈল, আয়াত-১৫) এই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের বার্তা সম্পর্কে সচেতন না হয়, তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে না কারণ তাদের কাছে এটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের সুযোগ নেই।
ইমাম রাজী (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.) এর পিতা-মাতা মূলত মিল্লাতে ইবরাহীমের উপর ইন্তেকাল করেছেন। কেননা তারা মূর্তি পূজা করেছেন মর্মে কোনো প্রমাণ নেই। তাই তারা জান্নাতী হবেন। তাদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না।
ইমাম রাজী (রহ.) আরও বলেন, যারা জাহান্নামী হবার দাবি করেন। তাদের দলীল হলো মুসলিম, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের হাদিস। যাতে নবীজী (সা.) এর পিতা-মাতার জন্য নবীজী (সা.)-কে দোআ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ হাদিসের জবাব হলো, এটি রাসূল (সা.) বলেছেন তার পিতা-মাতার আসল অবস্থা সম্পর্কে তখন তিনি জানতেন না, তাই বলেছেন। আসলে তারা জান্নাতী। (রদ্দুল মুহতার, মুরতাদ অধ্যায়-৪/২৩১)
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রহ.) এ বিষয়ে আলাদা ৪টি পুস্তিকা লিখেছেন। ৯টি প্রবন্ধ লিখেছেন। যাতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল (সা.)-এর পিতা-মাতা জান্নাতী। জাহান্নামী নয়।
রাসূল (সা.) এর পিতামাতা জান্নাতী না জাহান্নামী এ বিষয়ে বেশি কথা বলা ঠিক নয়: কেননা এই বিষয়ে কথা বলে মূলত রাসূল (সা.)-কে কষ্ট দেওয়া হয়। আর এটা হারাম কাজ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, যারা আল্লাহ ও তার রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা-আহযাব, আয়াত-৫৭) আর রাসূল (সা.)-এর পিতা-মাতা জাহান্নামী বললে কি রাসূল (সা.) খুশি হবেন? এতে কি রাসূল (সা.) কষ্ট পাবেন না। বরং অসহনীয় কষ্টের বিষয় পিতা-মাতাকে জাহান্নামী বলায়। তাই এ কথা না বলাই ভালো।
সূত্র: মুসলিমস্টোরিজ.টপ
প্রিয় ইসলাম/আশরাফ
- ট্যাগ:
- ইসলাম
- ইসলাম
- রাসূল [সা.]
- মুহাম্মাদ [সা.]
- জান্নাত