ছবি: রিপন
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কেন ডিম বিস্ফোরিত হয়?
আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:৩৫
(প্রিয়.কম) ডিম সেদ্ধ করা আছে, কিন্তু ঠাণ্ডাটা খেতে ইচ্ছে করছে না বলে মাইক্রোওয়েভে কয়েক সেকেন্ড গরম করতে দিলেন। কী হবে বলুন তো? ওভেনের ভেতরেই তা বিস্ফোরিত হয়ে যেতে পারে! আর তা যদি না হয়, তাহলে এতে আপনি কামড় বসালে ফটাস করে ফেটে যেতে পারে মুখের ভেতরেই। অনেকেরই এই বিশ্রী অভিজ্ঞতাটা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আসলে কতটা জানি আমরা?
অতীতে আমেরিকায় এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল। রেস্টুরেন্টে খেতে এসে এমনইভাবে মাইক্রোওয়েভে গরম করা একটা ডিমে কামড় বসালেন এক ব্যক্তি। তার মুখের ভেতরেই সেটা ফেটে যায় এবং তার ত্বক পুড়ে যায়, এমনকি কানেরও নাকি ক্ষতি হয় তার।। রেগেমেগে রেস্টুরেন্টের ওপর মামলা ঠুকে দেন তিনি। এ মামলায় নিয়োগ দেওয়া হয় সান-ফ্রান্সিসকোর চার্লস এম সাল্টার অ্যাসোসিয়েটিস নামের ল ফার্মটিকে। ডিম ফেটে যাবার ফলে যে চাপ তৈরি হয় তাতে আসলেই শ্রবণশক্তির ক্ষতি হতে পারে কিনা, তা জানতে নিয়োগ দেওয়া হয় তাদেরকে। তাদের সেই গবেষণার ফল পাওয়া গেছে সম্প্রতি।
তাদের গবেষণায় ১০০টির মত খোসাসহ হার্ড বয়েলড ডিমকে মাইক্রোওয়েভে গরম করা হয়। অনেক সময়ে ওভেনের ভেতরেই তারা বিস্ফোরিত হয়। এ কারণে তাদেরকে পাতলা মোজায় ভরে পানিভর্তি পাত্রে রাখা হয় গরম করার সময়ে। এরপর ওভেন থেকে বের করে মেঝেতে রাখা হয় এবং মিট থার্মোমিটার দিয়ে এগুলোকে ফুটো করা হয়। দেখা যায়, বেশ কয়েকটা ডিম বিস্ফোরিত হয়। মাইক্রোফোন থাকায় দেখা যায়, এরা বেশ শব্দ করেই ফাটে। ৮৬ থেকে ১৩৩ ডেসিবেল ছিল এসব বিস্ফোরণের শব্দ। এটা বেশ উঁচু মাপের শব্দ হলেও এতে কানের ক্ষতি হবার কথা নয়।
ডিমটা একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ছবি: Live Science
কিন্তু কেন এই ডিম বিস্ফোরিত হয়?
অনেকেই ভাবছেন, গরম করলে অন্য খাবার তো বিস্ফোরিত হয় না। তাহলে ডিম কেন এভাবে শব্দ করে ফাটবে?
আপনি যদি খোসা সহ একটি আলুকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দেন, তাহলে এই খোসার নিচে বাষ্পের চাপ বাড়তে বাড়তে তাও বিস্ফোরিত হতে পারে। অনেকটা গ্রেনেড ফোটার সময়ে বাইরের খোসাটাকে ভেঙ্গে ফেলার মত ঘটনা হয় এখানে। কিন্তু ডিমের খোসাটার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। গবেষকেরা অন্য এক দিক দিয়ে এটাকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেন।
মিট থার্মোমিটার ব্যবহার করে দেখা যায়, ডিমের সাদা অংশের তুলনায় কুসুমটা বেশী দ্রুত গরম হয়। হয়ত এর মাঝে পানির ছোট ছোট পকেট আটকা পড়ছে এবং খুব দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে। সাধারণ তাপমাত্রায় এসব পকেট প্রসারণের জায়গা পায় এবং বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ডিমের ভেতরে তাপমাত্রা বাড়লে প্রোটিন শক্ত হয়ে যায়, ফলে এসব পানির পকেট প্রসারিত হবার জায়গা পায় না ফলে তরলই থেকে যায়। এরপর সেই ডিমে কামড় বসালে সেই পকেট ফেটে যায় এবং এত দ্রুত প্রসারিত হয় যে শব্দ করে বিস্ফোরণ ঘটে। একই সময়ে অন্যান্য পকেটগুলোও ফাটে ফলে ডিমটা একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
সূত্র: Live Science
প্রিয় লাইফ/ আর বি