কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জেরুজালেম শহরের ম্যাপ। ছবি : সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মে এবং মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম কেন এতটা তাৎপর্যপূর্ণ?

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:৪০
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:৪০

(প্রিয়.কম) মসজিদে আল আকসার গুরুত্বের কথা আমরা সবাই জানি। পবিত্র কুরআনে আল আকসার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকায় এর গুরুত্ব আরও ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চারদিককে আমি বরকতময় করেছি, যেন তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। (সুরা বনি ইসরাইল: ১) এ আয়াতে ‘যার চারদিককে আমি বরকতময় করেছি’ বলে আল্লাহপাক আল আকসার পাশাপাশি জেরুজালেমের গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আল-আকসা তথা জেরুজালেম গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করছি।

১. মসজিদে আল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা। ইসলামে আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রথম দিকে মুসলমানরা এই স্থানকে কিবলা হিসেবে ব্যবহার করত। হিজরতের পরে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে কাবা নতুন কিবলা হয়। সাহাবিরা একটি মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন তখন কিবলা পরিবর্তনের আয়াত নাযিল হয়। এর পরে সেই মসজিদের নাম করণ করা হয়। মসজিদ আল কিবলাতাইনে।  এরপর থেকে কাবা কিবলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

২. একটি হাদিসে আল-আকসার গুরুত্বের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে এসছে মানুষ তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশে ভ্রমণ করতে পারবে না। প্রথম মসজিদ মক্কা। দ্বিতীয় মসজিদ হচ্ছে মদীনা শরীফ। তৃতীয় মসজিদ হচ্ছে আল-আকসা। (মুসলিম)

৩. জেরুজালেমের গুরুত্ব এই যে, এটি আল্লাহর বহু নবীর শহর, নবী ইবরাহীম (আ.) নবী ইসমাইল (আ.) এর শহর। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চারদিককে আমি বরকতময় করেছি, যেন তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। (সুরা বনি ইসরাইল : ১)

কুরআনের আয়াতে বর্ণিত ঘটনাটি আমাদের পরিভাষায় ‘মিরাজ’ বা ‘ইসরা’ নামে পরিচিতি। অধিকাংশ ও নির্ভরযোগ্য হাদিসের বর্ণনা অনুসারে এ ঘটনাটি হিজরাতের এক বছর আগে সংঘটিত হয়। হাদিসে ও সীরাতের বইগুলোতে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। বিপুল সংখ্যক সাহাবী এ ঘটনা বর্ণনায় সামিল হয়েছে। তাদের সংখ্যা ২৫ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাদের মধ্য থেকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা), হযরত মালিক ইবনে সা'সা (রা), হযরত আবু যার গিফারী (রা) ও হযরত আবু হুরাইরা (রা)। এই সাহাবিরা ছাড়াও হযরত উমর (রা), হযরত আলী (রা), হযরত আবুদল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামন (রা), হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) এবং আরো বিভিন্ন সাহাবী থেকেও এ ঘটনার অংশ বিশেষ বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আবুজর গিফারি (রা.) বলেন, আমি নবীজিকে (সা.) প্রশ্ন করলাম- জমিনে কোন মসজিদ প্রথম তৈরি হয়েছিল? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। আমি আবার জিজ্ঞেস করি, এ দুটির মধ্যে ব্যবধান কত? তিনি বললেন, ৪০ বছর। (বুখারি ও মুসলিম)

পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর নির্মিত হয় মসজিদে আল আকসা। তাই এটিই পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম নগরী। ১৯৮১ সালে একে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থা ও গবেষকের মতে, এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শহর। তবে তা মক্কার পর দ্বিতীয় প্রাচীনতম শহর। একে পৃথিবীর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওল্ড সিটি ঘোষণার অনেক আগেই নবীজি (সা.) একে ওল্ড সিটি বা প্রাচীনতম শহরের মর্যাদা দিয়ে গেছেন।

সূত্র: মুসলিমেস্টোরিজ.টপ

প্রিয় ইসলাম/আশরাফ