কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হাই কোর্ট। ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগে বিলম্ব কেন?

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:০৮
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:০৮

(প্রিয়.কম) টানা ৬৯ দিন পার হলেও প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় জনমনে গুঞ্জন ও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ পদে নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করা হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ না দেয়াটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অন্তরায়।

রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের মধ্যে অন্যতম হলো বিচার বিভাগ। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদ বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দীর্ঘ্য প্রায় তিনমাস আগে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন প্রিয়.কমকে বলেন, প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিতে দেরি করা মানে স্বাধীন বিচার বিভাগের অন্তরায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসে এ ঘটনা নজিরবিহীন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে তার পরামর্শ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেষ্ঠতার ভিত্তিতে এ পদে খুব তাড়াতাড়ি কাউকে নিয়োগ দেয়া উচিত। তাহলে বিচার বিভাগের কাজের গতি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন জয়নুল আবেদীন।

সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ.ম রেজাউল করিম প্রিয়.কমকে বলেন, প্রধান বিচারপতির পদ শুন্য থাকবে না। কারও জন্য বিচার বিভাগের কোনো কাজ থেমেও থাকে না। এই আইনজীবী আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির অবর্তমানে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দায়িত্বকে কিন্তু সংকুচিত করা হয়নি। তিনি প্রধান বিচারপতির সকল দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, যতদুর সম্ভব প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হোক, এটা সবার প্রত্যাশা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করে প্রিয়.কমকে বলেন, বিচার বিভাগকে জিম্মি করে কিছু মামলায় রায় সরকার তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়ায় স্বাধীন বিভাগের মর্যাদা  ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও দেখি নাই এতোদিন যাবত প্রধান বিচারপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ ফাঁকা থাকে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, এটা সাংবিধানিক শুন্যতা। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

এদিকে ৬৯ দিন পার হওয়ার পরেও প্রধান বিচারপতির পদে কাউকে নিয়োগ না দেয়া আইনের শাসনের পরিপন্থি বলে মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। গত ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য থাকা এবং নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। যে আবেদনটি আগামী রোববার ২১ জানুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরকে রিটের বিবাদী করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউনুছ আলী আকন্দ প্রিয়,কমকে বলেন, দীর্ঘদিন হয়ে গেল বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না, পদটি শুন্য ঘোষণাও করা হচ্ছে না। রিটটি দাখিলের পর আমি চারটি বেঞ্চে শুনানি করার জন্য গিয়েছি। কিন্তু তারা শুনানি করেন নাই। সর্বশেষ আজ (১৬ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন।

ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, চিফ জাস্টিসের পদটি সাংবিধানিক। এ পদে নিয়োগ না দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। এই আইনজীবীর আশা মামলাটি শুনানি করে তিনি জনস্বার্থে রায় পাবেন।

তবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবিএম নুরুল ইসলাম মনে করেন প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ না দেওয়ায় স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব পড়ছে না। তার যুক্তি আপিল বিভাগে যে কয়জন বিচারপতি আছেন তাদের দ্বারাই বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে। তবে, বিচারকদের কাজের গতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এই সিনিয়র আইনজীবী।

দেশের মামলার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে বিচারক নিয়োগ বা আদালত বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কিনা? এমন প্রশ্নে নুরুল ইসলাম বলেন, মামলা নিষ্পত্তি করতে বিচারক নিয়োগ বা আদালত বাড়ানোর কোনো যুক্তিকতা নেই। হাইকোর্টে যে কয়জন বিচারপতি আছেন তারা যদি আদালতে নিয়মিত সময় দেন। তাহলে এমনিতেই মামলা জট কমে যাবে। এজন্য বিচারক নিয়োগ বা আদালত বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।

গত ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি এসকে সিনহা। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেও এ পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।  

প্রিয় সংবাদ/কেএফ