কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাঁ থেকে উপরে সাইফুজ্জামান শিখর ও এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাব। ‍নিচে বাঁ থেকে কুতুবুল্লাহ কুটি ও আমির ওসমান রানা। ছবি: সংগৃহীত

মাগুরা-১ আসন: কে হচ্ছেন নৌকার কাণ্ডারী?

মো. ইমাম জাফর
কন্ট্রিবিউটর, মাগুরা
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২১:১৯
আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২১:১৯

(প্রিয়.কম) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্তত এক বছর বাকি। তবে এখনই নির্বাচনী হাওয়ায় জমে উঠেছে মাগুরা-১ আসন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে তৃণমূলে জনসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রের সঙ্গে চালাচ্ছেন জোর লবিং। 

মাগুরা সদর উপজেলার ১৩টি ও শ্রীপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসন (সংসদীয় আসন-৯১)। ১৯৯৬ সাল থেকে আসনটি টানা আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ৯৬ থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত পর পর চারটি সংসদ নির্বাচনেই এই আসনটিতে সংসদ সদস্য ছিলেন প্রয়াত প্রফেসর ডাক্তার সিরাজুল আকবর।

দুটি উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত হওয়ার কারণে দুই এলাকা থেকেই রাজনীতিবিদরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করে থাকেন। তবে শ্রীপুর উপজেলার নেতারা বরাবরই বঞ্চিত বলেই অভিযোগ রয়েছে। স্বাধীনতার পর ২০১৫ সালে এই আসনটির উপনির্বাচনে প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন ও নির্বাচিত হন মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাব (অব.)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় মনোনয়ন পেতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। তবে অন্যরাও মরিয়া।  

মাগুরা-১ আসনের চলমান রাজনীতিতে নৌকার মাঝির দায়িত্ব পেতে ইতোমধ্যেই যারা কেন্দ্রে জোর লবিং ও তৃণমূল জনসংযোগের কাজ জোরেশোরে শুরু করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব জনাব এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর।

আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা কালে আন্দোলন ও সংগ্রামে মাগুরা-শ্রীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা গ্রেফতারের পর মাগুরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে শক্ত হাতে সামলে রাখার বিশেষ সুনামও রয়েছে তার। সে সময় তিনি নিয়মিত নেত্রী মুক্তির আন্দোলন, মানববন্ধন, স্বাক্ষর অভিযানে অংশ নিয়ে আওয়ামী রাজনীতির একজন পরীক্ষিত সৈনিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

তবে শিখরকে টেক্কা দিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা আমির ওসমান রানা। তৃণমূলে তারও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণসহ দলীয় কর্মীদের পাশে থেকে ইতোমধ্যেই সবার আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন তিনি। 

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সাবেক যুবলীগ নেতা মো. কুতুবুল্লাহ কুটি মিয়া নৌকার প্রার্থী প্রফেসর ডাক্তার সিরাজুল আকবরের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হরিণ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোট পেয়ে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি তৃণমূল ভোটে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন কুটি মিয়া।

এদিকে গতবারও প্রায় এক ডজন আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও মনোনয়ন পাননি তারা, তবে আশাহত হননি। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের খবরাখবর নিয়েছেন নিয়মিতই। ঈদ,পূজা-পার্বণসহ সকল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা প্রদানসহ ব্যনার-ফেস্টুনের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের নজর কেড়ে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। 

মনোনয়ন বিষয়ে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব তানজেল হোসেন খান প্রিয়.কমকে, ‘সাইফুজ্জামান শিখর একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তার বাবা আছাদ্দুজামান দলের জন্য জীবন দিয়েছেন। গত কয়েক বছর যাবত মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।’

বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমোত-আরা হ্যাপি প্রিয়.কমকে বলেন,‘ মাগুরা-১ আসনের জন্য আমি নিজেই দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমি তার পক্ষে কাজ করব।

হ্যাপির সঙ্গে প্রায় সহমত ব্যক্ত করলেন মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পংঙ্কজ কুমার কুণ্ডু। প্রিয়.কমকে তিনি বলেন, ‘কে মনোনয়ন পাবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব। তবে আমি তরুণদের পক্ষে’। 

মাগুরা-শ্রীপুর আসনে মনোনয়ন নিয়ে কথা বললেন মাগুরা সদর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আনিছুর জামান খোকন। আসনটির বর্তমান এমপি’র বিষয়ে বিষেদাগার করলেন তিনি। প্রিয়.কমকে তিনি বলেন, একটি বিশেষ সময়ে বর্তমান এমপি’কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিলেও তিনি আজও মাগুরা-শ্রীপুরের কোন নেতা-কর্মীকে চেনেন না বা কোন উপকারেও আসেন না। আমাদের আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জনসাধারণের পাশে রয়েছে সাইফুজ্জামান শিখর। 

তবে তৃণমূলের অভিযোগের বিষয়ে মাগুরা-শ্রীপুর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাব (অব.) মুঠো ফোনে প্রিয়.কমকে বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যাই ভাবুক না কেন মনোনয়নের বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত’।

তিনি বলেন, ‘মিছিলের পেছনে লোক সমাগম জনপ্রিয়তার মাপকাঠি নয়। তৃণমূল ভোটে দুর্নীতি (ভোট কেনা-বেচা) হয়। আমি দুর্নীতিতে বিশ্বাসী নই। নেত্রী আমার সম্পর্কে জানেন। তিনি আমাকে মূল্যান করবেন’। 

প্রিয় সংবাদ/কামরুল