কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি: প্রিয়.কম

দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো || অলাভজনক সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা কী?

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৭, ২০:৫৩
আপডেট: ৩০ মে ২০১৭, ২০:৫৩

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক সি. ডব্লিউ. অ্যান্ডারসন, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড ডাউনি জুনিয়র এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জার্নালিজমের অধ্যাপক মাইকেল শাডসন দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো নামের একটি বই লিখেছেন। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশ করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। বইটিতে লেখকরা সাংবাদিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। সেই বই অনুসারে ধারাবাহিকভাবে অনুলিখন করছেন মিজানুর রহমান

আজকের বিষয়: অলাভজনক সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা কী?

(প্রিয়.কম) ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রচলিত সাংবাদিকতার আর্থিক কাঠামোকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগে এ সংবাদমাধ্যমগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর ব্যাপক জোর দিত। বিজ্ঞাপন বাবদ তাদের অর্থের ঘাটতি এবং কর্মী ছাঁটাইয়ে বাধ্য হওয়ার পরও অবশ্য এখনও তারা লাভজনক অবস্থানেই আছে। তবে তারা তাদের ‘পাবলিক সার্ভিস’ সাংবাদিকতা এখন অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। 

এ ঘাটতি পূরণের চেষ্টা হিসেবে কিছু সাংবাদিক ছোট ছোট অলাভজনক সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করছে, যারা কমিউনিটি বা জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। এসব অলাভজনক অনেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন অনেক দাতা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে পিউ রিসার্স সেন্টার’র এক জরিপে দেখা গেছে, এ ধরনের প্রায় ২০০ অলাভজনক সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, দাতা, বিশ্ববিদ্যালয়, উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে অন্তত ১৪০ মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছে। অনেক বড় বড় দাতারাও বলেছেন, জনগুরুত্ব বিষয়ের ওপর সাংবাদিকতার ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য তারা অলাভজনক সংবাদমাধ্যমে বিনিয়োগ করছেন। সান ডিয়েগোর ব্যাবসায়ী বাজ উলি স্থানীয় সংবাদ আরও ভালোভাবে প্রচার ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার জন্য ভয়েস অব সান ডিয়েগোতে প্রথমে বিনিয়োগ করেছিলেন। টেক্সাসের ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট জন থর্নটন টেক্সাসে আরও উন্নত ও গভীরভাবে সাংবাদিকতা করার জন্য টেক্সাস ট্রিবিউনে বিনিয়োগ করেছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্যোক্তা হার্ব এবং ম্যারিয়ন স্যান্ডলার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মান বাড়াতে প্রো পাবলিকায় বিনিয়োগ করেন। এমনকি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর সাংবাদিকতা করে এমন অনেক অলাভজনক সংবাদ প্রতিষ্ঠানেও বিনিয়োগ করেন দাতারা। যেমন- ইনসাইড ক্লাইমেট নিউজ পরিবেশের ওপর, দ্য মার্শাল প্রজেক্ট  ক্রিমিনাল জাস্টিসের ওপর, কাইসার হেল্থ নিউজ স্বাস্থ্য বিষয়ের ওপর এবং চক বিট শুধু শিক্ষাব্যবস্থার ওপর সাংবাদিকতা করে।

নাইট ফাউন্ডেশনের মতো অনেক জনহিতৈষী ফাউন্ডেশন অলাভজনক সংবাদমাধ্যমে বিনিয়োগ করে। যেমন বার্কলে ভিত্তিক সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং এ অনুদান দিয়েছে নাইটসহ আরও কিছু ফাউন্ডেশন। আবার পিটার্সবার্গ এবং পেনসিলভানিয়াতে নাইট ফাউডেশন এবং পিটার্সবার্গ ফাউন্ডেশন মিলে যৌথভাবে অনেক অলাভজনক সংবাদমাধ্যমে অনুদান দিয়েছে। 

অলাভজনক সংবাদমাধ্যমের তৈরি অধিকাংশ সংবাদই বাণিজ্যিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়, যেসব সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে তাদের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। প্রো পাবলিকা’র অনুসন্ধানী রিপোর্টিং নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এ প্রকাশ হয়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক রেডিও ও টিভি স্টেশনেও তাদের রিপোর্টি প্রচারিত হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং, পেনসিলভানিয়ার পাবলিক সোর্স এবং টেক্সাসের টেক্সাস ট্রিবিউন’র প্রতিবেদন দেশজুড়ে অসংখ্য রেডিও, টিভি ও পত্রিকায় প্রতিনিয়ত প্রচারিত হচ্ছে, প্রকাশিত হচ্ছে। 

কিছু কিছু অলাভজনক সংবাদমাধ্যম তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। তারা তাদের সংবাদের জন্য সামান্য কিছু অর্থ নেওয়া শুরু করেছে সম্প্রতি। কিন্তু এ ধরনের অধিকাংশ মিডিয়াই বাণিজ্যিক মাধ্যমকে বিনামূল্যে তাদের সংবাদ সরবরাহ করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা কেন বিনামূল্যে অন্যদের সংবাদ সরবরাহ করে? কারণ এভাবে তারা ব্যাপক প্রচার পায়। বহু মানুষ তাদের নাম জানতে পারে। অনেক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম বাণিজ্যিক মাধ্যম থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তাদের জন্যও রিপোর্টিং করে থাকে। 

স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ খবরা-খবর, স্কুলের সাফল্য-ব্যর্থতা, পরিবেশগত সমস্যা, সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি, কলেজ প্রাঙ্গণে যৌন হয়রানির মতো অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে অলাভজনক সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব অনেক। অলাভজনক সংবাদমাধ্যমে প্রথমে স্থান পাওয়া এসব খবর পরবর্তীতে জাতীয় খবরেও পরিণত হয়েছে বিভিন্ন সময়। অনেক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও অর্জন করেছে। যেমন ২০১১ সালে সাংবাদিকতার নোবেলখ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিল প্রো পাবলিকা। ২০১৩ সালে মিশিগানে তেল নিঃসরণের ক্ষতিকর দিক নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিল ইনসাইড ক্লাইমেট নিউজ। ওই সময় এটির আনুষ্ঠানিক কোনো নিউজরুম পর্যন্ত ছিল না।

অলাভজনক সংবাদমাধ্যমের অনেক প্রভাব থাকলেও তাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেকটাই নড়বড়ে। বড় বড় দাতা ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে শুরুর সময়ের অর্থ অনুদান হিসেবে পেলেও টিকে থাকার জন্য এর কর্মকর্তাদের অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। অনেক স্থানীয় অলাভজনক সংবাদমাধ্যমই স্থানীয়ভাবে অর্থ উপার্জন করার ওপর মনোনিবেশ করেছে। যেমন দ্য নিউ হ্যাভেন ইন্ডিপেনডেন্ট  তাদের ব্যয়ের শতকরা ৭০ ভাগই তুলে আনে স্থানীয় পাঠক ও গ্রাহকদের কাছ থেকে। ২০১৪ সালে ভয়েস অব সান ডিয়েগো এবং মিন পোস্টকে তাদের স্থানীয় মেম্বারশিপ কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য নাইট ফাউনেডশন ১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়। 

২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ট্রেক্সাস ট্রিবিউন  সাংবাদিকদের সংখ্যায় এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অন্যতম শক্তিশালী অলাভজনক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম। এটি রাজ্য সরকার, রাজনীতি ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করছে। শুরুতে ট্রেক্সাস ট্রিবিউনে  অনুদান দিয়েছিলেন জন থরটন, ইভান স্মিথ। পরবর্তীতে টেক্সাস ট্রিবিউন-এর এডিটর ইন চিফ টেক্সাসের অনেক ধনাঢ্যদের কাছ থেকে অনুদান জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের পেইড মেম্বারশিপও বেড়েছে অনেক। ২০১৩ সালে টেক্সাস ট্রিবিউন-এর আয় ছিল ৫.১ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১.১৬ মিলিয়ন ডলার এসেছে কর্পোরেট বিজ্ঞাপন থেকে, সংবাদভিত্তিক বিভিন্ন ইভেন্ট থেকে এসেছে ১.১৩ মিলিয়ন ডলার এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে এসেছে প্রায় ৭ লাখ ডলার।