হজ পালন শেষে দেশে ফিরছেন হাজিগণ। ছবি : সংগৃহীত।
হজ পালন শেষে একজন মুসলিমের করণীয়-বর্জনীয় কী?
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:০২
(প্রিয়.কম) পবিত্র হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এবার বাড়ি ফেরার পালা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া লক্ষ লক্ষ হাজিরা এবার নিজ দেশ ও নিজ বাড়িতে ফেরার জন্য অপেক্ষা। কিছু কিছু দেশের ফিরতি ফ্লাইট শুরুও হয়ে গেছে।
এই সময়ে একজন হাজির সামনে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি ও বড় আকারে এসে দাঁড়ায় সেটা হলো- এখন তিনি কী করবেন? কেমন হবে তার হজ পরবর্তী জীবনযাপন প্রক্রিয়া? তিনি কী আগের মতো কাটাতে পারবেন তার জীবন না কী কোনো ভিন্নতা আনতে হবে? এসব প্রশ্নের সাথে হালে এসে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন কুসংষ্কার ও কুপ্রথা। অনেকেই ভাবেন হজ পালনের পর আমি আর আগের সেই মানুষটি থাকছি না সুতরাং আমাকে আগের সব বিষয়গুলোকে পাল্টিয়ে নতুনভাবে জীবনযাপন শুরু করতে হবে! ভাবনাটি আশিংক সত্য হলেও এর প্রভার শুধু খারাপ বা মন্দ কাজ ও অভ্যাসের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ। পবিত্র হজব্রত পালনের পর একজন খাঁটি মুসলিমের এমনটাই নিয়ম হওয়া উচিত যে, এখন থেকে আমি আর কোনো খারাপ বা মন্দ কাজ অথবা কোনো প্রকারের কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত হবো না। এমন সংকল্প হজ ফেরত প্রত্যেক হাজির জন্য আবশ্যক-করণীয়। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে, আর তাতে কোনো ধরনের অপকর্ম বা পাপাচারে লিপ্ত না হয়, সে ব্যক্তি সদ্যভূমিষ্ঠ নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে (হজ থেকে) ফিরে আসে। ' (বোখারি : ১৪২৪, মুসলিম : ২৪০৪)
প্রথম কাজ হচ্ছে, পবিত্র হজব্রত পালনের সৌভাগ্য লাভের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। কারণ আল্লাহ মহান পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক (নেয়ামত বাড়িয়ে দিবো) দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর’। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৭)
দ্বিতীয় কাজ হলো, এই হজ পালনের সফরকে নিজের জীবন পরিবর্তনের একটি সফল হিসেবে গ্রহণ করা। আর এই পরিবর্তন অবশ্যই ভালো বা শুভ্রতার দিকে হবে। এই মর্মে আল্লাহ মহান পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে’। (সূরা রাদ, আয়াত- ১১)
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রত্যেক মুসলমানই হালাল উপার্জনের দ্বারা হজ পালন করেন কারণ হারাম উপার্জন দ্বারা হজ পালন করতে তা সঠিক বিবেচিত হবে না। সুতরাং হালাল উপার্জনের এই ধারাকে হজ পালন পরবর্তী জীবনে জারি রাখা আবশ্যক। আর আল্লাহ মহান তো বলেই দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করেছি আর সুদকে করেছি হারাম। (সুরা বাকারা, আয়াত-২৭৫)
চতুর্থ বিষয় হলো, হজের এই পবিত্র সফরকে পরবর্তী জীবনের পাপ-পঙ্কিলতা ও দারিদ্রতা থেকে মুক্তি বা দূরে থাকার সোপান হিসেবে গ্রহণ করে হজ পরবর্তী জীবনে কঠোর পরিশ্রমি ও মুত্তাকি হওয়ার চেষ্টা করা। হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একের পর এক হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাকো, কেননা এ দুটি বস্তু দারিদ্র্য ও গুনাহকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দেয়, যেভাবে (কর্মকারের) চুল্লি লোহা, স্বর্ণ ও রুপার ময়লা বিদূরিত করে’। (তিরমিজি : ৭৩৮, ইবনে মাজাহ : ২৮৮৭)
পঞ্চম বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজে মাবরুরের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না’। (বোখারি : ১৬৫০, মুসলিম : ২৪০৩) হজ কবুল হওয়ার নিদর্শন হলো, এর মাধ্যমে জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ভবিষ্যতে গুনাহ বা সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব বাড়ে। আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি একজন হাজি বেশি থেকে বেশি যত্নবান হন। হজ পালন করার পর যার জীবনে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসেনি, তার হজ কবুল হওয়ার বিষয়টি সন্দেহমুক্ত নয়। (আপকে মাসায়েল : ৪ খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৫)
প্রিয় ইসলাম/গোরা