কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি সংগৃহীত

দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো || ইন্টারনেটে সংবাদ কেমন?

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০১৭, ১২:১৪
আপডেট: ০৮ মে ২০১৭, ১২:১৪

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক সি. ডব্লিউ. অ্যান্ডারসন, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড ডাউনি জুনিয়র এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জার্নালিজমের অধ্যাপক মাইকেল শাডসন দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো নামের একটি বই লিখেছেন। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশ করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। বইটিতে লেখকরা সাংবাদিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। সেই বই অনুসারে ধারাবাহিকভাবে অনুলিখন করছেন মিজানুর রহমান

আজকের বিষয়: ইন্টারনেটে সংবাদ কেমন?

(প্রিয়.কম) আজকাল মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই-মেইল , ওয়েবসাইটে যা দেখে, তাকেই নিউজ হিসেবে বিশ্বাস করে। যদিও এটিই হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু নতুন ডিজিটাল ফাঁদ সেটি হতে দিচ্ছে না। এখন মানুষের সাধারণভাবে বলা একটি কথা কিংবা অনিশ্চিত সূত্রের মাধ্যেমে পাওয়া কোনো খবরও সামাজিকমাধ্যম ও ই-মেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম দায়িত্ব নিয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশ করছে, সেগুলোও আবার এসবগুলো মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।

ডিজিটাল মাধ্যমে এখন যত সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগেরই উৎস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা, টিভি, রেডিও। এসব প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম তাদের সংবাদগুলোকে তাদের ওয়েবসাইট ও সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করে। পরে সেগুলো সারা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়। ২০১২ সালে নেইলসন’র করা জরিপে অামেরিকায় সর্বাচ্চ ভিজিটর পাওয়া ২০টি ওয়েবসাইটের মধ্যে এবিসি, সিবিএস, এনবিসি, ফক্স, সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং গ্যানেটসহ ১৫টিই ছিল সংবাদপত্র ও টিভির ওয়েবসাইট। ফেসবুক এবং টুইটারে এসব ওয়েবসাইটগুলোর বিশাল সংখ্যক অনুসারী আছে। আগেও যেটা আলোচনা করা হয়েছে, এ সংবাদমাধ্যমগুলো এখন ইন্টারনেটের আবেদন উপলব্ধি করে তাদের কৌশল ঠিক করছে, অনেকে দূর এগিয়েও গেছে এবং সফল হচ্ছে।

অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা তাদের সংবাদগুলো কেবল ইন্টারনেটে (ওয়েবসাইট বা সামাজিকমাধ্যম) পরিবেশন করছে।এসব প্রতিষ্ঠানের এখন সামাজিকমাধ্যমে বিশাল সংখ্যক অনুসারী হয়েছে এবং দিন দিন তারা ব্র্যান্ড হয়ে উঠছে। অাবার অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা অলাভজনক এবং শুধু ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং এবং কমিউনিটি ভিত্তিক সাংবাদিকতা করছে। তাদের বিষয়ে পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

শতভাগ ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে যেগুলো খুব ভালো করছে, তারা এখন প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নিউজ এগ্রিগেট করছে। এতে করে প্রতিষ্ঠিত সেসব সংবাদমাধ্যমের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, বরং তাদের ওয়েবসাইটের পাঠক বাড়ছে, তাদের প্রচারণাও হচ্ছে। 

যেমন হাফিংটন পোস্ট তাদের যেকোনো একটি সংবাদ কিংবা ব্লগের সঙ্গে অন্য সংবাদমাধ্যমের সংশ্লিষ্ট লিঙ্ক যুক্ত করে দেয়। এতে করে হাফিংটন পোস্ট’র রিডারও যেমন বাড়ছে, সংশ্লিষ্ট লিঙ্কে ক্লিক করে পাঠক ওই নিউজটি পড়ায় তাদেরও রিডার বাড়ছে। নিজস্ব সাংবাদিকতা ও অন্য সংবাদমাধ্যম থেকে নিউজ কেনার ফলে হাফিংটন পোস্ট একটি বিশাল পাঠকগোষ্ঠি তৈরি করেছে। ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েবসাইটটির ইউনিক ভিজিটর ছিল ১১৫ মিলিয়ন।  ২০১৪ সালে হাফিংটন পোস্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আরিয়ানা হাফিংটন একটি স্বাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এটি করার ফলে মানুষ পেতে চায় এমন সব ধরনের খবরের একটি উৎসে পরিণত হয়েছে হাফিংটন পোস্ট।’

দ্য ডেইলি বিস্টও অনেকটা হাফিংটন পোস্ট’র মতোই সংবাদ পরিবেশন করে। ডেইলি বিস্ট’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রকাশক জনপ্রিয় সাংবাদিক টিনা ব্রাউনের সঙ্গে আরিয়ানা হাফিংটনের ব্যাক্তিগত বিদ্বেষ ছিল। কিন্তু তা সত্বেও তারা উভয়ই একই উপায়ে সংবাদ পরিবেশন করছে। ডেইলি বিস্ট এখন আইবিটি মিডিয়া’র মালিকানাধীন। এখনও তারা তাদের নিজস্ব কন্টেন্টের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের লিঙ্ক, ভিডিও ব্যবহার করে এবং অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিউজ এগ্রিগেট করে। 

নতুন এগ্রিগেটরদের মধ্যে ম্যাশেবল অন্যতম।  সামাজিকমাধ্যম, ব্যবসা এবং প্রযুক্তি নিয়ে তারা যেমন রিপোর্টিং করছে, আবার অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিউজ এগ্রিগেটও করছে। নিউজ এগ্রিগেটরদের মধ্যে পুরানো প্রতিষ্ঠান ইয়াহু নিউজ তাদের নিজস্ব কন্টেন্ট বাড়ানো ও ক্রীড়া বিষয়ক সাংবাদিকতার ওপর জোর দিয়েছে। এজন্য তারা প্রতিষ্ঠিত টিভি ও সংবাদপত্র থেকে ভালো ভালো সাংবাদিকদের এনে নিয়োগ দিয়েছে। 

অনেক ওয়েবসাইটে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ওয়েবসাইটের ট্রাফিক ডাটা বিশ্লেষণ করে কোন ধরনের নিউজ বেশি পাঠককে আকর্ষণ করছে, তা যাচাই করে সে ধরনের নিউজকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরুপ, বাজ ফিড ভিডিও, প্রাণীভিত্তিক নিউজের ওপর জোর দেয়; গকার জোর দেয় রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাপূর্ণ নিউজ, সেলিব্রেটি গসিপ এবং অদ্ভুত ঘটনাগুলোকে। হলিউডভিত্তিক টিএমজেড পুরোপুরি সেলিব্রেটি গসিপ, বিনোদন তারকাদের ভিডিও, লাইফস্টাইল নির্ভর। উপরে যে তিনটি সংবাদমাধ্যমের কথা উল্লেখ করা হলো, মাঝে মাঝে তারা এমন সংবাদও প্রকাশ করে যেগুলোর প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। যেমন বাল্টিমোর র‌্যাভেন্সের ফুটবলার রে রাইস লিফটে তার স্ত্রীকে ঘুষি দিয়েছেন, এমন ভিডিও প্রকাশ করেছিল টিএমজেড। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার গোপন আঁতাতের নথি প্রকাশ করে দিয়েছিল বাজ ফিড, যেটি নিয়ে সারা দুনিয়ায় হইচই পড়ে গিয়েছিল। এসব ওয়েবসাইটের নিজস্ব কন্টেন্ট খুবই কম। ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিও, ছবিকে ভিত্তি করে বানানো কন্টেন্টকে আকর্ষণীয় হেডলাইন দিয়ে পোস্ট করেই এরা সর্বোচ্চ পরিমাণ ট্রাফিক পাচ্ছে।

ভক্স, ফাইভ থার্টি এইট, কোয়ার্টজ এর মতো নতুন ওয়েবসাইটগুলো প্রচুর তথ্যসমৃদ্ধ সংবাদ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে উঠছে, একইসঙ্গে তারা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এগ্রিগেটও করছে। সিরিয়া ডিপলি’র মতো কিছু স্টার্টআপ শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে ফোকাস করে এবং অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে ওই বিষয়ক সংবাদ এগ্রিগেট করে। ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত এবং ব্লগের দিক থেকে তারা সবাই নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্ট’র মতোই।  

সামান্য কিছু স্টার্টআপ আছে যেগুলো প্রথম থেকেই রিপোর্টিং করত। রাজনীতির খবরাখবরের জন্য আদর্শ সাইট পলিটিকোবিজনেস ইনসাইডার ব্যবসা ও প্রযুক্তির খবরের ওপর জোর দেয়, টেকক্রাঞ্চও প্রযুক্তির খবরের ওপর জোর দেয়। স্যালন এবং স্লেট হচ্ছে একটু আগের ডিজিটাল মিডিয়া, যাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা, সংস্কৃতি, মিডিয়া ও বিনোদন বিষয়ে নিউজ ও ভিডিওর জন্য নিজস্ব সাংবাদিক আছে। কানাডার প্রিন্ট ম্যাগাজিন ভাইসও এখন ডিজিটাল মাধ্যমে অবস্থান তৈরি করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারাও একই ধরনের সংবাদ বিষয় নিয়ে কাজ করছে তবে তাদের টার্গেট মূলত তরুণরা। একটি সাথে ভাইস’র ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সময় জনপ্রিয় ও বিতর্কিত ভিডিও ও ছবি পরিবেশন করা হয়। যেসব সম্পূর্ণ ডিজিটাল ওয়েবসাইট শুধু স্থানীয় খবরের ওপরই জোর দিয়েছে, তাদের প্রায় কেউই টিকে থাকতে পারেনি।  

এমনকি অনেক বাণিজ্যিক ডিজিটাল সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট স্থানীয় খবরের ওপর বিশেষ জোর দেয়, তবে তাদের খুব অল্প সংখ্যকই টিকে থকতে পেরেছে। 

নতুনদের মধ্যে যারা একটি আর্থিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে তাদের চেষ্টা মূলত নির্ভর করে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, বিজ্ঞাপন, ডিজিটাল সাবসক্রিপশনের ওপর। পুরাতন মিডিয়াগুলোর যে আর্থিক কাঠামো ছিল তা ভেঙে গেলেও নতুন ও ডিজিটাল মিডিয়াগুলোর আর্থিক কাঠামোকে প্রতিষ্ঠিত একটি রুপ দিতে এখনও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।