কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি সংগৃহীত

দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো || এ সময়ের সংবাদ ও সাংবাদিকতা

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৫৭
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৫৭

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক সি.ডব্লিউ.অ্যান্ডারসন, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড ডাউনি জুনিয়র এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জার্নালিজমের অধ্যাপক মাইকেল শাডসন ‘দ্য নিউজ মিডিয়া, হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো’ নামের একটি বই লিখেছেন। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশ করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। বইটিতে লেখকরা সাংবাদিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। সেই বই অনুসারে ধারাবাহিকভাবে অনুলিখন করছেন মিজানুর রহমান

প্রথম পর্ব: এ সময়ের সংবাদ ও সাংবাদিকতা

(প্রিয়.কম) সংবাদ এখন সর্বত্র। সব ধরনের মোবাইল ডিভাইস, কম্পিউটার, টেলিভিশন, অফিস, এমনকি বিমানবন্দরের ওয়েটিং লাউঞ্জ, কোথায় নেই সংবাদ। আর সংবাদের উৎস এখন সীমাহীন। সংবাদপত্র, রেডিও কিংবা টেলিভিশন তো আছেই, সেই সঙ্গে ওয়েবসাইট, তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট, ব্লগ, সামাজিক মাধ্যম, ইমেইল, টেক্সট মেসেজ, শেয়ার করা ছবি বা ভিডিও, এমনকি ওয়েব সার্চ ইঞ্জিনও এখন সংবাদের উৎস। শুধু একটি স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে যে কেউ খবর জানাতে বা পরিবেশন করতে পারে। এর বাইরে প্রচলিত সংবাদমাধ্যম কিংবা ছাপা পত্রিকা তো আছেই।

পাঠকদের তথ্য জানায়, এমন যে কোনো কিছুই সংবাদ। শুধু একটি ছবি কিংবা ছোট একটু তথ্যও সংবাদ হতে পারে, যদি তা গুরুত্ব বহন করে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করি কোনটি সংবাদ আর কোনটি সংবাদ নয়। এক্ষেত্রে আমরা প্রচলিত সাংবাদিকতার রীতি অনুসরণ করি না। সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল না হয়েও আমরা সামাজিক মাধ্যমে খবর পরিবেশন করতে পারি। এমনকি সংবাদমাধ্যমের সংবাদ উৎস ও বিশ্লেষণেও আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি।

সংবাদকে সাংবাদিতকার নীতি অনুসরণ করেই হতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিশ্বাসযোগ্য যেকোনো তথ্য, ছবি, ভিডিও, গ্রাফিক্সই সংবাদ হতে পারে। আর তথ্যের সত্যতা যাচাই, গভীরে ঢুকে সংবাদ বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং পাঠককে সংবাদের সঙ্গে একীভূত করাই হচ্ছে সাংবাদিকতা।

ইন্টারনেটে থাকা কোনো ভিডিও, ব্লগ বা ছবি থেকে খবর তৈরি করা এখন সাংবাদিকদের জন্য সহজ হয়ে গেছে। তবে এখনও এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সাংবাদিকদের বা সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে বের করতে হয়। পরবর্তীতে ছাপা পত্রিকা বা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিবেশন করা এসব খবরেরও বিশাল প্রভাব রয়েছে। যে মাধ্যমেই সংবাদটি পরিবেশন করা হোক না কেন, বিভিন্ন ধরনের সংবাদ মাধ্যম এখনও বিশ্বাসযোগ্য স্থানীয়, জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও অনুসন্ধানী খবরকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, যাতে ওই খবরের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতাবানদের জবাবদিহিতে বাধ্য করানো যায়। ২০১৪ সালে আমেরিকান প্রেস ইনস্টিটিউটস মিডিয়া ইনসাইট প্রজেক্ট’র করা এক জরিপে দেখা যায়, এখনও ৬০ শতাংশ মার্কিন নাগরিকই সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছ থেকে এ ধরনের সংবাদ প্রত্যাশা করে।

সাংবাদিকতার উদ্দেশে এখন অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই ডিজিটাল মাধ্যমে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ছাপা পত্রিকারও এখন ওয়েবসাইট অাছে, সেখানে তারা ছবি, ভিডিও, গ্রাফিক্স ব্যবহার করছে, অন্য সংবাদমাধ্যমের লিংক ব্যবহার করছে, যেটি ছাপা পত্রিকায় সম্ভব নয়। ছাপা পত্রিকাগুলো তাদের সামাজিক মাধ্যমে গিয়ে সংবাদ পড়তেও তাদের পাঠককে উৎসাহিত করছে। টিভি এবং রেডিওগুলো তাদের প্রতিবেদনটি টেক্সট আকারে তাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করছে, সঙ্গে অডিও-ভিডিও-ছবি তো থাকছেই। ডিজিটাল স্টার্টআপগুলো একদিকে যেমন তাদের নিজস্ব কন্টেন্ট তৈরি করছে, অন্যদিকে অন্যান্য মাধ্যম থেকেও সংবাদ সংগ্রহ (অ্যাগ্রিগেট) করছে। অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা সেলিব্রেটি গসিপ, গেমস, আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও এবং তুচ্ছ বিষয়কে পুঁজি করে বিশাল সংখ্যক ডিজিটাল পাঠককে ধরে রাখতে পারছে। এ ধরনের ওয়েবসাইটগুলোও এখন প্রচলিত সংবাদের দিকে মনোযোগী হচ্ছে। আবার অন্যরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, সংবাদের ব্যাখ্যা, রাজনীতি, ব্যবসা, প্রযুক্তি, খেলার সংবাদকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আবার এমন ওয়েবসাইটের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে, যারা সংবাদের জন্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়েও অন্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সমঝোতা করছে এবং এমন বিশাল পরিসরে সাংবাদিকতা করছে, যা কারও একার পক্ষে করা সম্ভব নয়।

কিন্তু পুরাতন কিংবা নতুন অনেক সংবাদমাধ্যমই এখন টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমগুলোর যে ধরনের অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল, ‘ডিজিটাল ভূমিকম্প’র পরে তা গুঁড়িয়ে গেছে! তবে অনেক ডিজিটাল স্টার্টআটপকেও তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো স্থিতিশীল প্রমাণ করার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।  এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংবাদ আসছে, তাই আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সাংবাদিকতা আরও ভালোভাবে করার সুযোগও তৈরি হয়েছে। অামেরিকার সাংবাদিকতা এখন যথেষ্ঠ ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।