কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি সংগৃহীত

দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো || টেলিভিশনে সংবাদের চিত্র কেমন

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৭, ১৫:৩৯
আপডেট: ০২ মে ২০১৭, ১৫:৩৯

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক সি. ডব্লিউ. অ্যান্ডারসন, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড ডাউনি জুনিয়র এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জার্নালিজমের অধ্যাপক মাইকেল শাডসন দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো নামের একটি বই লিখেছেন। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশ করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। বইটিতে লেখকরা সাংবাদিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। সেই বই অনুসারে ধারাবাহিকভাবে অনুলিখন করছেন মিজানুর রহমান

আজকের বিষয়: টেলিভিশনে সংবাদের চিত্র কেমন

(প্রিয়.কম) আমেরিকানদের কাছে সংবাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎস হচ্ছে টেলিভিশন। যদিও বিশাল একটা জনগোষ্ঠী এখনও প্রতিদিন সংবাদপত্র, রেডিও এবং ইন্টারনেটে সংবাদ পড়ে। ২০১৪ সালে অামেরিকান প্রেস ইনস্টিটিউটস মিডিয়া ইনসাইট প্রজেক্ট’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক তাদের প্রয়োজনের কিছু না কিছু খবর সরাসরি টেলিভিশন স্টেশন বা তাদের ওয়েবসাইট থেকে, ৬৬ শতাংশ মানুষ সংবাদপত্র অথবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে, ৫৬ শতাংশ মানুষ রেডিও কিংবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে এবং ৪৭ শতাংশ মানুষ শুধু ইয়াহু নিউজ এবং বাজফিডের মতো পুরোপুরি ডিজিটাল সাইট থেকে পড়ে থাকে।

ব্যয় কমাতে স্থানীয় ও জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলো গত কয়েক বছরে বেশ কাটছাঁটের পরও টিভিগুলোতে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি সময় ধরে সংবাদ বা সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। টিভি চ্যানেলগুলোতে কী ধরনের সংবাদ প্রচারিত হবে, তা নির্ধারিত হয় বর্তমানে কোন বিষয়টি জনপ্রিয় তার ওপর ভিত্তি করে এবং উদ্দিষ্ট দর্শকদের রুচি  ও মতামতের ওপর ভিত্তি করে। টিভিগুলোতে বেশি গুরুত্ব পায় সাধারণত আবহাওয়া, যানজট, অপরাধ, খেলা, সেলিব্রেটি গসিপ, সেলিব্রেটি লাইফস্টাইল, লাইফস্টাইল নিউজ, বিনোদন নিউজ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সাধারণত সন্ধ্যায় সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হয়।

প্রায় এক দশকের দুরবস্থার পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এবিসি, সিবিএস এবং এনবিসির মতো প্রধান টিভি চ্যানেলগুলোর সন্ধ্যার বুলেটিনে দর্শক বেড়েছে। এ তিনটি টিভি চ্যানেলের সন্ধ্যার খবরের মোট দর্শক সংখ্যা এখন ২২ থেকে ২৩ মিলিয়নে এসে স্থিত হয়েছে, যা সিএনএন, ফক্স নিউজ এবং এমএসএনবিসির প্রাইম টাইম সংবাদের মোট দর্শক সংখ্যার তুলনায় যথেষ্ঠ ভালো।  পিউ রিপার্স সেন্টার এবং নেইলসন রিসার্চের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাইম টাইমে সিএনএন, ফক্স নিউজ এবং এমএসএনবিসির মোট দর্শক মাত্র তিন মিলিয়নেরও কম। ২০১২ সালে পিউ রিসার্চের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, টিভি নেটওয়ার্কগুলোর ৩০ মিনিটের একটি সংবাদ বুলেটিনে সংবাদ দেখানো হয় মাত্র ১৮.৮ মিনিট। বাকী সময় যায় বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন ঘোষণা এবং নিজেদের প্রচারণায়। এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ  নাম হলেও এবিসি টেলিভিশনের এ অনুষ্ঠানে খুব সামান্য সংখ্যকই আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রচার করা হয়। বরং এ অনুষ্ঠানে অপরাধ, জীবন যাপন এবং বিনোদন সংবাদের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এনবিসি নাইটলি নিউজ  অনুষ্ঠানে সরকার ও  রাজনীতির খবরের ওপর মোটামুটি ভালোই গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া লাইফস্টাইল নিউজের প্রাধান্য থাকে এ অনুষ্ঠানে। সিবিএস ইভিনিং নিউজ  অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশি সংবাদ প্রচার করা হয়। যদিও ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সিবিএস দেশের বাইরে ৯টি ব্যুরো অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তাদের বিদেশে ব্যুরো অফিস আছে মাত্র ৫টি। তবে পিউ রিসার্চের এ জরিপের পরও এ চ্যানেলগুলো তাদের সন্ধ্যার প্রাইম টাইমের দর্শক বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে। যেমন এবিসি তাদের সংবাদে নতুন ধরনের গ্রাফিক্স, মেলোড্রামাটিক মিউজিক এবং সাউন্ড ইফেক্ট ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে প্রতিটি অনুষ্ঠানেই দর্শক আকর্ষক কিছু ভিডিও ও কন্টেন্ট রাখা হয়, আবার কিছু কন্টেন্ট থাকে যেগুলো শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।

একটি টিভি চ্যানেলের অন্যান্য নিউজ অনুষ্ঠানের ভিত্তিতেও নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের নিউজ বাছাই করা হয়। এবিসির ‘গুড মর্নিং আমেরিকা, এনবিসির ‘টুডে’, সিবিএস’র ‘দিস মর্নিং’ শোগুলোর মোট দর্শক সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ মিলিয়ন। এ অনুষ্ঠানগুলোতে সিরিয়াস নিউজ বাদ দিয়ে তুলনামূলক হালকা ও বিনোদনধর্মী নিউজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এনবিসির ‘ডেটলাইন’, সিবিএস’র ‘৪৮ আওয়ারস’, এবিসির ‘২০-২০’ অনুষ্ঠানগুলো এখন ট্যাবলয়েড টিভি অনুষ্ঠানে পারিণত হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অপরাধ, মামলা, অদ্ভুত ঘটনার রগরগে বর্ণনা দেওয়া হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম সিবিএস’র ‘৬০ মিনিটস’। রোববার সন্ধ্যায় প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটির দর্শকসংখ্যা ১১ থেকে ১২ মিলিয়ন।

পিউ রিসার্চে’র তথ্যানুসারে সম্প্রতি কয়েকবছরে সিবিএস, এনবিসিএবিসি এ তিনটি টিভি চ্যানেলই ব্যয় কমাতে সাংবাদিকের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। সংবাদের জন্য তাদের বাৎসরিক বাজেটও জনসম্মুখে প্রকাশ করে না এ তিন টিভি চ্যানেল। তবে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তার ওপর ভিত্তি করে পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১১ সালে প্রকাশিত এক তথ্য অনুসারে, ১৯৮০’র দশকে এ তিনটি চ্যানেলের নিউজরুমের আকার যেরকম ছিল, এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বড় বড় টিভি চ্যানেলগুলোও তাদের সাংবাদিকদের ছাঁটাই করেছে। খবর, ছবি, ভিডিওর জন্য তারা তাদের স্থানীয় টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

ইউনিভিশন কিংবা টেলিমুন্ডোর মতো স্প্যানিশ ভাষার টিভি চ্যানেলগুলো মূলত অপেরা ও ভ্যারাইটি শো প্রচার করত। তারাও এখন সপ্তাহে একদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এবিসি, এনবিসি, সিবিএস এর সমমানের সংবাদ অনুষ্ঠান প্রচার করে। তাদের এ সংবাদ অনুষ্ঠানও উল্লেখযোগ্য দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে।

২০১৪ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য বলছে, প্রাইম টাইমে সিএনএন, ফক্স নিউজ এবং এমএসএনবিসির মোট দর্শক সংখ্যা তিন মিলিয়নেরও নিচে নেমে এসেছে এবং দিনের বেলায় এ দর্শকসংখ্যা ২ মিলিয়নেরও কম।

২০১৩ সালের শেষ দিকে ইউনিভিশন এবং ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি মিলে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ ও ইংরেজি ভাষাভাষী হিস্পানিকদের জন্য ফিউশন নামে নতুন একটি টিভি চ্যানেল চালু করে। ইউনিভিশনের সংবাদ অনুষ্ঠান ‘নটিসিয়াস ইউনিভিশন’ এবং ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির চ্যানেল এবিসির সংবাদ বিভাগ যৌথভাবে ফিউশন টিভির জন্য সংবাদ, বিশ্লেষণ, লাইফস্টাইল, পপ সংস্কৃতি, ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ এবং বিনোদন কন্টেন্টের মিশ্রণে একটি অনুষ্ঠান তৈরি করে।  

ক্যাবল নিউজ চ্যানেলের দর্শকরা এখনও সাক্ষাতকার, বর্ণনা এবং মতামতভিত্তিক সংবাদ অনুষ্ঠানই বেশি দেখছেন, সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান সেই তুলনায় কম দেখছেন। ২০১২ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে বলা হয়েছে, টিভিগুলো তাদের সংবাদ প্রচার সময়ের ৬৩ শতাংশই শুধু বর্ণনা ও মতামত প্রচার করেছে, বাকী ৩৭ শতাংশ সময় সরাসরি রিপোর্টিং প্রচার করেছে। শুধু সিএনএন এ রীতি ভেঙে দিচ্ছে। আমেরিকার অন্য যেকোনো ব্রডকাস্টারের চেয়ে সিএনএন এর বিদেশ ব্যুরো সবচেয়ে বেশি। চ্যানেলটি এখন বেশি করে ব্রেকিং নিউজ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচারের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।  পিউ’র তথ্যমতো এ তিনটি নিউজ চ্যানেলের মধ্যে সিএনএন-ই সবচেয়ে বেশি সংবাদ প্রচার করেছে। এরপর আছে ফক্স নিউজএমএসএনবিসি এ তিনটির মধ্যে সবচেয়ে কম খবর প্রচার করেছে।

এমএসনবিসি বামপন্থী সংবাদ ও মতামতের জন্য বিখ্যাত। ফক্স নিউজ বিখ্যাত ডানপন্থী ধারার জন্য। বাম ও ডানপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শী দর্শকদের উদ্দেশ্য করে আরও যেসব টিভি চ্যানেল চালু হয়েছিল, তারা বেশি সুবিধা না করতে পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন কারেন্ট টিভির মালিকানা কিনেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আল গোর। কিন্তু টিকতে না পেরে তার চ্যানেলের স্পেস আল জাজিরার কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি।

মূল তিনটি সংবাদ চ্যানেল (সিএনএন, এমএসনবিসি, ফক্স নিউজ) ছাড়াও আরও কিছু কিছু টিভি চ্যানেল বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। যেমন সিএনবিসি, ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ক, ব্লুমবার্গ টিভি অর্থনীতির খবর দিয়ে এবং খেলাধুলার জন্য ইএসপিএন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে।