কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হতাশা একজন মানুষের মাঝে প্রবল একাকীত্ববোধ তৈরি করে দেয়। ছবি: নূর।

হতাশাকে পাশ কাটিয়ে পা বাড়ান আনন্দের পথে

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:২৫
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:২৫

(প্রিয়.কম) কোন সন্দেহ নেই যে ‘হতাশা’ খুবই জটিল এবং কঠিন একটি মানসিক সমস্যা। ব্রেইন সায়েন্টিস্ট এবং মনোবিজ্ঞানীরা হতাশার কারণ নিয়ে কখনো-সখনো বিতর্কেও মেতে ওঠেন। তাদের মতে হতাশা মস্তিষ্কের কেমিক্যাল অসামঞ্জস্যতার ফলে তৈরি হয়ে থাকে। তবে এই বিতর্কের চাইতেও বেশি বিতর্ক রয়েছে এর চিকিৎসা নিয়ে। মনোবিজ্ঞানীদের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ কিছু সময়ে হতাশা কাটাতে একেবারেই কোন কাজ করে না। সবচাইতে ভীতিকর কথা হলো, দীর্ঘ সময় ব্যাপী অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ খাওয়ার ফলে একটা সময়ে এই সকল ওষুধ না খেয়ে থাকা একেবারেই অসম্ভব হয় ওঠে। যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ ‘সেরোটোনিন সিনড্রোম’ এবং অন্যান্য সমস্যা সমূহ দেখা দিতে শুরু করে।

আপনি কি জানতে চান কীভাবে নিজের হতাশাকে কমাতে পারবেন কিংবা হতাশার সময়গুলোতে কোন কাজগুলো করলে হতাশাভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে? তবে জেনে নিন চমৎকার কিছু উপায় যা সাহায্য করবে মানসিক হতাশাভাব কাটিয়ে উৎফুল্লভাব তৈরি করতে।

নাচার চেষ্টা করুন

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোবায়োলজি ডিপার্ট্মেন্ট জানায়, “বল রুম ড্যান্সিং, ব্রেক ড্যান্স অথবা লাইন ড্যান্সিং শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও, নাচ মস্তিষ্কের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে যা পারকিনসন্স রোগের ক্ষেত্রে উপকারী।“ এক্ষেত্রে বলাই যায়, নাচ হতাশা কাটাতেও খুব ভালো কাজ করে থাকবে।

শরীরচর্চা করার চেষ্টা করুন

শরীরচর্চা মানুষের হৃদযন্ত্রের রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়, যেটা হৃদস্বাস্থ্যের জন্যে দারুণ উপকারী। এছাড়াও, শরীরচর্চার মাধ্যমে ‘এন্ড্রোফিন’ নিঃসৃত হয়। যাকে বলা হয়ে থাকে ‘অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট হরমোন।’  একইসাথে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ নিউরোজেনেসিস এর উন্নতি সাধিত করে থাকে। যা মস্তিষ্কের কোষ নতুনভাবে তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। কথিত রয়েছে, "মনের ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলার অন্যতম ভালো উপায় হলো শরীরচর্চা করা। ক্ষোভ যত বেশী শরীরচর্চা তত বেশী ভালো হবে। শরীরচর্চা শেষ হয়ে গেলে দেখা যাবে ক্ষোভ অনেক কমে গিয়েছে এবং মানসিকভাবে অনেক বেশী প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে।"

ভ্রমণ করতে বেরিয়ে পড়ুন

অনেকের জন্যে ভ্রমণের ব্যাপারটি কঠিন মনে হলেও আদতে এটা অতোটাও কঠিন কোন ব্যাপার নয়। ভ্রমণ মানে সবসময়ই যে অনেক দূরের কোন দেশে, শহরে, সমুদ্র কিংবা পাহাড়ে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই একেবারেই। বাসার পাশেই পরিচিত কিংবা অপরিচিত কোন রাস্তায়, এলাকায়, মার্কেটে কিংবা রেস্টুরেন্টে ঘুরে আসা যেতে পারে। তবে কারোর সাথে নয়, একা বের হতে হবে। এতে করে মানসিক প্রশান্তি বেশী কাজ করে।

জীবনযাপনের ধারায় পরিবর্তন আনুন

সেন্টার ফল ডিসিস কন্ট্রোল এন্ড প্রভেনশন এর একজন প্রাক্তন এপিডেমিলোজিস্ট জানান, "ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন থেরাপিতে নিয়মিত ভিটামিন-বি গ্রহণ করলে সেটা নিউরোট্রান্সমিটারে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধের মতোই কাজ করে থাকে। একইসাথে চিনি গ্রহণ করার মাত্রা কমিয়ে দিলে ও গ্লুটেনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা বাদ দিলেই সেটা মস্তিষ্কের উপরে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। আরও দারুণ একটি ব্যাপার হলো  হতাশা অনেকক্ষেত্রে ভালো হয়ে যায় এমন কিছু জিনিসপত্র কেনাকাতা করলে, যেগুলো সেলিব্রিটিরা ব্যবহার করেছেন বলে টিভি অনুষ্ঠানে দেখিয়েছে অথবা ডাক্তাররা কিনতে বলেছেন।" দেখাই যাচ্ছে, নিজের প্রতিদিনের জীবনযাপনের ধরনে খুব ছোটখাটো ইতিবাচক পরিবর্তন জীবনের উপরে অনেকখানি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে থাকে। সেক্ষেত্রে নিজের হতাশার স্থানে ভালোলাগা ভাব তৈরি করতে চাইলে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার মাঝে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।

সেটাই করুন যেটা আপনাকে আনন্দ দেয়

জীবনে আপনার জন্য সেটাই গুরুত্বপূর্ণ যেটা আপনাকে আনন্দিত রাখে, যে কাজগুলো আপনাকে আনন্দ দেয়। তাই সেটাই করুন যেটা আপনার ভেতরের হতাশাভাব গুলোকে দূর করে আনন্দিত হতে সাহায্য করবে। যদি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালোবেসে থাকেন তবে সেটাই করুন। যদি রান্না করতে পছন্দ করেন তবে মজাদার খাবার রান্না করুন। মূল কথা, সেই কাজটাকেই নিজের সঙ্গী করে নিতে হবে যেটা মানসিক বিষাদ দূর করতে সাহায্য করবে।

একাকীত্ব দূর করতে চেষ্টা করুন

জনপ্রিয় ইউটিউব ব্লগার লিলি সিং বলেছেন, "হতাশা বোধ করার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে একা বোধ করা। সেটা হতে পারে সেই একাকীত্ব এক মিলিয়ন মানুষের মাঝে থাকার পরেও! " ঠিক এই ব্যাপারটাই হতাশার ক্ষেত্রে অনেক বেশী সত্য। হাজার মানুষের মাঝে থাকলেও নিজেকে কখনো কখনো খুব একাকী মনে হতে থাকে। তাই এমন কিছু প্রিয় মানুষকে জীবনের সঙ্গী করে নিতে হবে, যাদের সাথে সময় কাটালে বা যাদের সাথে থাকলে নিজেকে কখনো একাকী মনে হবে না।

নির্দিষ্ট, আনন্দময় এবং সাফল্যপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে নিজের জন্য

নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কতখানি ভাবেন বা কতটা চিন্তা করেন আপনি। অথবা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কীভাবে পরিকল্পনা করেছেন আপনি? রোলো মে বলেন, "হতাশা হলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান বাধা।" কথাটা কিন্তু খুব সত্যি। সেক্ষেত্রে নিজের হতাশাগুলোকে একপাশে সরিয়ে রেখে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেইরূপ কাজ করা শুরু করতে হবে।

কিছু ভালো মানুষকে নিজের জীবনের সঙ্গী করে নিন

এক জীবনে প্রচুর মানুষের সাথে পরিচয় হবে। তাদের মাঝে সকলেই কিন্তু ভালো হবেন না! তবে কেউ হবেন খুব ভালো সঙ্গী, যারা একজন মানুষের জীবনে খুব দারুণভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করেন। এমন মানুষগুলোকে চিনতে হবে, তাদের সাথে সবসময় চলতে হবে এবং নিজের জীবনে তাদের গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

মেনে নিতে হবে- আনন্দ এবং দুঃখ দুটোই জীবনের অংশ

জীবন কখন সমান্তরালভাবে চলবে না। তার মাঝে উঁচু-নিচু পথ থাকবে এবং সেগুলোকে পাড়িও দিতে হবে। আনন্দ এবং দুঃখ এই দুইটি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সেটাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। জ্যানেট ফিচ বলেছেন, "হতাশা, কষ্ট এবং ক্ষোভ এ সকল কিছুই মানুষ জীবনের একটা অংশ।"

সূত্র: EWAO

প্রিয় লাইফ/ আর বি