কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর এবং মোবাইল ফোন বিভাগের প্রধান এস এম রেজওয়ান আলম। ছবি: প্রিয়.কম

শুধু বিক্রির ক্ষেত্রে নয়, গুণগত মানেও সবার উপরে থাকতে চায় ওয়ালটন

রাকিবুল হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:০৯
আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:০৯

(প্রিয়.কম) দেশে মোবাইল কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আর এ কাজে একধাপ এগিয়ে রয়েছে দেশীয় ব্র‌্যান্ড ওয়ালটন। সম্প্রতি গাজীপুরের চন্দ্রায় মোবাইল উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন করেছে ওয়ালটন। এর মাত্র এক মাসের মাথায় দেশের বাজারে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত স্মার্টফোন নিয়ে আসছে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানটি। 

দেশেই বিভিন্ন পণ্য যেমন টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, হোম অ‌্যাপ্লায়েন্স, মোবাইল ফোন ইত‌্যাদি উৎপাদন করছে ওয়ালটন। এজন‌্য বিশাল জায়গাজুড়ে আলাদা আলাদা ম‌্যানুফ‌্যাকচারিং প্লান্ট গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু ওয়ালটনের মোবাইল ফোন ম‌্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টই গড়ে তোলা হয়েছে ২ লাখ বর্গফুটের বেশি জায়গাজুড়ে। ওয়ালটনের মোবাইল কারখানার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রিয়.টেক'র সঙ্গে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর এবং মোবাইল ফোন বিভাগের প্রধান এস এম রেজওয়ান আলমের

আলপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন ওয়ালটনের মোবাইল ফোন এবং উৎপাদন কারখানার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চিত্র-

ওয়ালটনের মোবাইল কারখানায় বিনিয়োগ কত ?

গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের যে মোবাইল ফোন কারখানা রয়েছে, সেখানে অনেকগুলো সহযোগী প্লান্ট রয়েছে। এসব প্লান্ট শুধুমাত্র মোবাইল উৎপাদনের জন্য নয়। সেখানে অন‌্যান‌্য পণ‌্যও উৎপাদন হয়। যেমন ইলেকট্রনিক্স প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বা পিসিবি। এখানে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি টেলিভিশন, রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি পণ্যের মাদারবোর্ড তৈরি হয়। এসব প্লান্ট ছাড়া শুধু ওয়ালটনের মোবাইল প্লান্টেই ১০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে।

ওয়ালটনের মোবাইল কারখানায় কর্মসংস্থান কেমন?

প্রাথমিকভাবে আমরা মোবাইল কারখানায় চারটি প্রোডাকশন লাইনে কাজ শুরু করেছি। শিগগিরই আরও দুটি প্রোডাকশন লাইন যুক্ত হচ্ছে। এখানে বর্তমানে কাজ করছে আড়াইশ’ কর্মী। এছাড়া আগামী বছরের মধ্যে আমাদের ইচ্ছে রয়েছে প্রোডাকশন লাইন ১০টিতে উন্নীত করা। তখন দু’হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে।

ইনোভেশনের কাজ কীভাবে হচ্ছে?

আমাদের তিনটি  রিসার্চ অ্যান্ড মনিটরিং ডিভিশন (আরএমডি) টিম রয়েছে। এর মধ্যে চীনে একটি এবং দেশে দুইটি। সম্প্রতি আমাদের প্রধান কার্যালয়ে নতুন একটি আরএমডি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের কাছে রিসার্চের জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজি ও মেশিনারিজ দেয়া হয়েছে। আমরা দাবি করতেই পারি আমাদের আরএমডি লেভেল আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আরএমডি লেভেলের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।

কারখানার কর্মীদের প্রশিক্ষনের বিষয়ে বলুন...

আমাদের দেশে এ কাজে যথেষ্ট পরিমাণ যোগ্য লোক রয়েছে।  আমরা যদি আমাদের মোবাইল বিভাগকে দুইভাগে ভাগ করি তাহলে পাওয়া যাবে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বিভাগ। হার্ডওয়্যারের কাজটি যে আমাদের জন্য একেবারেই নতুন তা কিন্তু নয়।  এ ছাড়া হার্ডওয়্যারের কাজে আমাদের পাঁচ-সাত বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রচুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা চীনে এবং ইউরোপে আমাদের ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়েছি। আমাদের যখন একটি নতুন ইউনিট শুরু হয় তখন আমরা একটি টিম প্রস্তুত করি। সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য আমরা ওই টিমকে সেই দেশে পাঠাই। পরবর্তী ধাপে যখন আমরা মেশিনারিজগুলো নিয়ে আসি, তখন ওই দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আমাদের দেশে আসেন। তারা আমাদের কর্মীদের ওই মেশিনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। আমরা যত দিন পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ না হই, ততদিন পর্যন্ত তারা আমাদের দেশে অবস্থান করেন। পরবর্তীতেও যে কোনো প্রয়োজনে তারা আমাদের সাপোর্ট দেন। এভাবে কাজ করছি আমরা।

ওয়ালটনের কারখানা থেকে কী পরিমাণ মোবাইল উৎপাদন হচ্ছে বা হবে?

এই মুহূর্তে আমরা ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছি। আমাদের টার্গেট আগামী বছরের প্রথম ছয়মাসের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ লাখ স্মার্টফোন উৎপাদন করা। সেখান থেকে পরবর্তী বছরের জুনের মধ্যে এক কোটি মোবাইল উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা আছে। এর মধ্যে ৩০ লাখ হবে স্মার্টফোন এবং বাকি ৭০ লাখ ফিচার ফোন।

কোন শ্রেণীর ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ওয়ালটন মোবাইল উৎপাদন করছে?

দেশের সব শ্রেণীর মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকতে চায় ওয়ালটন। তবে দেশে ওয়ালটনের মোবাইল কারখানায় এখন যেসব সেট উৎপাদন করা হচ্ছে, সেগুলো মূলত মধ্য ও নিম্ন আয়ের লোকদের টার্গেট করে তৈরি হচ্ছে। আমাদের বর্তমান টার্গেট ১০ হাজার টাকার নিচে স্মার্টফোন তৈরি করা। তবে ২০১৮ এর পর থেকে আমাদের টার্গেট উচ্চ-মধ্যবিত্ত লোকদের জন্য মোবাইল উৎপাদন করা।

আমাদের টার্গেট একটি করে পদক্ষেপ নিয়ে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের আশা রয়েছে ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা মোবাইলের বডি তৈরি করব। এছাড়া ব্যাটারি, চার্জার, হেডফোন, ক্যাবল তৈরিরও লক্ষ্যও রয়েছে।

দেশে মোবাইল উৎপাদনে কোন বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন?

দেশের বাজারে আমরা যে বিষয়টি বর্তমানে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি তা হলো দক্ষ জনবল তৈরি করা। এছাড়া, সহায়ক শুল্কনীতি। বর্তমান বাজেটে মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনায় আমরা কাজ করতে পারছি। তবে শুল্কের এই হারও কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। কারণ আমাদের নির্ধারিত বাজেটকে মাথায় রেখে সেট উৎপাদন করতে হবে। শুরুর দিকে কারখানা স্থাপন এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে বিপুল বিনিয়োগ থাকায় উৎপাদন ব‌্যায় বেশি হবে। ফলে সম্পূর্ণ মোবাইল সেট আমদানি এবং দেশে তৈরি মোবাইল সেটের মধ‌্যে শুল্কের যেকুটু পার্থক‌্য রয়েছে, তা আর থাকবে না। এতে উৎপাদন ব‌্যয় বাড়বে। আমরা আশা করব সরকার দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা অব‌্যাহত রাখবে।

গ্রাহকদের হাতে ওয়ালটনের মোবাইল পৌঁছানোর একাল-সেকাল...

আগে আমাদের পণ্যগুলো বাইরে থেকে সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে আসতো। এরপর পণ্যগুলোর কোয়ালিটি পরীক্ষা করার পর বাজারে ছাড়া হতো। আর এখন আমরা মেটালিং করছি। অর্থাৎ মোবাইলের যন্ত্রাংশ খণ্ড খণ্ড আকারে দেশে নিয়ে দেশে মোবাইল প্রস্তুত করছি। আমাদের পিসিবি প্লান্টটি ট্রায়ালে রয়েছে। হাউজিং প্লান্ট ট্রায়ালে রয়েছে। ব্যাটারি প্লান্টের মেশিনারিজ মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সিকেডি পদ্ধতিতে যেতে পারব। 

দেশের মোবাইল বাজারে বিদেশি ব্র‌্যান্ডগুলোর সঙ্গে কী ওয়ালটন প্রতিযোগিতা করতে পারবে?

আমাদের দেশের মোবাইলের বাজারটি এখন অনেক বড়। বিদেশি অনেক ব্র‌্যান্ড এলেও কিন্তু স্থানীয় একটি ব্র‌্যান্ড শীর্ষে আছে। বাইরে থেকে যারা আমাদের বাজারে আসছে, তারা যে আমাদের বাজারটি দখল করে ফেলেছে, তা কিন্তু নয়। প্রতি মাসেই মোবাইলের এই মার্কেট বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা লোকসানে নেই। এ ছাড়া বাজার রিকভার করার ক্ষমতাও আমাদের রয়েছে। কারণ মানুষ চায় কম দামে কোয়ালিটি সম্পন্ন মোবাইল। 

দেশে একসময় অনেক নামি দামি ব্র‌্যান্ড ছিল। সেসব ব্র‌্যান্ড হয়তো আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী, কিন্তু তারা আমাদের দেশে টিকে থাকতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতেই পারি দেশের বাজারে আমরা টিকে থাকব ভালোভাবেই।

মোবাইল রপ্তানির বিষয়ে কী ভাবছেন?

ওয়ালটনের মোবাইল বাদে বিভিন্ন পণ্য বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ২২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে ওইসব দেশে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত মোবাইল রপ্তানিতে আমাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। কারণ ওইসব দেশে ইতোমধ্যে আমাদের সেলস নেটওয়ার্ক এবং বিক্রয়োত্তর সেবা চালু রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে ওয়ালটনের অন্যান্য পণ্যগুলো দেশগুলোতে প্রমোট করা। আর এই রপ্তানির কাজ আগামী বছরের মাঝামাঝির দিকে শুরু করতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস।

দেশের মানুষ কেন ওয়ালটনের মোবাইল কিনবে?

দেশীয় ব্র‌্যান্ডের পণ‌্য ক্রয়ের বড় সুবিধা হলো, ক্রেতা সহজেই তার পণ‌্য সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা পান। এ ছাড়া পণ্যে কোনো সমস্যা থাকলে এর সমাধানও দ্রুত পাওয়া যায়। স্পেয়ার পার্টস সহজলভ‌্য থাকে। বিক্রয়োত্তর সেবা সহজেই মেলে। এছাড়া আরও বড় করে চিন্তা করলে দেশীয় পণ‌্য ক্রয়ে দেশের অর্থনৈতিক খাত উপকৃত হয়। দেশের টাকা দেশেই থাকে। কর্মসংস্থান বাড়ে। 

ওয়ালটন শুরু থেকেই সাশ্রয়ী দামে মানসম্মত হ্যান্ডসেট বাজারজাত করে আসছে। গুণগত মানের পাশাপাশি অত্যাধুনিক ফিচার ও অন্যান্য সুবিধার জন্য বাজারে স্থানীয় মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলে নিয়েছে। ওয়ালটন হ্যান্ডসেট কিস্তিতে কেনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমাদের রয়েছে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা। কারণ সারা দেশে আমাদের রয়েছে ৭০টিরও বেশি সার্ভিস সেন্টার। এছাড়া দেশীয় ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড হিসেবেও ওয়ালটন বাংলাদেশী ক্রেতাদের কাছে এখন আস্থার প্রতীক। সেই বিশ্বাস ও আস্থার ওপর নির্ভর করেই ক্রেতারা ওয়ালটনের মোবাইল কেনেন।

আগামি পাঁচ বছরে মোবাইল কোম্পানি হিসেবে ওয়ালটন নিজেকে কোথায় দেখতে চায়?

আমাদের প্রথম টার্গেট দেশের বাজারে আমরা মার্কেট লিডার হবো। শুধু বিক্রির ক্ষেত্রে না, আমরা কোয়ালিটি ও স্ট্যান্ডার্ডেও লিডার হবো। মোবাইলের নাম বললেই মানুষ যেন ওয়ালটনের নাম প্রথমে উচ্চারণ করে। ওয়ালটনের মোবাইল কিনে যেন মানুষ নিজের মধ্যে গর্ব অনুভব করে। 

প্রিয় টেক/মিজান