কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ওয়ালটনকে হাই-টেক পার্ক হিসেবে মৌখিক ঘোষণা। ছবি: প্রিয়.কম

ওয়ালটনকে হাই-টেক পার্ক মৌখিক ঘোষণা

রাকিবুল হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১১
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১১

(প্রিয়.কম) দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনকে হাই-টেক পার্ক হিসেবে মৌখিক ঘোষণা করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ১৮ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন কম্পিউটার কারখানার উদ্বোধন শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেশের প্রথম কম্পিউটার কারখানার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।

মোস্তাফা জব্বার জানান, তিনি মৌখিক হিসেবে এ ঘোষণা দিলেও ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাতে-কলমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, একটি হাই-টেক পার্কে যা যা থাকা দরকার, তার সমস্ত কিছুই ওয়ালটনের রয়েছে। তারা আবেদন করলে হাই-টেক পার্কের সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

ওয়ালটন কারখানার ব্যাপকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওয়ালটন কারখানা এত বড় যে আমি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যাই। এত বড় প্রতিষ্ঠান আমার চোখে পড়ে নাই।’

কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ালটন সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তারা কম্প্রেশন কারখানা স্থাপন করেছে। বিশ্বের ৬টি কম্প্রেশন কারখানার মধ্যে আমাদের এটি একটি।’

আশা ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ালটন শুধু দেশের চাহিদা মেটাবে না, বাইরের চাহিদাও মেটাবে। ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটর যেমন কারখানা থেকে ট্রাকে করে চালান হয়, তেমনি আমাদের কম্পিউটারও চালান হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর জটিলতম বস্তু মাদারবোর্ড, যে মাদারবোর্ড না দিলে আমার ডিজিটাল ডিভাইস কাজ করে না এই মাদারবোর্ড আমরা বানাচ্ছি। ওয়ালটন কারখানায় দুইস্তর বিশিষ্ট মাদারবোর্ড তৈরি হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যেই ওয়ালটন মাল্টিলেয়্যার মাদারবোর্ড তৈরিসহ কম্পিউটারের সমস্ত কিছুই যেমন র‌্যাম, এএসডি ডিভাইসেস ইত্যাদি নিজেরাই তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এটা খুবই আনন্দের সংবাদ।’

‘আরও গর্বের বিষয় হচ্ছে দুই চারজন বিদেশি যারা আমাদের টেকনোলজি দেওয়ার সহায়তা করছে, বাকি সবগুলো মানুষ আমাদের ছেলেমেয়ে, আমাদের সন্তান। আমি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি মেয়ের কাছে তাকিয়েছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করে দেখলাম, সে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করা একটি মেয়ে। ইন্টারমেডিয়েট পাশ করা একটি মেয়ে অ্যাসেম্বলিংয়ে কাজ করছে, এ থেকে বোঝায় যায় ওয়ালটন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করছে’, যোগ করেন মোস্তফা জব্বার।

দেশীয় সফটওয়্যার সেবা খাতে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশীয় সেবাখাত, বাংলাদেশের কম্পিউটার এই জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপোষ করা হবে না।’

বিদেশি প্রযুক্তিপণ্যে শুল্ক আরোপ করতে আন্দোলন করা হবে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমি সেই মানুষ যে শুল্কমুক্ত কম্পিউটারের জন্য আন্দোলন করেছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি- এখন শুল্ক আরোপ করার জন্য আন্দোলন করব। কারণ আমার দেশের শিল্পকে বাঁচাতে হবে। আমি ১ আর ৫-এর মধ্যে আমার দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে পারব না।’

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বাংলাদেশে কম্পিউটার কারখানা স্থাপন করেছে ওয়ালটন। এটি একটি সাহসী উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’

সফটওয়্যার খাতের মতো হার্ডওয়্যার খাতেও সরকারি সহযোগিতা প্রদানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু সাহসী উদ্যোগ থাকলেই চলবে না, তার সাথে দরকার সরকারের সহযোগিতা। এ দুটি মিলেই আসবে সফলতা। ওয়ালটনে বিভিন্ন প্রোডাকশন লাইন ঘুরে দেখলাম, এ ধরনের অত্যাধুনিক প্রোডাকশন ও অ্যাসেম্বিলিং লাইন আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। ওয়ালটন এ রকম অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।’

ওয়ালটন সূত্র জানায়, ওয়ালটনের কম্পিউটার কারখানায় এরই মধ্যে ট্রায়াল প্রোডাকশন চলছে। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজে সুবিশাল এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এই কারখানা। এখানে রয়েছে ল্যাপটপ ও কম্পিউটার ডিজাইন ডেভেলপ, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ, মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ও টেস্টিং ল্যাব। স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বের লেটেস্ট জাপানি ও জার্মান প্রযুক্তির মেশিনারিজ।

ইতোমধ্যে এসএমটি (সার্ফেস মাউন্টিং টেকনোলজি) সিস্টেমের মাধ্যমে পিসিবির (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড) উপর অতি নিখুঁতভাবে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পিন বসিয়ে উচ্চ গুণগতমানের পিসিবিএ বা মাদারবোর্ড তৈরি শুরু হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পর্যাপ্ত মজুদ। এ ছাড়া ওয়ালটন কম্পিউটার কারখানায় কর্মসংস্থান হবে এক হাজার লোকের।

প্রাথমিকভাবে এই কারখানায় মাসে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার ইউনিট ল্যাপটপ, ৩০ হাজার ইউনিট ডেস্কটপ এবং আরও ৩০ হাজার ইউনিট মনিটর। পর্যায়ক্রমে কম্পিউটারের অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজসহ পেন ড্রাইভ, কিবোর্ড ও মাউস উৎপাদনে যাবে ওয়ালটন।

ওয়ালটনের এই কারখানায় তৈরি হবে ইনটেলের সর্বশেষ প্রজন্মের প্রসেসরযুক্ত ল্যাপটপ। উৎপাদন হবে সাশ্রয়ী মূল‌্যের বিভিন্ন মডেলের ওয়ালটন ডেস্কটপ ও মনিটর।

প্রিয় টেক/আজাদ চৌধুরী/শান্ত