কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

খাদ্য সংকট আর নিপীড়নের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা। ছবি: ফোকাস বাংলা

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সংকটের রিপোর্টও চেপে গিয়েছিল জাতিসংঘ

জাহিদুল ইসলাম জন
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৩৬
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৩৬

(প্রিয়.কম) রোহিঙ্গা নিপীড়নের আগাম তথ্য চেপে যাওয়ার কথা জানার পর এবারে জানা গেল তাদের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক একটি প্রতিবেদনও প্রত্যাহার করে নিয়েছিল জাতিসংঘের একটি সংস্থা। মিয়ানমার সরকার যৌথভাবে একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশের আশ্বাস দিলে তা প্রত্যাহার করে নেয় ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, গত আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর ওই সংশোধনের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) গত জুলাই মাসে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল পাঁচ বছরের কম বয়সী ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মারাত্মক খাদ্য সংকটের মুখে দ্রুত ওজন হারাচ্ছে।

সেসময় ছয় পাতার ওই রিপোর্ট প্রত্যাহার করে নিয়ে সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, মিয়ানমার সরকার এবং ডব্লিউএফপি একটি ‘সংশোধিত সংস্করণ’ প্রকাশ করতে যৌথভাবে কাজ করবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে অভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় ডব্লিউএফপি'র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে তা সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়া রিপোর্ট আর কোথাও ব্যবহৃত হবে না বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সরকারকে যথেষ্ট চাপে না রাখায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্যে খাদ্য বিষয়ক এই রিপোর্ট প্রত্যাহার করে নেওয়ার খবর জানা গেল।

গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরুর পর পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ থাকলেও মিয়ানমার সরকার তা অস্বীকার করে আসছে। 

রোহিঙ্গা নিপীড়নের আগাম তথ্য চেপে যাওয়ার পর চলতি মাসের শেষেই দেশটিতে কর্মরত আবাসিক প্রতিনিধি রেনেসো লক ডেসালিয়েনকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। চলমান সংকটের মাঝপথে তাকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হলেও তার বিকল্প কারো নাম ঘোষণা করেনি সংস্থাটি।

রিপোর্ট প্রত্যাহারের বিষয়ে গার্ডিয়ানের প্রশ্নের জবাবে ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, যৌথভাবে সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করতে দেশটির সরকারের অনুরোধে সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে এই রিপোর্ট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ইমেইলের মাধ্যমে সংস্থাটি দাবি করেছে, পরিস্থিতির ব্যাপকতায় সরকারসহ সব সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিল তারা।

তবে আগস্টে অভিযান শুরুর পর সেই সংশোধিত সংস্করণকাজ থেমে যায় বলেও জানানো হয়েছে ওই ই-মেইলে।

মিয়ানমারের জাতিসংঘ কার্যালয়ের একজন পরামর্শক গার্ডিয়ান-কে জানিয়েছেন, প্রত্যাহার করে নেওয়া ওই রিপোর্ট মনোযোগ আকর্ষণ করায় ডব্লিউএফপি'র কর্মকর্তারা ভীত হয়ে পড়েছেন।

আর ঘনিষ্ট একটি সূত্র গার্ডিয়ান-কে জানিয়েছে, মানবিক খাদ্য সহায়তার চেয়ে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল ডব্লিউএফপি। রাখাইনে যাওয়ার সরকারি অনুমতি রয়েছে- দাতাদের এমন তথ্য দিয়ে আকৃষ্ট করতেই সংস্থাটি এই কাজ করেছিল বলেও জানায় ওই সূত্রটি।

প্রত্যাহার করে নেওয়া ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, দুই লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন। সতর্ক করে আরও বলা হয়েছিল, বাজারে খাবার কেনা আর ফসল বিক্রিতেও নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে পড়ছে রোহিঙ্গারা।

প্রিয় সংবাদ/শান্ত