কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কোন কাজ করতে আপনার সবচেয়ে ভয় লাগে? সেটি দিয়েই দিনের শুরু করুন। ছবি: নূর, প্রিয়.কম

৮টি উপায়ে জীবনে নিয়ে আসুন শৃঙ্খলা

বুশরা আমিন তুবা
ফিচার লেখক, প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:১৫
আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:১৫

(প্রিয়.কম) সাফল্যের চুড়ায় পৌছতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো, সুশৃঙ্খল বা নিয়মানুবর্তী হওয়া। এটি ছাড়া আপনি কোনভাবেই আকাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছতে পারবেন না। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও কিছু সময়ের জন্য যাবতীয় সকল কাজ নিয়মতান্ত্রিকভাবে করার চেষ্টা করে দেখুন তো। প্রথম কিছুদিন কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে সবকিছু আপনার আয়ত্বে চলে আসবে নিশ্চিত। এই অভ্যাস আয়ত্ত্বে আনা বেশ চ্যালেঞ্জিং বটে!

ভড়কে গেলেন? না,দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আজকের আয়োজনে আপনাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে এমন কয়েকটি উপায়, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি বেশ দারুণভাবেই নিয়মানুবর্তি হয়ে বেড়ে উঠতে পারবেন এবং সাফল্য আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-

প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোন

আপনি যদি সত্যিই আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে চান তবে নিয়ম মেনে সকল কাজ সম্পন্ন করার প্রতি ওয়াদাবদ্ধ হোন। বেশ সহজ এটি। ব্যক্তিগত সকল কাজের মধ্যে নিয়মের সংমিশ্রণ ঘটান। সকল অভ্যাস একটি সুন্দর উপায়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ করুন। শারীরিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অবসর, আবেগ এসব কিছুর মধ্যে ইতিবাচকতা আনার চেষ্টা করুন। শুনতে বেশ কঠিন হলেও একবার শুরু করে দেখুন। আস্তে আস্তে সবকিছু অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

লক্ষ্যের দিকে পরিপূর্ণ মনোযোগ দিন

প্রত্যেকটি দিন শুরু করার পূর্বে কিংবা আগের রাতে ঘুমোতে যাবার আগে আপনার যতো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে সেগুলোর দিকে একবার করে চোখ বুলান। খেয়াল করবেন, সে সময়টা যেন আপনি নীরব পরিবেশে একান্তে পরিপূর্ণ মনোযোগ সঞ্চার করতে পারেন। এতে করে আপনি দিনের প্রধান কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারবেন। অবসর সময়ে মনের মধ্যে দৃশ্যপট তৈরি করুন যে কীভাবে কী কী করবেন। প্রতিটি দিন ইতিবাচক মানসিকতা দিয়েই শুরু করুন।

কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ করুন

দিনের সকল কাজের পরিকল্পনা করার সময়েই কোন কাজ আপনার জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেটি ঠিক করে ফেলুন। এতে করে আপনি অনেকটা হালকা বোধ করবেন। যে কাজটি অধিক জরুরী বলে মনে হচ্ছে আপনার কাছে সেটি দিনের প্রথমার্ধ্বেই সম্পন্ন করে ফেলুন। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সারদিন ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিরতি নিয়ে তৈরি করে ফেলুন। এতে করে আপনার অভ্যাসেও দারুণ এক ধরনের পরিবর্তন আসবে।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হলো পরবর্তী দিনের জন্যে নিজের মন ও শরীরকে তৈরি করা। মনোযোগ এবং কাজের সক্ষমতা তৈরির জন্য বিশ্রাম নেওয়ার কোন বিকল্প নেই। প্রতি রাতের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন যেটি অনুসরণ করলে আপনি সারাদিনের ধকল ও পরিশ্রম ধীরে ধীরে মুছে ফেলতে পারবেন। ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মন থেকে সারাদিনের চিন্তা-ভাবনা মুছে ফেলুন। পরবর্তী দিন সেটি অধিক জোর দিয়ে সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন বটে কিন্তু ঘুমকে অব্যাহতি দিয়ে নয়!

প্রতিরাতে ঘুমোতে যাবার পূর্বে জার্নাল কিংবা ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মানসিক ও শারীরিক যত দুশ্চিন্তা আছে সেগুলো সব ডাইরিতে টুকে রাখুন। এতে করে আপনি অযাচিত অনেক বিরক্তিকর চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন। নেতিবাচকতা আপনার নিকটে ভিড়তে পারবে না।

শক্তির জন্য খাদ্য গ্রহণ করুন

দিন শুরু করুন এমন প্রাতরাশ দিয়ে যেটি আমিষ এবং শর্করায় পরিপূর্ণ। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে ভারী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, তা না হলে কাজে পরিপূর্ণভাবে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। স্বাস্থ্যসম্মত ও সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না যেন!

অতিরিক্ত চিনি, ক্যাফেইন এবং নিকোটিন থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। এতে করে দিনভর আপনি বেশ শক্তি অনুভব করবেন। দিনের মাঝে মাঝে হালকা স্ন্যাক হিসেবে প্রোটিন বার, কাঠবাদাম খেতে পারেন।

ছোট ছোট কাজ করুন

নিয়মানুবর্তি হয়ে বেড়ে ওঠার একটি অন্যতম উপায় হলো ব্যক্তিগত ছোট ছোট কাজের মধ্যে নিয়ম-শৃংখলা নিয়ে আসা। যেমন- দিনের শুরুতেই বিছানা তৈরি করা, আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, গাড়ি পরিষ্কার রাখা, যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলা ইত্যাদি। এসব ছোটখাটো কাজে নিয়ম মেনে চললে বৃহৎ কাজের প্রতি আপনি অধিক মনোনিবেশ করতে পারবেন এবং সফল হবেন।

সিদ্ধান্তে অটল থাকুন

সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে শিখুন। আপনি যদি প্রত্যহ সকালে ব্যায়াম করতে চান তবে এর বাইরে চিন্তা করার কোন দরকার নেই। মনের মধ্যে কোন ধরনের দ্বিতীয় চিন্তা আনবেন না কোন বিষয়েই। একটি সিদ্ধান্ত নিন এবং সেটির প্রতিই অটুট থাকার চেষ্টা করুন।

এটি করতে না পারলে আপনার মধ্যে কোন শৃংখলাবোধ কাজ করবে না। আপনার মন আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু, তা কী জানেন? আপনার নিজেকেই এ যুদ্ধে লড়তে হবে এবং বিজয়ী হতে হবে। সুতরাং, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করুন এবং সফলতার মুকুট পরিধান করুন।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন

নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে আপনি যদি আশানুরুপ ফলাফল পান তবে নিজেকে পুরষ্কৃত করতে ভুলবেন না যেন। নিজের প্রতি সন্তুষ্ট ও গর্ববোধ করুন। কাছের মানুষদের সঙ্গে সাফল্যের কথা ভাগাভাগি করুন এবং সম্ভব হলে সকলকে নিমন্ত্রন জানিয়ে সময়টি দারুণভাবে উপভোগ করুন।

আপনি যা করছেন সেটি নিয়ে ভালো বোধ করুন। প্রতিবার আপনি যখন দেখবেন যে আপনি সফল, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিন। আপনার পেছনে যে বিষয়টি বৃহৎ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে সেটির পুনরাবৃত্তি করুন।

শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে হলে ‘এখনি করুন’ এ নীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে আপনাকে। মন যেন এর বাইরে কোন ধরনের আওয়াজ করতে না পারে সেদিকে পরিপূর্ণ দৃষ্টি দিন। প্রত্যেক দিনের শুরু শক্তি, সাহস, অনুপ্রেরণা ও ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে করুন।

কোন কাজ করতে আপনার সবচেয়ে ভয় লাগে? সেটি দিয়েই দিনের শুরু করুন। তাহলে বাকি কাজগুলো সতেজ ও ফুরফুরে মেজাজে সারতে পারবেন। সাফল্যের পথও আপনার জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে।

পড়লেন তো উপরোক্ত বিষয়গুলো? খুব কঠিন লাগলো কী? আসলে, ব্যাপারগুলো খুব সহজ। অপেক্ষা শুধু আপনার মনোনিবেশ করার এবং নিজের প্রতি পরিপূর্ণ যত্ন নেওয়ার। আজ থেকেই না হয় এ লক্ষ্য নিয়ে শুরু করুন পথ চলা। জীবনকে নিজের মতন সাজিয়ে-গুছিয়ে নিন। শুভকামনা রইলো আপনার জন্যে।

সূত্র: Entrepreneur

প্রিয় লাইফ/ কে এন দেয়া