কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রতিটি ভ্রমণের স্থানকে সেইভাবে পরিষ্কার রাখুন ঠিক যেভাবে আপনি এগুলোকে দেখতে চান। ছবি: সংগৃহীত

হয়ে উঠুন গ্রীন ট্রাভেলার, প্রকৃতিকে রক্ষা করুন নিজেই

খন্দকার মহিউদ্দিন
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১২:১০
আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১২:১০

(প্রিয়.কম) ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী এই সময়ে দেশের প্রতিটি জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোতেই প্রচুর ভিড় থাকে। এর কারণ হলো এই সময়ে শুরু হয় বনভোজন আর শিক্ষা সফরের মৌসুম। আর তাই এই সময়ে দেশের অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিটি জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোই ময়লা আর আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়। এর পিছনে কী কী কারণ থাকতে পারে?

- সচেতনতার অভাব। 

- সদিচ্ছার অভাব।

- তত্ত্বাবধানের অভাব।

- শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ভ্রমণস্থানগুলোর প্রায় প্রতিটিরই পরিবেশের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অভিযোগ করে থাকেন যারাই ভ্রমণে যান তাদের প্রত্যেকে। আর এদের মধ্যে প্রত্যেকেই আঙ্গুল তোলেন পর্যটন কর্পোরেশন, সরকার ও অন্যান্য ভ্রমণকারীদের দিকে। যদি সবাই এই রকম একে অপরের দিকে আঙ্গুল তোলে, যদি মেনেও নিই যে আপনি ব্যক্তিগতভাবে ওই ভ্রমণস্থানটিকে নোংরা/ ময়লা করেননি, কিন্তু তাতে কি আপনার দায় শেষ? একজন সচেতন ভ্রমণকারী হিসেবে আপনি কি শুধুই প্রশাসনের দিকে আঙ্গুল তুলে ফেলায় দায়িত্ব শেষ করে বলবেন আপনি একজন সচেতন ভ্রমণকারী? 

আপনার উত্তরটি যদি হ্যাঁ হয় একবার ভেবে দেখুন তো অন্য কারও দ্বারা নোংরা হওয়া বাড়ির দরজার সামনের জায়গাটিকে কি আপনি নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করেন না? তখন কিন্তু আপনি বলবেন না যে সিটি কর্পোরেশন অথবা পৌরসভা যেন আবার বাড়ির সামনের রাস্তাটুকু পরিষ্কার করে যাক, তারপর আপনি বের হবেন। অথবা আপনার জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলবে অথচ বাড়ির সামনের রাস্তার জায়গাটুকু অপরিষ্কার থাকবে প্রশাসন যতক্ষণ না ব্যবস্থা নিচ্ছে। হ্যাঁ অবশ্যই আপনি বলেন না বরং নিজেই জায়গাটুকু পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এই ভ্রমণস্থানগুলোতে গিয়ে কয়জন জায়গাটিকে নিজের সম্পদ মনে করেন? আপনার সামনে পড়ে থাকা চিপসের প্যাকেট অথবা সিগারেটের বাটটি কুড়িয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলেন কি? এই ধরনের কাজগুলোর উপরে নির্ভর করেই আসলে বলা যাবে আপনি প্রকৃতার্থে সবুজ ভ্রমণকারী কি না‌? অর্থাৎ, প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রেখে ভ্রমণ করেন কিনা!

কারণ আমরা অবশ্যই আশা করি যে আপনি আপনার নিজের বাসার মতো করেই মনোযোগী হবেন দেশের প্রতি আর জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোর প্রতিও সচেতন হবেন। আমরা অবশ্যই আপনাকে সব জায়গায় গিয়ে ঝাড়ু দিতে বলছি না কিন্তু অন্তত আপনি নিজের মতো করে নিজের আশপাশের জয়গাগুলোকে তো পরিষ্কার করতেই পারেন।

আচ্ছা এত গেলো একটা সমাধান। কিন্তু যে বিশাল পরিমাণ আবর্জনা আমরা এই প্রতিটি জায়গায় জমিয়েছি তা নিশ্চয়ই আমরা এই রকমের ব্যক্তিগত চেষ্টায় পরিষ্কার করতে পারব না? তাই আমদের এই মুহুর্তে দরকার কিছু দলগত উদ্যোগ। সেই দলগত উদ্যোগ অবশ্য শুরু হয়েছে আগেই। কিছু ভ্রমণকারী দল তাদের ভ্রমণের সময়ে নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে আশপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার করে থাকেন।দৃষ্টান্ত গড়তে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযানে যাচ্ছে একটি দল।

এই তরুণ দলটির নাম ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ(টিওবি)। এটি ফেসবুক ভিত্তিক বাংলাদেশের সবচাইতে বড় ভ্রমণ দল। আসলে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ(টিওবি)কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। এই দেশের প্রায় সকল ভ্রমণকারী এই নামটির সাথে পরিচিত। তারা এই বনভোজন/ পিকনিক/ শিক্ষা সফরের মৌসুম শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিভিন্ন জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোতে দলবেঁধে গিয়ে স্বউদ্যোগী হয়ে জায়গাগুলো পরিষ্কার করবেন। প্রিয়.কম থেকে আমরা কথা বলেছিলাম এই উদ্যোগের প্রধান উদ্যোক্তা জনাব নিয়াজ মোর্শেদের সাথে। তার সাথে কথা বলে আমরা জানতে পারি, এর মাধ্যমে তারা এই মৌসুমি পর্যটকদের এমন একটি পরিবেশ উপহার দিবেন যেটা পরিচ্ছন্ন। আশা করা যায়, একটি সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশকে অপরিচ্ছন্ন করতে যে কারোই খারাপ লাগবে। আর তাই প্রত্যেকের বিবেকে নাড়া দেওয়ার জন্যে এই ধরনের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তবে এই কাজের মধ্য দিয়ে তারা কেবল দর্শনার্থীদেরকেই সচেতন করতে চান না। তাদের এই সচেতনতার আলো তারা একই সাথে ছড়িয়ে দিতে চান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, প্রতিটি জনপ্রিয় ভ্রমণস্থানগুলোর আশেপাশের জনগণ এবং এই সকল স্থানে যারা বিভিন্ন খাবার ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে এমন বিক্রেতাদের মধ্যে। আর এদের মাধ্যমেই দলটি চলে আসার পরেও এই সব স্থানীয় মানুষ আর বিক্রেতাদের মাধ্যমে এই পরিচ্ছন্নতার ধারাটি বজায় থাকবে। 

কিন্তু তারা এটা আশা করছেন না যে রাতারাতি কোনো বিপ্লব ঘটে যাবে। আর তাদের পরিকল্পনাও সে রকম কোনো রাতারাতি বিপ্লব ঘটানোর মতো নয় বরং তারা সারা বছর জুড়ে বিভিন্ন সময়ে এই ধরণের কাজ বিভিন্ন জায়গায় চালিয়ে যাবেন বলে আশা করছেন। এরপর তারা আগামী মার্চ মাসে একই জায়গায় আবার যাবেন এবং এই বনভোজন মৌসুমের জমা হওয়া ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করবেন। আর এই ধারাবাহিকতায় একটি সময়ে গিয়ে এই পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস সকলের মধ্যে গড়ে উঠবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

এই উদ্যোগটি সূচনা তারা করতে যাচ্ছেন 'লাউয়াছড়া পরিষ্কার অভিযান ২০১৭' এর মধ্য দিয়ে। আগামী ৩০শে নভেম্বর রাতে তারা শ্রীমঙ্গল রওনা হবেন। ১ তারিখ সকাল থেকে শুরু হয়ে যাবে তাদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান। চলবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আওতায় তারা পর্যটকদের সচেতন করার পাশাপাশি চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট, সিগারেটের বাট, বোতল ইত্যাদি  কুড়িয়ে পরিষ্কার করবেন। দুপুরের পর তারা চলে যাবেন মনিপুরী পাড়ায়। রাতে হবে আড্ডা আর বারবিকিউ। আর পরদিন জিপ ভাড়া করে মাধবপুর লেকে যাবেন তারা। পুরো সময়টাই তারা একইসাথে একটি ভ্রমণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান মিলিয়ে চালিয়ে যাবেন। আর এই কাজটি করা হবে পুরোপুরি স্বেচ্ছাসেবার মধ্য দিয়ে। অনেকটা ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর মতো তারা নিজের খেয়ে বনের ময়লা পরিষ্কার করবেন।


গুগল ম্যাপে দেখে নিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

এই উদ্যোগের সাথী হতে পারেন আপনিও। তাদের সাথে যোগ দিতে ফেইসবুকে তাদের “লাউয়াছড়া পরিষ্কার অভিযান ২০১৭” তে যোগ দিন। এই অভিযানের পর তারা কুয়াকাটা, বিছানাকান্দি এসব জায়গায় যাবেন। তবে এমন অভিনব একটি উদ্যোগ পরিপূর্ণতা পাবে তখনই যখন অন্যান্য ভ্রমণকারীরা তাদের সাথে একাত্ম হয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে ভ্রমণের পাশাপাশি এই ধরনের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দ্বায়িত্ব নিলেই কেবল আমরা এখদিন হয়তো আমাদেরে এই জাতীয় সম্পদ্গুলকে আবর্জনার স্তূপ থেকে এদের প্রকৃত চেহারায় ফিরিয় নিতে পারব। 

ড. জিনিয়া রহমান

প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যে কোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে - https://www.priyo.com/post।