কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি সংগৃহীত

চালকের সাজা: পরিবহন ধর্মঘটে অচল সারা দেশ

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০১৭, ০৩:৫৪
আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭, ০৩:৫৪

ছবি: সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় জামির হোসেন নামের এক বাসচালকের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ও বাসচালকের মুক্তির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান পরিবহন ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ।  

গণপরিবহন শ্রমিকদের আকস্মিক কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। কোনো ধরনের আগাম ঘোষণা ছাড়া ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ যাত্রীরা আটকা পড়েছেন। যা ১লা মার্চ বুধবার সকালেও একই দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

বুধবার সকালে রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কোনো যানবাহন না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। সে সময় সাধারণ জনগণকে অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন।  

সরেজমিন দেখা যায়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে মাহবুবা ও আফরোজ নামের দুজনকে ঘণ্টারপর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, অফিসে যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টার ওপর তারা দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু কোনো যানবাহনই পাচ্ছেন না।

এদিকে, রামপুরায় ইসলাম নামে একজন জানায়, রামপুরা ব্রিজে পরিবহন শ্রমিকরা কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছে না। এর ফলে রাস্তার দুপাশে শতশত গাড়ি আটকা পড়েছে।

এর আগে, ঢাকার গাবতলীতে গাড়ি ভাঙতে বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ধর্মঘটে থাকা পরিবহন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষে চার পুলিশসহ আটজন আহত হয়েছেন।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ বাধে। গোটা এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। দুর্বিষহ ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গাবতলীতে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিল। পুলিশ কয়েকশ’ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। র‌্যাব সাঁজোয়া যান নিয়ে ওই এলাকায় টহল শুরু করে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামও শত শত নেতাকর্মী নিয়ে শ্রমিক তাণ্ডব প্রতিহত করতে রাস্তায় নামেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রমিকরা বিনা উস্কানিতেই অন্তত ৪০টি গাড়ি ভাংচুর করে।

ঢাকা ও মানিকগঞ্জের পৃথক আদালতের রায়ে এক চালকের মৃত্যুদণ্ড ও আরেক চালকের যাবজ্জীবন সাজায় ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে এ কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা।

এদিকে আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালত দু’জন চালকের সাজা দিয়েছেন। ওই সাজা বাতিলের জন্য যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিক নামধারীরা। এর আগেও বিভিন্ন দাবিতে এভাবেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছেন শ্রমিকরা। অযৌক্তিক এ পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিক নেতারা। মঙ্গলবার বিকেলে গাবতলীতে এক সমাবেশে আন্তঃজেলা ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি তাজুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা শাজাহান খান। তিনি চাইলে দুই মিনিটের মধ্যে এর সমাধান করতে পারেন।’ বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যহ বলেন, ‘এক বাস চালকের যাবজ্জীবন সাজার রায় আসার পর শ্রমিকরা বিক্ষুব্দ  হয়েছিল। কয়েকদিন ধর্মঘট পালনের পর সোমবার রাতে আমরা আলোচনায় বসে সমস্যা প্রায় সমাধান করে ফেলেছিলাম। পরে শোনা গেলো সাভারের একটি দুর্ঘটনায় এক ট্রাক চালকের ফাঁসির রায় হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা এখন এখন অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে গেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসব।’

ঢাকা (উত্তর): গাজীপুর জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা দিনভর টঙ্গীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দফায় দফায় তাণ্ডব চালান। এ সময় শ্রমিকরা বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহনে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছেন। তাদের ভাংচুর থেকে রেহাই পায়নি জীবন রক্ষাকারী ওষুধবাহী মিনি কাভার্ড ভ্যানও। 

চট্টগ্রাম: নগরীর বিভিন্ন স্থানে মোড়ে মোড়ে শ্রমিকরা যানবাহনের চালকদের মারধর করে। মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। ধর্মঘটে বাস নিয়ে রাস্তায় নামার কারণে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বহদ্দারহাটে এক চালক পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার হন। ভাংচুর করা হয়েছে একটি সিটি বাসও।

কুড়িগ্রাম: চট্টগ্রাম রুটের সৌখিন পরিবহনের চালক মাসুদুর রহমান হিরণ বলেন, ‘গত বিশ বছর ধরে গাড়ি চালাই। রাস্তায় যদি একটা সাপও পড়ে, তারপরও আমরা সেটাকে বাঁচাতে চাই। কিন্তু এভাবে সাজা দিলে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক  রুস্তম আলী খান ও বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইর্ভাস ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মোঃ মনির বলেন, ‘আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তবে শ্রমিকের সাজা নিয়ে এ ধর্মঘট। সে কারণে আমরা শ্রমিকদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছি।’

এ দিকে পরিবহন ধর্মঘটের জন্য দেশের সর্ববৃহত্ স্থল বন্দর বেনাপোলো আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আটকা পড়েছে কয়েকশত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। অপর দিকে ভারত থেকে ফেরত আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা বেনাপোল বন্দর এলাকায় আটকে পড়েছেন। শিশু ও রোগীদের নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এসব যাত্রীরা। শুধু বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রীরাই নয়, বিপাকে পড়েছেন বিদেশি পর্যটকরাও। বেনাপোলসহ আশেপাশের হোটেল, মোটেলে সিট খালি নেই। অনেকে রোগী এবং শিশুদের নিয়ে পরিবহন কাউন্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া শহর এলাকায় ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক চলাচল করলেও শহরের বাইরে চলাচলে বাধা দিচ্ছে শ্রমিকরা। বিভিন্ন স্থানে লাঠি হাতে  শ্রমিকরা পাহারা বসিয়েছে।

ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, রায়পুর, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, নাটোর , বরিশাল, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, বাগেরহাট, মোড়েরগঞ্জ, মংলা, খুলনা সিরাজগঞ্জ, নড়াইল, বগুড়া, দিনাজপুর, গাজীপুর, ময়মসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, মুন্সিগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ শহরে একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।  

প্রসঙ্গত, চালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় দু’দিন পরিবহন ধর্মঘট চলার পর সোমবার প্রশাসনের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা এলেও পরে শ্রমিক নেতারা কর্মসূচি বহাল রাখার কথা বলেন। এর মধ্যে ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার ঢাকার আদালতে ট্রাকচালক মীর হোসেনের ফাঁসির রায় হলে ওই দিন রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে চলে যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

প্রিয় সংবাদ/আশরাফ/শান্ত