কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ফারাও তুতানখামুন এবং তার রানি আনখেসেনামুন। ছবি: Daily Mail

আনখেসেনামুন: নিজের পিতামহ, পিতা ও সৎ ভাইকে বিয়ে করেছিলেন যে রাণী!

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:৪৪
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:৪৪

(প্রিয়.কম) মিশরীয় ফারাওদের মাঝে নিঃসন্দেহে সবচাইতে জনপ্রিয় হলেন তুতানখামুন। সম্প্রতি গবেষকেরা তার স্ত্রী আনখেসেনামুনের সমাধি খুঁজে পেয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভ্যালি অফ দা কিংস এর এই সমাধি যদি সত্যিই তার হয়, তাহলে ইতিহাস থেকে হঠাৎই হারিয়ে যাওয়া এই রানির ব্যাপারে আরো জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

প্রত্নতত্ত্ববিদরা ইতোমধ্যেই এই সমাধিতে খনন শুরু করেছেন। বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহি হাওয়াস ফারাও আই এর সমাধির কাছে তুতানখামুনের স্ত্রীর এই সমাধি আবিষ্কার করেন ২০১৭ সালের জুলাইতে।

 আনখেসেনামুন নামের এই তরুণী রানির জীবনটা ছিল বেশ বিষাদময়। নিজের পিতা, পিতামহ এবং সৎভাই তুতানখামুনের সাথে বিয়ে হয় তার। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩২ থেকে ১৩২৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করার সময়ে তুতানখামুনের স্ত্রী ছিলেন তিনি। তুতানখামুনের বিয়ের পর ফারাও আই এর সাথে তার বিয়ে হয়। ফারাও আই খ্রিষ্টপূর্ব ১৩২৭ থেকে ১৩২৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। 

ফারাও আই এর সমাধির কাছে প্রচুর মৃৎপাত্র, খাবারের অবশিষ্টাংশ এবং অন্যান্য কিছু জিনিসের উপস্থিতি দেখে বোঝা যায় এখানে আরো একটি সমাধি নির্মান করা হয়েছিল। এর ভেতর পর্যন্ত খনন করে দেখা হবে কে শায়িত আছেন এতে। 

২০১৮ এর জানুয়ারিতে খনন শুরু হয়। এই এলাকায় রাডার স্ক্যান থেকে দেখা যায় ৫ মিটার বা ১৬ ফিট মাটির নিচে আছে একটি সমাধি। জাহি হাওয়াস আশা করছেন এটা আনখেসেনামুনের সমাধি, কিন্তু একেবারে নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না এখনই। 

আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৪৮ সালের দিকে ফারাও আখেনাতেন এবং রানি নেফারতিতির সন্তান আনখেসেনামুনের জন্ম। তার নাম প্রথমে ছিল আনখেসেনপাতেন। সম্ভবত ধর্মীয় কারণে পরে তার নাম পাল্টানো হয়। আনখেসেনামুন অর্থ ‘তার জীবন আমুনের’। আনখেসেনামুনের বয়স যখন ১৩ আর তুতানখামুনের বয়স ৮ কি ১০, তখনই তাদের বিয়ে হয়। 

ফুল

ভালোবাসার প্রতীক স্বরূপ তুতানখামুনকে ফুল নিবেদন করছেন আনখেসেনামুন। ছবি: Daily Mail

বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করা হয়, তুতানখামুনের আগে নিজের পিতা আখেনাতেনের স্ত্রী ছিল আনখেসেনামুন। 

পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিয়ে হওয়াটা প্রাচীন মিশরে অস্বাভাবিক ছিল না। বংশের ধারা খাঁটি রাখবার জন্যই দেখা যায় রাজপরিবারের ভাই-বোন, বা পিতা-কন্যার মাঝে বিয়ে দেওয়া হতো। 

বলা হয় তুতানখামুনের বাবা-মা আসলে ভাই-বোন ছিলেন। এ কারণেই তার কিছু বংশগত ত্রুটি দেখা দেয়। যেমন কাটা ঠোঁট এবং বিকৃত পা। ফারাওরা বিশ্বাস করত তারা দেবতার বংশোদ্ভূত আর এই বংশকে পবিত্র রাখতে পরিবারের বাইরে বিয়ে করতো না তারা। 

আনখেসেনামুন এমন সময়ে জন্ম নেন যে সময়ে মিশরে চলছিল এক ধর্মীয় বিপ্লব। আখেনাতেন প্রাচীন দেবতাদের উপাসনার বদলে একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হয়ে দেবতা ‘আতেন’ এর উপাসনা শুরু করেন। মিশরের দেবতা রা’ এর পূজারিরা তা ভালো চোখে দেখেনি। 

আনখেসেনামুনের আরো দুই বড় বোন ছিল, মেরিতাতেন এবং মেকেতাতেন। তারা রাজসভা এবং ধর্মীয় বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। কিছু কিছু তথ্য থেকে জানা যায়, আখেনাতেন সম্ভবত তার বড় মেয়েদের সাথে মিলিত হয়ে সন্তান জন্ম দেবার চেষ্টা করেন। ফলাফল হিসেবে তার দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়।

আখেনাতেনের মৃত্যুর পর আরো দুইজন রাজত্ব করেন, স্মেনখকারে এবং নেফারনেফারুয়াতেন। এদের পর তুতানখামুনকে বিয়ে করেন আনখেসেনামুন এবং তারা রাজত্বের ভার নেন। আতেন এর উপাসনা বন্ধ করে প্রাচীন দেবতাদের উপাসনার নিয়ম আবার ফিরিয়ে আনেন। 

তুতানখামুন এবং আনখেসেনামুন দুজনেই কিশোর বয়সী হলেও তারা দশ বছর মিশরে রাজত্ব করেন। এ সময়ে তার উপদেষ্টা ছিলেন আই, যে কিনা আনখেসেনামুনের নানা ছিলেন। রাজত্বের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তার প্রভাব ছিল। 

এই সময়ের মাঝে তুতানখামুন এবং আনখেসেনামুনের দুইটি কন্যা সন্তান হয়। তারা দুজনেই সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে ও মারা যায়। প্রমাণ? তুতানখামুনের সমাধিতে পাওয়া দুইটি শিশুর মমি। ডিএনএ অ্যানালাইসিস থেকে দেখা যায় তারা তুতানখামুনের সন্তান।  

আঠারো বা উনিশ বছর বয়সে হুট করেই মারা যান তুতানখামুন। কিছু কিছু জায়গায় প্রমাণ পাওয়া যায় যে আই এর সাথেই রাজত্ব করতে থাকেন আনখেসেনামুন। কিন্তু আই এর রাজত্বের পর তার ব্যাপারে কিছুই জানা যায় না, যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যান এই রানি। 

মিশরের ভ্যালি অফ দা কিংস হলো গিজা পিরামিড কমপ্লেক্সের পাশে, এবং প্রচুর পর্যটক আকর্ষণ করে তা। এখানে বেশ কিছু ফারাওয়ের সমাধি অবস্থিত। তার মাঝে একটি হলো তুতানখামুনের সমাধি, যা আবিষ্কার হয় ১৯২২ সালে। তাই এখানে পাওয়া সমাধিটি আনখেসেনামুনের হবারই সম্ভাবনা বেশী। 

সূত্র: Daily Mail, Ancient Origins

প্রিয় লাইফ/ আর বি