কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ডি ভিলিয়ার্স তাণ্ডবে রান পাহাড়ের নিচে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি

জিততে হলে রান পাহাড় ডিঙাতে হবে বাংলাদেশকে

সৌরভ মাহমুদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:৫৮
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:৫৮

(প্রিয়.কম) ম্যাচের আগে আলোচনায় ছিল মন্থর উইকেট ও বাজে আউটফিল্ড! খেলা শুরু হতে বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আশায় বুক বাঁধছিলেন সমর্থকরাও। কিন্তু প্রায় চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা এবি ডি ভিলিয়ার্স নিমিষেই পাল্টে দিলেন ম্যাচের চেহারা। ব্যাট হাতে তুললেন ঝড়। আর সেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর রান কমিয়ে রাখার সকল পরিকল্পনা। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরকার্ডে জমা হল ৩৫৩ রানের বিশাল সংগ্রহ। প্রোটিয়াদের মোট রানের মধ্যে ভিলিয়ার্সের সংগ্রহই ১৭৬! 

টেস্ট সিরিজের পর প্রথম ওয়ানডেতেও অসহায় হার। ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাই আগে ফিল্ডিং বেছে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এদিন অবশ্য প্রথম ওয়ানডের মতো ভুল করেননি বোলাররা। পার্লের বোল্যান্ড পার্কে গুড লেন্থ, বাউন্সার দিলেও বডিলাইনে দিয়েছেন। একই সঙ্গে স্টাম্পে বল করার দিকে নজর ছিল মাশরাফি-রুবেল হোসেন-তাসকিন আহমেদদের। যদিও প্রথম উইকেট পেতে অপেক্ষা করতে হয় ১৭.৩ ওভার পর্যন্ত। তবে কোনও পেসার নয়, উইকেটটি ঝুলিতে পুরেছেন গত পাঁচ ওয়ানডেতে উইকেটের দেখা না পাওয়া সাকিব আল হাসান।

প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ২৮২ রানের জুটির পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভাল শুরু এনে দেন হাশিম আমলা-কুইন্টন ডি কক। উইকেট বুঝে নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে এই জুটি এগিয়ে যাচ্ছিল শতরানের জুটির পথে। তবে জুটির রান যখন ৯০ তখন আঘাত হানেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। বাঁ-হাতি এই স্পিনারের বল হালকা স্লাইড করে সরাসরি আঘাত হানে আগের ম্যাচের ম্যান অব দা ম্যাচ ডি ককের পায়ে। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৪৬ রানে সাজঘরে ফেরেন ডি কক। চলমান ওয়ানডে সিরিজে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম উইকেট।

চলতি সিরিজের প্রথম উইকেট পেতে অপেক্ষাটা দীর্ঘ সময়ের হলেও দ্বিতীয়টি এল খুব দ্রুতই। একই ওভারে আবারও প্রোটিয়া শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। এবার তার শিকার দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। রানের খাতা খোলার আগেই সাকিবের ফ্লাইট ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন প্লেসি। পরের ওভারে আরও একটি উইকেট ঝুলিতে পুরার সুযোগ পেয়েছিলেন সাকিব। সাকিবের বল ভিলিয়ার্সের ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় পেছনে। কিন্তু স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা নাসির হোসেন দ্রুত গতিতে ছোটা সেই বল লুফে নিতে পারেননি। তখন ভিলিয়ার্সের সংগ্রহ ছিল মাত্র দুই রান!

এরপরের গল্পটা শুধুই ভিলিয়ার্সের। অবশ্য তাকে যোগ্য সঙ্গই দিচ্ছিলেন আমলা। মাত্র ৮৪ বলেই স্কোরকার্ডে শতরান জমা করে এই জুটি। এটা তাদের ১২তম শতরানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এখন সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটির রেকর্ড এই দুজনের। প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পাওয়া আমলা এদিনও হাঁটছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা আমলা এদিন ব্যক্তিগত ৮৫ রানে সাজঘরে ফেরেন। পেসার রুবেল হোসেনের বল আমলার ব্যাটে লেগে জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের বিশ্বস্ত গ্লাভসে। ৯২ বলে চার চারে ইনিংসটি সাজান আমলা। ভাঙ্গে আমলা-ভিলিয়ার্সের ১৩৬ রানের জুটি।

আমলা ফিরে গেলেও আরেক প্রান্ত আগলে রাখেন ভিলিয়ার্স। প্রোটিয়াদের ইনিংসের শুরুতে যে নিয়ন্ত্রণ দেখিয়েছিল বাংলাদেশের বোলাররা, ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সব এলোমেলো করে দেন ভিলিয়ার্স। প্রায় চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট করতে নেমেই তুলেছেন ঝড়। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ৩৪ বলেই। হাফ সেঞ্চুরির পর আরও চওড়া হয়ে যায় তার ব্যাট। বাংলাদেশি বোলার-ফিল্ডারদের চাপে ফেলে ভিলিয়ার্স তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৫তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১০ চার ও এক ছক্কায় মাত্র ৬৮ বলেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।

৩৪ বলে করেছিলেন প্রথম পঞ্চাশ রান, পরের পঞ্চাশেও বল লেগেছে ৩৪টি। সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর আরও খুনে ব্যাটিং উপহার দিতে থাকেন তিনি। মাত্র ২৫ বলে তুলে নেন পরের পঞ্চাশ। সব মিলিয়ে মাত্র ৯৩ বলে ১৫০ পেরোয় ভিলিয়ার্সের সংগ্রহ। যেভাবে খেলছিলেন, তাতে ৫০ ওভার পর্যন্ত উইকেটে থাকলে ডাবল সেঞ্চুরিই হয়তো হয়ে যেত ভিলিয়ার্সের। তবে সেটা হল না। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে তাকে ফেরালেন রুবেল। ডানহাতি এই পেসারের বলে ডিপ মিড উইকেটে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন ভিলিয়ার্স। আউট হওয়ার আগে ১০৪ বলে ১৫ চার ও সাত ছক্কায় ১৭৬ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে এটাই ভিলিয়ার্সের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। এর আগে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিল ১৬২ রান।

বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে এদিন সবচেয়ে সফল বোলার রুবেল হোসেন। আমলা-ভিলিয়ার্সকে ফেরানোর পর নিজের শেষ ওভারেও জোড়া আঘাত হানেন ডানহাতি এই পেসার। ইনিংসের শেষ ওভারে তার বলে ফিরে যান ৩০ রান করা জেপি ডুমিনি ও রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হওয়া ডুয়াইন প্রিটোরিয়াস। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে দলটির সংগ্রহ দাঁড়ায় ছয় উইকেটে ৩৫৩ রান। এই ভেন্যুতে এটাই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ২০০১ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে তিন উইকেটে ৩৫১ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত। বাংলাদেশের হয়ে রুবেল একাই নেন চার উইকেট। এছাড়া সাকিব নেন বাকি দুই উইকেট।

প্রিয় স্পোর্টস/শান্ত মাহমুদ