কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

অনুশীলনে বাংলাদেশ দল। ছবি: বিসিবি

এবারের পরীক্ষার নাম ওয়ানডে

সৌরভ মাহমুদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২৭
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২৭

(প্রিয়.কম) ইনিংস ব্যবধানে হার যেন ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রায় সাড়ে তিনবছর সেই হারের খপ্পরে পড়েনি টিম বাংলাদেশ। পরাজয়ের পাশাপাশি ড্র কিংবা জয়ও এসেছে গত দুই বছরে। গত বছর ইংল্যান্ডকে হারানোর পর চলতি বছর সাদা পোশাকে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণই করেছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের বিশাল হারের পর সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ইনিংস ও ২৫৪ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয় মুশফিকুর রহিমের দল। 

সব মিলিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটি ছিল চূড়ান্ত বাংলাদেশ যতো দ্রুত ভুলতে পারবে, ততোই মঙ্গল। টেস্ট লড়াইয়ের পর এবার বাংলাদেশ দলের পরীক্ষার নাম ওয়ানডে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে। ওয়ানডে খেলতে এর মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে গেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসান। তাদের সঙ্গে গেছেন নাসির হোসেন ও তরুণ অলরাউন্ডার সাইফ উদ্দিনও। টেস্ট সিরিজের হতাশা এবং ব্যর্থতা ভুলে ওয়ানডে সিরিজে দারুণ কিছুর আশায় বুক বাধছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম জয়ের খোঁজেও বাংলাদেশ।

ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ তাদের সেরা দিনগুলোই কাটাচ্ছে। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলে মাশরাফিবাহিনী। এ ছাড়া প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সর্বশেষ দেখায় বাংলাদেশ তুলে নিয়েছিল নয় উইকেটের জয়। একই সঙ্গে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেও নেয় বাংলাদেশ। তবে এবার চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি। কেননা সেবার ছিল ঘরের মাটিতে, কিন্তু এবার খেলা হবে প্রোটিয়াদের মাটিতে। তাই কন্ডিশন বাংলাদেশ থেকে অবশ্যই ভিন্ন থাকবে। সব দলের জন্যই ভিন্ন কন্ডিশনে খেলাটা চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফর উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য বরাবরই অগ্নিপরীক্ষারই সামিল। সেখানে প্রতিপক্ষ শুধু প্রোটিয়া ক্রিকেটাররাই নন। বিরুদ্ধ কন্ডিশন ও বাউন্সি উইকেটও পরীক্ষা নেয় সবার। সফরের শুরু থেকেই মূল আলোচনা ছিল স্বাগতিকদের পেস আক্রমণকে মোকাবেলা করার কৌশল তৈরি করা। কিন্তু সেই কৌশলে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রোটিয়াদের গতির সঙ্গে বলের ওপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ, সুইং ও বাউন্সের বিরুদ্ধে পুরোপুরি অসহায় হয়ে টেস্ট সিরিজে একের পর এক আত্মসমর্পণ করেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

ওয়ানডেতে ভালো করতে হলে এই জায়গাতেই উন্নতি করতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও ওয়ানডের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে কিছুটা স্বস্তিই মিলেছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে। ৪৮.১ ওভারে ১০ উইকেট হারালেও বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে জমা হয় ২৫৫ রান। যদিও সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রিত একাদশের বিপক্ষে ছয় উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ ও প্রস্তুতি ম্যাচের হার ভুলে মূল লড়াইয়ে পুরনো বাংলাদেশকে দেখবে বলেই আশা সমর্থকদের। দক্ষিণ আফ্রিকা চাইবে, টেস্ট সিরিজ যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু করতে। কিন্তু বাংলাদেশ চায়, দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকে শুরু করতে। কেননা প্রোটিয়াদের ২-১ এ হারানোর সেই স্মৃতি যে এখনও বাস্তব। 

তবে ইতিহাস কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষেই কথা বলছে। এখন পর্যন্ত ১৭ বারের দেখায় প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। তিন জয়ের দুটি ২০১৫ সালে নিজেদের মাটিতে। আর অপর জয়টি এসেছিল আজ থেকে এক দশক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে (২০০৭)। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসরে গ্রায়েম স্মিথদের ৬৭ রানে হারিয়ে রীতিমতো রুপকথার জন্ম দিয়েছিল হাবিবুল বাশার সুমন নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। তবে হতাশার কথা হলো দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে কখনই তাদের হারানোর সুখকর মুহূর্ত রচনা করতে পারেনি টিম বাংলাদেশ।  দুই দলের বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন হাশিম আমলা। বাংলাদেশের বিপক্ষে নয় ম্যাচে তার সংগ্রহ ৩০২ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তামিম ইকবাল। ১০ ম্যাচে বাঁ-হাতি এই ওপেনারের সংগ্রহ ২৫৪ রান। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারেরও ভালো পরিসংখ্যান রয়েছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ১০২ গড়ে ২০৫ রান করেছেন তিনি।

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে হবে কিম্বারলির ডায়মন্ড ওভালে। সর্বশেষ প্রায় পাঁচ বছর আগে আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই মাঠে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া লিগে বেশ ভালো ভাবেই ব্যবহৃত হয় এই মাঠ। এই মাঠের উইকেট বিবেচনায় এখনকার মতো বড় বড় স্কোর হয় না বললেই চলে। ২৫০-৩০০ এর ভিতরেই রান হয় বেশীরভাগ ম্যাচে। ৩০৪ রান এই মাঠে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। তবে এই মাঠের পিচ বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই বোলিং পিচ হয়ে থাকে। অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে থাকছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানে, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, সাইফুদ্দিনরা।   

সাদা পোশাকে অনেকটা রক্ষণাত্মক খেলাই উপহার দেয় মুশফিকুর রহিমের দল। তবে ওয়ানডে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের কথাই জানালেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম বল থেকেই আক্রমণে যেতে চান তিনি, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে রক্ষণাত্মক ক্রিকেটের প্রশ্নই আসে না। যদি এমন ভাবনা থাকে, ওদের হারাতে নিজেদের দিনের অপেক্ষায় থাকব, তাহলে ওদের কাছে সুযোগই পাব না। এ থেকে বেরিয়ে আসার একটাই উপায়, প্রথম বল থেকেই আক্রমণ! এই কন্ডিশনে উপমহাদেশের দল হিসেবে আমাদের জন্য খুবই কঠিন। কিন্তু এখান থেকে বেরোতে পারি একমাত্র আক্রমণাত্মক খেলে।’

টেস্ট দলের চাইতে বাংলাদেশের ওয়ানডে দল বেশ অভিজ্ঞ। টেস্ট ক্রিকেট না খেলা ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মর্তুজা ও টেস্ট সিরিজে বিশ্রামে থাকা সাকিব আল হাসান ওয়ানডে দলে যোগ দেয়ায় চনমনে বাংলাদেশ শিবির। তামিম ফিরলে দলের শক্তি আরও বাড়বে। ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় টেস্টে দলের বাইরেই ছিলেন তিনি। শঙ্কা রয়েছে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও না পাওয়ার। মাশরাফি অবশ্য দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে পাওয়ার আশা ছাড়ছেন না, ‘আমরা পজিটিভ, আশা করছি তামিম ফিট হয়ে ফিরবে।’

ওয়ানডের সাম্প্রতিক ইতিহাস, সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের জ্বলে ওঠা আর কিছুটা কন্ডিশনের সহায়তা পেলে প্রতিপক্ষের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো খুব কঠিন হওয়ার কথা নয় মাশরাফিবাহিনীর। রোববার দুপুর দুইটায় কিম্বারলির ডায়ামন্ড ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। 

প্রিয় স্পোর্টস/কামরুল