কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর ফাইল ছবি

৩৯ মাসে ফারুকী হত্যা মামলার অগ্রগতি কতদূর

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:১৩
আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:১৩

(প্রিয়.কম) আলোচিত ইসলামী ফ্রন্ট নেতা ও টেলিভিশন উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে আসলেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তদন্তের কাজে প্রায় ৩৯ মাস পার হলেও পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির কোনো কর্মকর্তাই কোনো মোটিভ খুঁজে পাননি। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদেও মেলেনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কিন্তু চলতি মাসেই আলোচিত এই হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বরের মুন্সিবাড়ির দ্বিতীয় তলায় গলা কেটে খুন করা হয় মাওলানা ফারুকীকে। এরপর তার ছোট ছেলে ফয়সাল ফারুকী শেরে-বাংলানগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

ফারুকী হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকটি ক্লু ধরে সামনে এগিয়েছিল। কোনো ধমীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে, আবার ফারুকীর সাথে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব নিয়েও তিনি খুন হতে পারেন। কিন্তু পুলিশের এসব ক্লু’র কোনোটাই কাজে আসেনি।

মামলাটি কিছুদিন পুলিশ তদন্তের পর তার দায়িত্ব পায় ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি)। মামলায় বিভিন্ন সময় সিরিজ বোমা হামলা, জঙ্গি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ কয়েকটি মামলার ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সম্প্রতি একজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন আদালতে জামিন নিয়েছেন। জামিনে থাকা দুই আসামি হলেন- এনটিভির ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মোজাফ্ফর বিন মহসিন ও গার্মেন্টস চাকরিজীবী আলেফ ব্যাপারে। 

ডিবি প্রায় দুই বছর তদন্ত করেও তেমন কোনো ফলাফল না আসায় মামলাটি বছরখানেক আগে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডিতে আসার পর এক কর্মকর্তা মামলাটির তদন্তের কাজ শুরুও করেন, কিন্তু এর কিছুদিন পরই তিনি বদলি হয়ে যান। দায়িত্ব পান বতর্মান তদন্ত কর্মকর্তা। এ নিয়ে ফারুকী হত্যা মামলাটি চার হাতে এসে পৌঁছল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মামলার দুই আসামি জামিনে থাকায় বর্তমানে ছয়জন কারাগারে আছেন। তাদের মধ্যে দুজন জঙ্গি ও ডাকাতি মামলার আসামি। এই দুজনের মধ্যে তারেকুল ইসলাম মিঠু হলেন টাঙ্গাইলের সিরিজ বোমা, খিজির খান, সিক্স মার্ডার ও ফারুকী হত্যার আসামি। অপরজন ইঞ্জিনিয়ার রাকিব হলেন ডাকাতি মামলার আসামি। রাকিবের নামে শেরে-বাংলানগর, গুলশান ও গাজীপুর থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। তারা দুজনেই এখন কারাগারে আছেন। কারাগারে থাকা ছয় আসামি ও জামিনে থাকা দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদেও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং তারা নিজেদের জড়িত থাকা বরাবরই অস্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।   

বর্তমান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার আগে বা পরে খুনিরা তেমন কোনো চিহৃ বা আলামত রেখে যাননি। এ কারণে কোনো ক্লুও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে হত্যাটি জঙ্গিদের দ্বারা নাকি কোনো পূর্ব শত্রুতায় ঘটেছে তাও বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের পক্ষে। 

মামলাটি বর্তমানে যে তদন্ত কর্মকর্তা দেখছেন তিনি সম্প্রতি মাওলানা ফারুকীর ব্যক্তিগত পিএস মমিনকে বগুড়া থেকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এরপর তিনি তার বড় স্ত্রী আয়েশা বেগমকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ফারুকীর পরিবার জানিয়েছে, বড় স্ত্রীর সঙ্গে ২০১৫ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তিনি বর্তমানে উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলার সদরে এক ছেলে ও মেয়েকে বাবার বাড়িতে থাকেন। অন্যদিকে ছোট স্ত্রী লুবনা আক্তার শেরপুরের নকলায় থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর তিন ছেলের মধ্যে দুজন ঢাকায় থাকলেও একজন বিদেশে অবস্থান করছেন।  

তদন্ত সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি আবারও ফারুকীর দুই স্ত্রী থেকে শুরু করে পরিবারেরর সকল সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুইদিন আগে মাওলানা ফারুকীর সর্বশেষ ব্যবহৃত ডায়েরিটি তার বড় ছেলের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখন সেই ডায়েরিতে তিনি কার সঙ্গে যোগাাযোগ করতেন, তার ব্যবসায়িক লেনদেন ও প্রাত্যহিক রুটিনের কাজ কি ছিল তা থেকে ক্লু বের করার চেষ্টা চলছে। 

ডিবির একটি সূত্র জানায়, ফারুকী হত্যাটি তদন্তের সময় ৩৪ হাজার মোবাইল নম্বরের কললিস্ট হাতে নিয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ১২ হাজার নম্বর যাচাই-বাছাই করে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছিল মাত্র দুই হাজার নম্বর। কিন্তু পরে সেগুলো পর্যালোচন করে কাউকেই ট্রেস করা যায়নি। 

এদিকে নিহত মাওলানা ফারুকীর বড় ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী জানান, এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে তারা কখনও দেখেননি। এমনকি তারা আসামিদের চিনেন কিনা তাও জানার জন্য তদন্ত কর্মকর্তারা মুখোমুখি করেননি।  

রেজা ফারুজী প্রিয়.কমকে বলেন, ‘তারা (তদন্ত কর্মকর্তারা) তো আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সম্প্রতি বাবার ব্যবহৃত ডায়েরি চাইলে তা দিয়ে আসা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির খবর আমরা পাইনি। তবে শুনেছি মামলার চার্জশিট নাকি চলতি মাসেই দেওয়া হবে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরশাদুল ইসমলাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘তার ঘনিষ্টজনদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আশা করছি আমরা মামলার আসামিদের খুঁজে বের করতে পারব।’

সিআইডির স্পেশাল  পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘এ মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত আমরা উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু পাইনি। তবে তদন্তে কি বেরিয়ে আসে তার অপেক্ষায় আছি।’

মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘শান্তির পথে’ ও ‘কাফেলা’ এর উপস্থাপক ছিলেন। সুন্নী মতবাদে বিশ্বাসী এই উপস্থাপক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব ছিলেন।