কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

যমুনা নদীতে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। ছবি: সংগৃহীত

যমুনা নদীতে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি

মো. সুমন হোসেন
কন্ট্রিবিউটর, মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৪৩
আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৪৩

(প্রিয়.কম) মানিকগেঞ্জের যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে পানি দু’দিন ধরে কমতে শুরু করছে। তবে ২০ আগস্ট রোববারও মানিকগঞ্জের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ধলেশ্বরী, পুরাতন ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও পানি বাহিত রোগসহ পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ এখন নিত্য সঙ্গী হয়ে পরেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শিবালয় উপজেলার আরিচাঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীত ১২ সেন্টিমিটার পানি হ্রাস পয়েছে।

রোববার ১২টায় উক্ত পয়েন্টে বন্যার পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ও বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর ও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানি এখন মানিকগঞ্জ শহরের দ্বারপ্রান্তে। রাস্ত-ঘাট, বাঁধ ভেঙ্গে ও ডুবে গিয়ে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভেঙে পরেছে। মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। বাড়ি-ঘর ডুবে সর্বত্র বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত রোগ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ কর্মবিমুখ হয়ে পরেছে ঘর সামলাতে গিয়ে। বন্যাকবলিত দরিদ্র মানুষের মধ্যে চরম অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবারহের জন্যে তালিকা প্রনয়নের কাজে নেমেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ত্রানের আশ্বাস কম হওয়ায় তালিকা তৈরি করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। এতে জেলার প্রায় ২ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কাঁচা-পাকা ৭২ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ২৮টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র এবং ৪৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া বন্যায় সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় জেলার সাথে হরিরামপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। হরিরামপুর উপজেলায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে গত কয়েকদিনে নদী ভাঙনে প্রায় ২৮টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ত্রাণসাগ্রী অপ্রতুল হওয়ায় বন্যায় বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্তরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

Flood-affacted-people

মানিকগঞ্জে বন্যায় বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

রোববার শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়ার চর এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সবার-বাড়ি ঘরেই পানি উঠেছে। বন্যাকবলিত এ এলাকার লোকজন ঘরে তালা দিয়ে গরুছাগল নিয়ে অশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। আবার কেউ, কেউ পানির ওপর মাচা বানিয়ে শিশুসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে বাড়িতেই থাকছে। পোক-মাকরের ভয়ে সারারাত কুপিবাতি জ্বালিয়ে রাত কাটাচ্ছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি খাবার পানির সংকট রয়েছে। ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায় পয়ঃনিস্কাশনে অসুবিধা হচ্ছে। এভাবে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। চর শিবালয়ের জামাল হোসেন বলেন, বন্যার শুরু থেকেই আমরা পানিবন্দঅ অবস্থায় আছি। এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণসামগ্রী পাইনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। একই এলাকার সামসুল হক, এনছাপ ও এরশাদ মোল্লা বলেন, ঘরের মধ্যে হাটু পানি, আশ্রয় কেন্দ্রেও যাইনি। পানির উপর মাচা তৈয়ার করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়িতে থাকছেন। এ পর্যন্ত সরকারি- বেসরকারি কোনো ত্রাণই পাননি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

শিবালয় ৩নং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী খুবই কম। অপ্রতুল ত্রাণ দিতে গিয়ে আমাদের নানা ধরনের সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিম সাংবাদিকদের জানান, এ পর্যন্ত জেলার বন্যাকবলিত লোকজনের মাঝে ১০৭ মেট্রিকটন চাল এবং নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ এসেছে, পর্যায়ক্রমে তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল