কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গুরমিত অভিনীত সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

গোপন ‘গুফার’ রহস্য

আশরাফ ইসলাম
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১২:৫৫
আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১২:৫৫

(প্রিয়.কম) ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু গুরমিত সিংহ রাম রহিম এখন বিলাসবহুল ‘গুফা’ (গুহা) থেকে অন্ধকার জেলে রয়েছেন। দিনে চল্লিশ টাকা মজুরির সশ্রম কারাদণ্ডে দিন কাটা শুরু হলো গুরমিত রাম রহিম সিংহের। যেখানে তার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। এদিকে রাম রহিমের বিশ বছরের সাজা ঘোষণা হতেই তার গোপন গুফার রহস্য নিয়ে মুখ খুলছেন অনেকে। অনেকেই জানান ভয়ে এতদিন তারা মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। 

এক সময়ে ডেরা সচ্চা সৌদায় রাম রহিমের গাড়িচালক ছিলেন খাট্টা সিংহ। ‘বাবা’-র ভয়ে দশ বছর পালিয়ে বেড়ানো খাট্টা আজ বলেছেন, ‘আরও অনেক নির্যাতিতা মুখ খুলবেন।’ প্রাক্তন গাড়িচালকের দাবি, ডেরার সদর দফতরে তার ভাইঝিও নির্যাতিতা হয়েছিলেন। তিনিও সামনে আসবেন। যে নারীর অভিযোগে রাম রহিমের সাজা হয়েছে, তিনিও আজ বলেছেন- ‘সুবিচার হয়েছে।’

গুরদাস সিংহ দশ বছর ডেরায় সেবাদার ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘হানিপ্রীত বলে যে নারী রাম রহিমের দত্তক কন্যা বলে পরিচিত, তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল রাম রহিমের

অবশ্য হানিপ্রীতের প্রাক্তন স্বামী বিশ্বাস গুপ্ত ২০১১ সালেই সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেছিলেন, ‘গুফা’য় হানিপ্রীতের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় গুরমিতকে দেখেছিলেন তিনি। এ-ও বলেছিলেন, বাইরে যাওয়া হলে তাকে থাকতে হতো হোটেলের আলাদা ঘরে। হানিপ্রীত থাকতেন গুরমিতের সঙ্গে।

বিশ্বাস গুপ্ত আরও দাবি করেন, এ সব ঘটনার পরেই তিনি ডেরা ছেড়ে পঞ্চকুলায় চলে আসেন। অথচ গুরমিতের উল্টো চাপে তাকে ও তার বাবা মহেন্দ্র পাল গুপ্তকে ডেরায় গিয়ে সকলের সামনে ক্ষমা চাইতে হয়। পরে বিশ্বাসের সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয় হানিপ্রীতের। হানিপ্রীত হয়ে ওঠেন গুরমিতের ছায়াসঙ্গী। এমনকী জেলেও তাকে সঙ্গে রাখতে চেয়েছিলেন গুরমিত।

প্রশ্ন হলো, এত জন নারী যদি নির্যাতিতা হন, তা হলে এত দিন তারা সামনে এলেন না কেন? তাদের বাবা-মায়েরাও তো ডেরায় ছিলেন, তারাও কেন সরব হলেন না?

গুরদাসের বক্তব্য- ডেরার সাধ্বীদের মধ্যে দু’টি ভাগ আছে। একদল ব্রহ্মচারী, আর একদল সদব্রহ্মচারী। ব্রহ্মচারীরা সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কিন্তু সদব্রহ্মচারীরা নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গেও একান্তে কথা বলতে পারতেন না। ফোন ব্যবহারও ছিল বারণ। এদের সঙ্গেই কুকর্ম করতেন ধর্মগুরু।

গুরদাসের দাবি, সাধ্বীদের গুফায় নিয়ে যাওয়ার কোড ছিল ‘মাফি দেনা’। কেউ আপত্তি তুললে তাকে শায়েস্তা করার জন্য ছিল বিশেষ ‘মন সুধার বাহিনী’। অর্থাৎ মন বদল করানোর বাহিনী। তারা প্রতিবাদকারীকে মারধর করত। ভয় দেখাত।

গুরদাস আরও দাবি করেন, গত কাল থেকেই অনেক নারী তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারাও গুরমিতের মুখোশ খুলতে চান।

উল্লেখ্য,দুইজন ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ২০০২ সালে হওয়া মামলায় ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাকে। একইসঙ্গে ৩০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। যার বিরাট একটি অংশ পাবেন ভুক্তভোগীরা। 

সাজা ঘোষণার সময় কেঁদে দেন গুরমতি রাম রহিম সিং। ‘মুঝে মাফ কার দো’ বলে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন তিনি। কিন্তু এতে বিচারক তার অবস্থান থেকে মোটেও সরে আসেননি।  

এর আগে ২৫ আগস্ট শুক্রবার দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় রাম রহিম সিংয়ের ভক্তরা। এতে প্রায় ৩৬ জন নিহত হয়। আহত হয় তিনশতাধিক। সাজার রায় ঘোষণার পর হরিয়ানার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্যটিতে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে গুলি ছোড়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল বাহিনীকে।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল