কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গাজী রাকায়েত। ছবি: সংগৃহীত।

আন্দোলন করে ইতোমধ্যে সতেরটা বিদেশী সিরিয়াল বন্ধ করিয়েছি: গাজী রাকায়েত

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০১৭, ২০:২৭
আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০১৭, ২০:২৭

(প্রিয়.কম) গত ২ আগস্ট নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে দেশিয় মিডিয়ায় বিদেশি কলাকুশলীদের কাজ করার অভিযোগ এনে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি এবং ১৩টি সংগঠনের জোট ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) এর সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত। থানায় সাধারণ ডায়েরি করার দিন বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন ভারতের অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। এর একদিন পরই মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘ভয়ংকর সুন্দর’। অনেকেই ধারণা করেন জিডিটি করা হয় পরমব্রতের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর থেকেই টেলিভিশন মিডিয়ায় এ নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছিল। সাম্প্রতিক এই ইস্যু নিয়ে প্রিয়.কমের সঙ্গে কথা বলেন অভিনেতা এবং শিল্পী সংগঠনের নেতা গাজী রাকায়েত।

প্রিয়.কম: সম্প্রতি আপনি থানায় একটি জিডি করেছেন, অনেকেই বলছেন এটা পরমব্রতের বিরুদ্ধে, আপনার পক্ষ থেকে অবশ্য বক্তব্য এসেছে অন্য রকম। আমাদের কাছে যদি ব্যাপারটা খোলাসা করতেন।

গাজী রাকায়েত: এটা আর কী খোলাসা করবো? অনেক তো লেখা হলো, এই খবর পত্রপত্রিকায় বের হয়ে একাকার হয়ে গেছে।

প্রিয়.কম: হ্যাঁ, কিন্তু এক ধরনের ধোঁয়াশা তবুও থেকে গেছে। মানুষের কাছে আপনার জিডির ব্যাপারটা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার না। অনেকেই বলছেন এ জিডি ছিল ভারতের অভিনেতা পরমব্রতের বিরুদ্ধে, যেহেতু তিনি ওই সময় ঢাকায় অবস্থান করছিলেন এবং একটি প্রযোজনা সংস্থার সাথে টেলিভিশন নাটক করার কথাও চলছিল।

গাজী রাকায়েত: আমি আবারো বলছি, যেই জিডিটা করা হয়েছে তা পরমব্রতের বিরুদ্ধে না। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যে অনিয়ম চলছে তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যে কেউ এসে নিয়ম না মেনেই কাজ করে চলে যায়, কোনো রকম ট্যাক্স তারা দিচ্ছে না বা এখান থেকে কাজ করে টাকাটা নিয়ে কীভাবে গেলো তার কোনো ঠিক নেই- আমার জিডিটা এই সকল অনিয়ম বন্ধের জন্যই করা। আমরা যখন বাইরে কাজ করতে থাইল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই যাই, কোনো রকম ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ছাড়া সেই কাজগুলো করতে পারি না। কিন্তু এখানে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যে কেউ-ই এসে কাজ করে চলে যাচ্ছেন।

প্রিয়.কম: আপনারাও তো বিভিন্ন কাজে কলকাতায় বা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছেন। সেখানে মঞ্চ নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন...

গাজী রাকায়েত: এগুলো নন-প্রফেশনাল ক্ষেত্র। আমরা থিয়েটার করতে ওখানে যাই, ওরাও আসে। ওইখান থেকে গানের দল আসে। কিছু কালচারার এক্টিভিটিজ এক্সচেঞ্জ হয়, যেমন বেঙ্গল ফাউন্ডেশন যেটা করে এগুলোর ক্ষেত্রে আপনি নিয়ম-কানুন না মানতে পারেন কিন্তু যখন পেশাদারিত্বের ব্যাপার চলে আসে তখন অবশ্যই নিয়ম মেনেই কাজ করতে হবে। একজন শিল্পী খুব স্ট্রাগল করে নিজের জায়গা তৈরি করে, সেটা আমাদের দেশ বা যে কোনো দেশেই হোক। ফলে শুধু আমাদের দেশেই নয়, যে কোনো দেশের ক্ষেত্রেই আমি বলবো- প্রফেশনাল কিছু করতে হলে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এবং যথাযথ নিয়ম-কানুনগুলো মেনেই কাজ করতে হবে।

প্রিয়.কম: তাহলে এ দেশে কাজ করতে হলে কী করতে হবে?

গাজী রাকায়েত: কাজ করতে আসার আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে, বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ওয়ার্ক পারমিট বের করতে হবে। সেই ওয়ার্ক পারমিটের বেসিসে আমরা তাকে টেম্পোরালি কাজের জন্য মেম্বারশীপ দেবো, সেটাও কন্ডিশনালি মেম্বারশীপ।

প্রিয়.কম: তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন যে জিডিটা করা হয়েছে; তা দেশিয় মিডিয়ায় বিদেশী শিল্পীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে, পরমব্রতের বিরুদ্ধে নয়?

গাজী রাকায়েত: ঠিক তাই। এট ইজ অ্যা জিডি এগেইনস্ট ইনডিসিপ্লিন এক্টিভিটিজ। ইট ইজ নট এবাউট পরমব্রত। পরমব্রতের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বরঞ্চ পরমব্রতের সাথে আমাদের অতীতের সম্পর্ক অটুট থাকবে। তাকে একটা প্রযোজনা সংস্থা এনেছে এবং কাজ করাচ্ছে। জিডিটা হয়েছে সেই প্রোডাকশনের বিরুদ্ধে। তারা যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করেন তাই এই জিডিটা এফটিপিও’র পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

প্রিয়.কম: তাহলে পরমব্রতের নাম আসছে কেনো বারবার?

গাজী রাকায়েত: নিয়ম না মেনে পরমব্রতকে কাজে ডেকেছে ক্যান্ডি প্রোডাকশন, পরমব্রত তো আর নিজে নিজে আসে নাই। বাংলাদেশের অনেক বড় একটা প্রোডাকশন এরা, ভবিষ্যতে তাদেরকে অবশ্যই এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

প্রিয়.কম: কিন্তু আলফা আই প্রোডাকশনের স্বত্বাধিকারী শাহরিয়ার শাকিল বলেছেন- সকল নিয়ম মেনেই তারা পরমব্রতকে কাজের জন্য নিয়ে এসেছেন?

গাজী রাকায়েত: ভুল তথ্য। জিডির পরে ওরা আমাদের সাথে বসেছিল। জানতে চেয়েছিল কেনো জিডি করলাম। আমরা তাদেরকে স্পষ্টভাবে রুলসগুলো জানিয়েছি। তারাও আমাদের কথা দিয়েছে নিয়মনীতি মেনেই কাজ করবে। যদি তারা সেসব নিয়মকানুন মেনে কাজ করে তবে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো যে জিডির ব্যাপারে কী করা যায়।

প্রিয়.কম: আপনাদের অনুমতি নিলে বা আলোচনা হলে কি বিদেশি শিল্পীরা এ দেশের মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করতে পারবেন?

গাজী রাকায়েত: কেনো পারবে না? আমরা তো কাউকে কাজে বাধা দেইনি। বাংলাদেশের শিল্পীরা যেমন বিদেশে গিয়ে কাজ করবে, বিদেশের শিল্পীরাও বাংলাদেশে কাজ করবে। কিন্তু এই কাজ করার ক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো আছে সে প্রটোকল মেইন্টেইন করলে যে কোনো শিল্পীই যে কোনো দেশে কাজ করতে পারবে। আমরা কাউকে ব্লক করার জন্য জিডিটা করিনি।

প্রিয়.কম: আপনারা গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এফটিপিও’র একটা সমাবেশে পাঁচ দফা দাবী জানিয়েছিলেন...

গাজী রাকায়েত: সেই দাবির মধ্যেই একটা দাবি ছিল অবৈধভাবে কোনো বিদেশী শিল্পী এ দেশের মিডিয়ায় কাজ করতে পারবে না। গভর্মেন্টকে একটা সুপারিশমালা দেয়া হয়েছে, সেখানে বিটিভির মহাপরিচালক এবং আরো অনেকের সাথে মামুনুর রশিদ এবং আমিও যুক্ত আছি। সেই সুপারিশমালা তথ্য মন্ত্রণালয়ে ছয় মাস ধরে পড়ে আছে।

প্রিয়.কম: গত নভেম্বরের পর আরো কয়েক দফা এফটিপিও’র পক্ষ থেকে আন্দোলনের কথা বলা হলেও এর কার্যকর কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না।

গাজী রাকায়েত: সুপারিশমালা পেশ করার পর তারা আমাদেরকে ওয়াদা করেছিল এগুলো কার্যকর করার, যে কারণে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। গত ছাব্বিশ জুলাই তথ্যমন্ত্রীর সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে এবং চ্যানেল মালিক এসোসিয়েশনের সাথেও আমাদের আলাপ হয়েছে। তাদেরকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি যে সামনে যদি সকল বিষয়ের সমধান না হয় তাহলে হয়তো আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে যাবো।

প্রিয়.কম: আপনাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করা। কিন্তু এখনো সেগুলো চলছে এবং বেশ জনপ্রিয়ও হচ্ছে।

গাজী রাকায়েত: আমরা আন্দোলন করে ইতোমধ্যে সতেরটা বিদেশী সিরিয়াল বন্ধ করিয়েছি। এটা কেউ জানে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন্ধ হয়েছে এগুলো। তথ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া সুপারিশমালার মধ্যে আমাদের চৌদ্দ দফা দাবি রয়েছে। চৌদ্দ দফার মধ্যে প্রধান একটি দাবি বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করা। সেখানে উল্লেখ আছে বিদেশি সিরিয়াল যদি হাই ট্যাক্স দিয়ে বৈধভাবে এলাউও হয় তবুও যেন সেটা পিক আওয়ারে টেলিকাস্ট না হয়। এবং পিক আওয়ার কতটুকু সেটাও গর্ভমেন্টের সাথে আমাদের নেগোসিয়েশনে বসতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা এই মাসটা দেখবো, তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।

প্রিয়.কম: আপনি যেদিন জিডি করলেন তার পরদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে পরমব্রতের সাথে ডিনার করা অবস্থায় অনেক টেলিভিশন কলাকুশলীদের দেখা যায়, ফলে স্বাভাবিকভাবে হয়তো মানুষের মনে এ নিয়ে এক ধরনের কৌতূহল দেখা দিয়েছে...

গাজী রাকায়েত: আমরা তো আর প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে বিদেশি শিল্পীদের বিরুদ্ধে জিডি করিনি। পরমব্রত যে চলচ্চিত্র মুক্তির জন্য এসেছিলেন সেটা যদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কাজ করে থাকেন তবে তো আমাদের কোনো আপত্তি নেই। অনিমেষ আমাদের খুবই প্রিয় একজন ডিরেক্টর, আমি নিজে দেখেছি ছবিটা। ফলে শিল্পীদের সাথে ডিনার করা আর জিডি দুটোই আলাদা প্রসঙ্গ। আমি মনে করি শিল্পীদের কোনো বাউন্ডারি থাকা উচিৎ না। শুধু নিয়মটা মেনে কাজ করাটা জরুরি।

প্রিয়.কম: আপনার জিডির পর পরমব্রত বিভিন্ন মিডিয়ায় বলেছেন- সে সকল নিয়মনীতির ধাপ মেনেই কাজ করতে এসেছেন। জিডির বিষয়টাকে আপনাদের সাথে এক ধরনের ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

গাজী রাকায়েত: পরমব্রত কী বলেছে জানি না, এখানে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই। ভুল বোঝাবুঝি যদি হয়ে থাকে তা মিডিয়ার সৃষ্টি। 

প্রিয় বিনোদন/গোরা