কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আরবিতে ইসলাম লেখা ওয়েলপেপার। ছবি : সংগৃহীত

ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:২৭
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:২৭

(প্রিয়.কম) একজন মুসলিমের ভেতর-বাহির সবই হবে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। আর এই পরিচ্ছন্ন ও ভালো থাকা মানসিকভাবে ও শারীরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, হায়েজ সম্পর্কে নির্দেশ কী? বলে দাও, সেটি একটি অশুচিকর ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থা। এ সময় স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকো এবং তারা পাক-সাফ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধারে-কাছেও যেও না। তার পর যখন তারা পাক-পবিত্র হয়ে যায়, তাদের কাছে যাও যেভাবে যাওয়ার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা অসৎকাজ থেকে বিরত থাকে ও পবিত্রতা অবলম্বন করে।’ (সূরা-বাকারাহ, আয়াত-২২২)

আধুনিক বিজ্ঞান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।এ জন্য বলা হয়ে থাকে প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চাইতে শ্রেয়। আধুনিক যুগের এই ধ্যান-ধারণা পবিত্রতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত ইসলামের মৌলনীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। 

ইসলামে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সামগ্রিক। পরিচ্ছন্নতা বলতে শরীর ও মনের পরিচ্ছন্নতাকে বোঝানো হয়ে থাকে। একজন মুসলিমের পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখতে হয়। 

পোশাক-পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা : সুস্থ শরীর ও সুস্থ মনের জন্য পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা বাঞ্ছনীয়।

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা : সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ। ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি পরিবেশেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, খোলা মাঠ ইত্যাদি আবর্জনামুক্ত রাখা একান্ত প্রয়োজন।

খাদ্য ও পানীয়ের পরিচ্ছন্নতা : খাদ্য ও পানীয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র না রাখলে এগুলো সংক্রমিত হতে পারে এবং তা দ্বারা পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।

আত্মিক ও বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা : নিয়মিত নামাজ আদায় করলে আত্মিক ও বাহ্যিক দুই দিক দিয়েই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা সম্ভব। কারণ নামাজ আদায়ের জন্য অজু করে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। অজুতে এমন অঙ্গগুলো ধৌত করা ফরজ করা হয়েছে, যা সাধারণত প্রকাশমান। যেখানে ধুলা লাগা স্বাভাবিক। দিনে পাঁচবার অজু করলে বাহ্যিক অঙ্গগুলো পরিষ্কার হয়।

আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে অজু করে পবিত্রতা অর্জনের বিষয়ে  ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নাও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ করো এবং পাগুলো টাকনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে ও তোমাদের ওপর স্বীয় নিয়ামত পূর্ণ করতে চান; যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ৬)

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে অজু করে এবং সুন্দর করে অজু করে, তার গুনাহগুলো শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি তার নখের নিচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়।’ (বুখারি ও মুসলিম) 

‘জান্নাতের চাবি নামাজ এবং নামাজের চাবি পবিত্রতা।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি)

আর সাধারণ পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য প্রথমেই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করতে হয়। প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগতভাবে পরিচ্ছন্ন হয়ে গেলে পরিবার, সমাজ ও জাতীয় পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে বেশি বেগ পেতে হবে না। নিয়মিত গোসল করা, জামাকাপড় পরিষ্কার রাখা, চুল-দাড়ি আঁচড়ানো, নখ কাটা, দাঁত ব্রাশ করা- মিসওয়াক করা, শরীরের লোম পরিষ্কার করা, তেল-ক্রিম ব্যবহার করা, নিজের কক্ষ-পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি ব্যক্তিগত দায়িত্ব।

আসুন আমরা আত্মিক ও বাহ্যিক উভয় ধরনের পবিত্রতা অর্জন করে ইহ-পরকালীন সফলতা লাভ করি। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন, আমিন।