কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি: নূর

মুড সুইং এবং অন্যান্য যেসব মানসিক পরিবর্তন আসে গর্ভাবস্থায়

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:১৭
আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:১৭

(প্রিয়.কম) গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে পরিবর্তন আসবে, এটা জানা কথা। শরীর স্ফীত হয়ে আসার ব্যাপারটা তো সবারই চোখে ধরা পড়ে, কিন্তু তার মনের পরিবর্তনগুলো নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন? 

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি একজন গর্ভবতী নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখা উচিৎ কাছের মানুষগুলোর। গর্ভাবস্থার এই লম্বা সময়টায় খুশিতে উদ্বেলিত হওয়া থেকে শুরু করে গর্ভধারণ নিয়ে ভয়- এই দুইয়ের মাঝে অনেক ধরণের আবেগ কাজ করে হবু মায়ের মাঝে। এছাড়া অন্যান্য মানসিক চাপ যেমন পারিবারিক সমস্যা, অনিশ্চয়তা, হতাশা এগুলো আরো চরম আকার ধারণ করে। পিতামাতা হতে যাচ্ছেন, এই চিন্তাটা ভালোভাবে বুঝতে সময় লাগে, সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে আসলে দশ মাসের এই সময়টা পাওয়া উপকারী। 

নারী থেকে মা হয়ে ওঠা, এই ব্যাপারটা একজন নারীকে আমূল পাল্টে দেয় এবং তার মাঝে এনে দেয় অনেক রকমের আবেগের মিশ্রণ, জানান ডঃ মেরি কিমেল, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার সাইকিয়াট্রি প্রফেসর। বেশ কিছু কারণে গর্ভাবস্থার সময়টা একেবারেই অনন্য। 

এই সময়টায় শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের মাত্রা থাকে বাড়তির দিকে। প্রজেস্টেরন ওঠানামার প্রতি কেউ কেউ সংবেদনশীল হয়ে থাকেন, ফলে এ সময়ে তাদের মেজাজ হয়ে ওঠে খিটখিটে। নতুন একটি জীবন পৃথিবীতে নিয়ে আসা, এর ফলে নিজের জীবনে পরিবর্তন আসা এসব ব্যাপার একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি তা প্রচন্ড স্ট্রেসেরও সৃষ্টি করে। কিমেল পরামর্শ দেন, এসব চিন্তাভাবনাকে দমিয়ে না রাখতে, এবং কারো সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে। 

সাধারণত সন্তান জন্মের আগে এবং পরে আটটি আবেগ নিয়ে নারীরা হিমশিম খেয়ে থাকেন। এগুলো হলো-

১) মুড সুইং

মুড খারাপ হওয়া, মেজাজ করা, খিটখিটে থাকা- এ সবই দেখা যায় গর্ভাবস্থায়। গর্ভাবস্থা হলো নারীর জীবনে বড় একটি পরিবর্তনের সময়। সুতরাং এ সময়ে তার আবেগের ওঠানামা দেখা যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কেউ কেউ অনেকটাই শান্ত থাকেন। কিন্তু গর্ভাবস্থার প্রথম ও শেষ সময়টায় সাধারণত মেজাজের ওঠানামা হওয়াটা স্বাভাবিক। নারীর শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে, হরমোনের প্রভাব থাকে তীব্র, তার থেকেই হয় এই মুড সুইং।

২) ভীতি

গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসে নারী ম্যাসক্যারিজের ভয় পেতে পারেন, বা সন্তানের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভীতি থাকতে পারে তার। পরবর্তী তিন মাসে তিনি ভয় পেতে পারেন, হয়ত তিনি সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারবেন না বা তিনি ভালো মা হয়ে উঠতে পারবেন না। আর শেষের দিকে লেবার পেইনের ভয় বা এ সময়ে দুর্ঘটনার ভয় পেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় অনেক কিছুই হবু মায়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। এর ফলেই ভীতির জন্ম হয়। কিন্তু এটা জেনে রাখতে হবে এই ভয়ে কাবু হয়ে যাওয়া যাবে না, একে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

৩) দুশ্চিন্তা

অনেক সময়ে দুশ্চিন্তা এবং ভয় পাশাপাশি থাকে। স্ট্রেসে থাকলে দুশ্চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক, বলেন কিমেল। সন্তানকে নিরাপদে রাখতেই আসলে এ সময়ে একটু দুশ্চিন্তা, সতর্কতা উপকারী। গর্ভাবস্থার আগেই যেসব নারীর অ্যাংজাইটির ইতিহাস ছিল, তাদের এ সময়ে দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী। এই দুশ্চিন্তা বেশী হলে তা সন্তানের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। এ কারণে দুশ্চিন্তা কম রাখা জরুরী। 

৪) ভুলে যাবার প্রবণতা

স্মৃতি খারাপ হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্কে ধোঁয়াটে ভাবটার কারণে গর্ভবতী নারী অনেক সময়েই এটা সেটা হারিয়ে ফেলেন, বা রুটিন কাজগুলো করতেও ভুলে যান। একে অনেক সময়ে বলা হয় প্রেগনেন্সি ব্রেইন, বেবি ব্রেইন, মমি ব্রেইন বা মমনেশিয়া। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা যায় এটা হয় হরমোন, বিশেষ করে প্রজেস্টেরনের বেশী মাত্রার কারণে। আবার ঘুম কম হবার কারণেও তা হতে পারে। 

গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অঞ্চলে পরিবর্তন আসে, এটা দেখা গেছে। এই অঞ্চল স্মৃতি নিয়ে কাজ করে, ফলে এটাও ভুলোমনের পেছনে দায়ী হতে পারে। এ সময়ে গর্ভবতী নারী এত শত বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন যে, কিছুটা ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক, জানান কিমেল। 

৫) কান্না

খুব অল্প কারণেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার ব্যাপারটা দেখা যায় কিছু কিছু নারীর মাঝে। এ সময়ে তারা ঘন ঘন কাঁদেন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে। কারণ এ সময়ে অনেক ধরণের অনুভূতি তাদের মাঝে কাজ করে এবং তাদের মানসিক অবস্থা থাকে নাজুক। বেশী কান্নাকাটি অনেক সময়ে ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে, যা কিনা ১০ শতাংশ গর্ভবতী নারীকে আক্রান্ত করে। 

৬) নিজের শরীর নিয়ে চিন্তা

গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি এবং শেষ দিকে নারীর শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। এ সময়ে তার ওজন বেড়ে যায়। তিনি নিজের শরীর নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভুগতে পারেন। কেউ কেউ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানান, কেউ কেউ ওজন বাড়ছে বলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। 

৭) নেস্টিং ইন্সটিংক্ট

গবেষণায় স্পষ্ট দেখা যায় যে, গর্ভাবস্থায় নারীর মস্তিষ্কে পরিবর্তন আসে। নারী তখন শিশুর আগমনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করে। নিজের ঘরে পরিবর্তন আনে, কেউ কেউ রান্নার প্রতি ঝুঁকে যান, কেউ ঘর পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে মনযোগী হয়ে পড়েন। 

৮) পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন

সন্তান জন্ম দেবার পরের সময়টা নারীর জন্য খুবই জরুরী। হুট করে শরীরে প্রজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়, ফলে দেখা যায় নতুন মায়ের ঘুম এবং খাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। বেড়ে যায় পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের ঝুঁকি। 

সন্তান জন্ম দেবার কয়েক দিন পর পর্যন্ত ৮০ শতাংশ নারী “বেবি ব্লুজ” অনুভূতির মুখোমুখি হবে। বিষাদ, ঘন ঘন কান্না, ঘুমের অভাব এসব সমস্যা বশিরভাগ সময়ে দুই সপ্তাহের বেশী স্থায়ী হয় না। কিন্তু এ ধরণের বিষাদ যদি দুই সপ্তাহের বেশী স্থায়ী হয়, যদি তিনি সন্তানের যত্ন নিতে অনীহা বোধ করেন, উদাসীন থাকেন, নিজের জীবন অর্থহীন মনে হয় বা সন্তানের ক্ষতি করার চিন্তা আসে, তবে দ্রুত ডাক্তারি সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। সন্তান জন্মের পর মায়েদের নিজেদের যত্ন নেবার দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। বেশকিছু থেরাপির মাধ্যমে তাদের এই ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। 

সূত্র: Live Science

প্রিয় লাইফ/ আর বি