কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি পণ্যেই ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক

বুশরা আমিন তুবা
ফিচার লেখক, প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০১৭, ১০:২৮
আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭, ১০:২৮

(প্রিয়.কম)  ঈদের বাজার জমে উঠেছে বিপণিবিতানগুলোতেনিজেদের পছন্দের পোশাক কেনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অনেকেবিভিন্ন বাজারে উপচে পড়া ভিড়কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই এমন অবস্থাতবে কিছুটা ভিন্নতা চোখে পড়ে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির দেশী দশ’ এলাকায়এখানে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কমকারণ হিসেবে দোকানিরা বলছেন, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে দেশি কাপড় কিনছেন না ক্রেতারাআর ক্রেতাদের বরাবরের মতো অভিযোগ, ‘দেশি পণ্যের দোকানে দাম বেশিতাই তারা অন্যদিকে ঝুঁকছেন

বসুন্ধরা শপিং মলের লেভেল সেভেনে ১০টি দেশীয় পোশাকের দোকান রয়েছে; যেটি দেশী দশনামে পরিচিতদেশী দশের ফ্যাশন হাউজগুলোতে পুরুষদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, পাজামা, শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, লুঙ্গি ইত্যাদিমেয়েদের জন্য রয়েছে শাড়ি, থ্রি পিস, টু পিস, সিঙ্গেল কামিজ, ওড়না, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কুর্তি, গজ কাপড়, বিভিন্ন ধরনের গহনা, ম্যাচিং হাত ব্যাগ, হ্যান্ডি ক্রাফট, জুতা ইত্যাদি। 

শিশুদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, থ্রি পিস, টু পিস, ফ্রক, স্কার্ট, টপস ইত্যাদিএছাড়া এখানে বিছানার চাদরসহ ঘরের অনেক জিনিসপত্রও পাওয়া যায়

সাধারাণত ঈদ বা এরকম বড় কোনো অনুষ্ঠানের মধ্যে সচরাচর এসব দোকানে অন্যান্য বছর ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়কিন্তু এবার দোকানিরা বলছেন ভিন্ন কথাএবার নাকি ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম

কেন কম এটার সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দোকানিদের কাছে নেইকেউ বলছেন, ভারতীয় সিরিয়াল বা সিনেমার প্রভাবকোনো দোকানি বলছেন, শুধু ভারতীয় কেন, পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে মিডিয়ার মাধ্যমেএই কারণে দেশীয় পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের অনীহা

পশ্চিমা সংস্কৃতিকে দোষারোপ করে সাদাকালোফ্যাশন হাউজের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম সজীব বলেন, ‘আগের বছর থেকে এবার বিকিকিনি খুবই কমক্রেতারা আসলেও আবার চলে যাচ্ছেনশাড়ি, পাঞ্জাবি কিছুটা বিক্রি হলেও ছোটদের কোনো পোশাক বিক্রি হচ্ছে নামা-বাবা ছোটদের এখন আর দেশীয় পোশাক পরায় নাতারা সন্তানদের যেমন বাংলার বদলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ায়পোশাকের বেলায়ও এমনদেশি নয় বিদেশি পোশাক পরায় তারা

অন্য বছরগুলোর মতোই এবার পোশাকের দাম উল্লেখ করে শফিকুল আরও বলেন, ‘আমাদের পোশাকগুলোর দাম তো বেশি নয়যেমন- ১৪শ টাকা হলে মোটামুটি ভালো পাঞ্জাবি পাওয়া যায়কিন্তু এর চেয়ে বেশি দাম দিয়ে ক্রেতারা ভারভীয় পণ্য কিনছেনভারতীয় সিরিয়াল আর সিনেমা আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছেআবার ভারতীয় কিছু পণ্য চোরাইপথে আসার কারণে আমাদের দেশীয় শিল্প ধ্বংসের পথে

এবার দেশী দশফ্যাশনের দোকানগুলোতে আলাদা কোনো মূল্যছাড় নেইতবে ঢাকা ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে কোনো পণ্য কিনলে ১৫ শতাংশ ছাড় রয়েছেদেশীয় পণ্য মানুষকে ছাড় দিয়ে কিনতে কেন উদ্বুদ্ধ করতে হবে এমন প্রশ্ন করলে কে-ক্রাফট ব্র্যান্ডের সহকারি ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশীয় পণ্য আসলে ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করার বিষয়এখানে ছাড় কোনো প্রশ্ন হতে পারে নাতবে এই অবস্থা থেকে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর খুব দ্রুত উত্তরণ হবে বলে আশাবাদী তিনি

‘নগরদোলা’ ব্র্যান্ডের দোকান ম্যানেজার নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমরা দেশীয় থিমে যেসব শাড়ি তৈরি করেছি সেগুলো অন্য কোনো দোকানে পাওয়া যাবে নাএগুলো একান্তই আমাদেরফলে এগুলো মোটামুটি বিক্রি হচ্ছেদামও তুলনামূলক কমসুতি শাড়ি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ ও  থ্রিপিস ১ হাজার ৭০০ বা দুই হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করছি

‘বাংলার মেলা’ ব্র্যান্ডের বসুন্ধরার দোকান ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম মনে করেন, এখনো ঈদের কেনাকাটা জমেনিতিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্রেতারা মার্কেটে কম আসছেতবে আসলেও তারা বিদেশি পোশাক বেশি কিনছেনবিশ্বায়নের ফলে পশ্চিমা পোশাকের দিকেও ঝুঁকছেন অনেকেআমাদের পাঞ্জাবির দাম যেখানে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা সেখানে বিদেশি পাঞ্জাবির দাম ৩ থেকে ৩০ হাজার টাকাতবুও ক্রেতারা বিদেশি পণ্য-ই কিনছেন।’

দেশীয় পোশাকের মধ্যে একটা আলাদা আভিজাত্য আছে জানিয়ে সৃষ্টি ফ্যাশনেরদোকান ইনচার্জ তামান্না জাহান বলেন, ‘আমাদের দোকানে বড়দের থ্রি-পিস ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৪০০, শাড়ি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, পাঞ্জাবি ১২শ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকায় মধ্যে রয়েছেএখানে সবই দেশি পোশাককিছু ক্রেতা আছেন যারা হাতের বুটিকের কাজ পছন্দ করেনকারণ এখানে আভিজাত্য আছেএটা আসলে সবাই বোঝে না

তবে ‘নিপুণ ফ্যাশন’র প্রধান ডিজাইনার ফয়সাল মাহমুদের মতে, ‘এবারও ভালো বিক্রি হচ্ছেক্রেতাদের সাড়া ভালোনতুনত্ব আছে এবারদাম কমসব মিলে আশানুরূপ ফল পাচ্ছিতবে তিনিও স্বীকার করেছেন গত বছরের চেয়ে এবারে বিকিকিনি ভালো নয়

‘বিবিআনা’ ফ্যাশনের দোকান ম্যানেজার খন্দকার আফজাল হোসেন বাবলু বলেন, ‘ক্রেতারা এখন পশ্চিমাতে আসক্তবুটিক মাথায় নিতে চায় না

ফ্যাশন আর বিক্রিতে তেমন পিছিয়ে নেই দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘অঞ্জনস’অঞ্জনসের সহকারি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইমরান হোসেন বলেন, ‘গতবারের চেয়ে বিক্রি এবার কমতবে খুব কম নয়ঈদের তো আরও কদিন বাকি রয়েছেবাজার আরও জমবেযারা দেশীয় পোশাকের মান বোঝে না তারা বিদেশি পোশাক কিনবেএটা সব সময়ই ছিল, থাকবেওকিন্তু আমরা আশাবাদী, আগামীতে ভালো হবে দেশীয় পণ্যের বাজার

‘দেশাল’ ব্র্যান্ডের বসুন্ধুরা দোকানের ইনচার্জ রেহেনা আক্তার পিয়া বলেন, ‘ছোটদের পোশাক কম বিক্রি হচ্ছে, তবে বড়দের ভালোই হচ্ছেকিন্তু গতবারের চেয়ে কমকোনো ডিসকাউন্ট এবার আমরা কোনো দেশীয় দোকানিরা দিচ্ছি নাকিন্তু সুতি কাপড় গরমে এমনিতেই কিনছেন ক্রেতারা

‘রঙ বাংলাদেশ’ ফ্যাশনের বসুন্ধরা দোকান ম্যানেজার মো. শরিফ বলেন, ‘আমাদের ডিজাইন আলাদাতাই বিক্রি ভালোই হচ্ছেশাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, লং কামিজ এসব চলছেদাম কমভালো পণ্যের কারণে আমরা টিকে আছিতবে গতবার আরও বেশি ছিল বিক্রি

বিদেশি পোশাকের কাছে দেশি ব্র্যান্ড ধাক্কাখাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যে মানের মাল (পণ্য) দিই সেটা ক্রেতারা বুঝতে পারলে বিদেশি মালগুলো কিনতো নাক্রেতারা তো আর জিনিস চেনে না, চেনে চাকচিক্যতবে অচিরেই তাদের মধ্যে বোধ তৈরি হবেআমাদের দেশীয় উদ্যোক্তারা আরও ভালো পণ্য ক্রেতাদের উপহার দিবে

‘এবারের ট্রেন্ড কী’ এ প্রশ্নের উত্তরে একাধিক বুটিক হাউজের কর্ণধার ও ডিজাইনাররা বলেন, ‘সেই অর্থে এবারের পোশাকের ট্রেন্ডে খুব একটা পরিবর্তন নেইডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছেএগুলোই ক্রেতারা পছন্দ করছেনতবে লং কামিজের একটা আলাদা দাপট মনে হয় তৈরি হয়েছে।’

পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট যাই হোক না কেন সুতি, এন্ডি ও খাদি কাপড়ের তৈরি পোশাকগুলোই বরাবরের মতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবারও

এদিকে দেশী দশেআসা একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশীয় পণ্যের প্রতি টান আছে বলেই তারা এখানে এসেছেনকিন্ত দামের কারণে তাদের অন্য ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে হচ্ছেতবে বরাবরের মতো বিষয়টি অস্বীকার করেন দোকানিরা

প্রিয় ফ্যাশন/ফারজানা রিংকী