কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বানভাসি মানুষ। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পশ্চিম বামনা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: ফোকাস বাংলা

দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০১৭, ২২:০৮
আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০১৭, ২২:০৮

(প্রিয়.কম) বিরামহীন ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, ধরলা, আত্রাইসহ অন্যান্য প্রধান নদ-নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভেঙে গেছে অসংখ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। তলিয়ে গেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্তত ২০টি জেলা, ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, বিভিন্ন জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে কমপক্ষে ২১ জনের।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকবে। ১৫ আগস্ট ৯টা পর্যন্ত গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশের ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ৫৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ৩২টি পয়েন্টে হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া ৩০টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে দেশের আরও কয়েকটি জেলা। বন্যায় এ পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ৪২ জন। প্লাবিত ১৬টি জেলার ৭২ উপজেলার ৩৭৮ ইউনিয়নের ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে ৮ হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি, পানি বন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বানভাসি মানুষের অভিযোগ বন্যার্তদের পুনর্বাসনে তৎপরতা বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল, পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ৫ লাখ মানুষ।

ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ শহরের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে, রাস্তাসহ বাড়িঘরে পানি ঢুকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়ে পানিতে আটকা পড়েছে জেলার অন্তত ৪ লাখ মানুষ।

ম্যাপে দেশের বন্যা পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত

মানচিত্রে দেশের বন্যা পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার ৩ উপজেলার ৮২টি বিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে।

তবে নীলফামারীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়ে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এদিকে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদ বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে নদীর বাঁধ ভেঙে চারটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি গোপালপুরের নলিন পয়েন্টে বিপদসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ, পানিতে তলিয়ে গেছে দুই হাজারেরও বেশি হেক্টর ফসলি জমি। এছাড়া কয়েক দিনের অবিরাম টানা বর্ষণে নামা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু ও সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা। কাপ্তাই লেকের পানি বাড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লেক সংলগ্ন কয়েক হাজার পরিবারের মানুষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা ১৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২ হাজার মানুষ।

জামালপুরে বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে গেছে। এতে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাগজঞ্জের ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে গেছে আড়াই লক্ষ মানুষ, খোলা হয়েছে ১৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র।

নেত্রকোনার ৮টি উপজেলার অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে বিরিশিরির সুমেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সে.মি. কংসনদের জারিয়া পয়েন্টে ১৮২ সে.মি. উব্দাখালির কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১০০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের বন্যাপরিস্থিতির একটি দৃশ্য। সংগৃহীত ভিডিও 

এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নীলফামারীর সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুরের বদরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে  দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের বেশ কিছু এলাকায় সড়ক ও রেলপথ ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া  লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের প্রায় হাজার খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে অথবা বন্যা কবলিত মানুষ এসব জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এদিকে দিনাজপুরের শহররক্ষা বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ায় তা মেরামত করতে এবং নীলফামারী এবং কুড়িগ্রামে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। 

প্রিয় সংবাদ/শান্ত