কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নওগাঁর মান্দা উপজেলার নুরুল্ল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ আশ্রয়কেন্দ্র। ছবি: প্রিয়.কম

নওগাঁয় ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করায় আশ্রয়কেন্দ্রে নারীকে মারধর!

আশরাফুল নয়ন
কন্ট্রিবিউটর, নওগাঁ
প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৪৬
আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৪৬

(প্রিয়.কম) গণমাধ্যমে ত্রাণ না পাওয়া ও আশ্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ করায় নওগাঁর মান্দা উপজেলায় রাহেলা বেগম নামে এক নারীকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৫ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে নুরুল্ল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চেয়ারম্যানের ছেলে ও তার লোকজন মারপিট করে সন্তানসহ বের করে দেয় বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।

এ ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী রাহেলা কোনো জায়গা না পাওয়ায় রাত থেকে কাদাপানির মধ্যে তার ভাঙা বাড়িতে ফিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভুক্তভোগী নারী ও স্থানীয়দের আশঙ্কা, সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে রাহেলাকে আরও হয়রানি করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট মান্দার আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের কয়েকটি জায়গায় ভেঙে যায়। এতে উপজেলার নূরুল্ল্যাবাদ, বিষ্ণপুর, প্রসাদপুর, মান্দা, কালিকাপুর, কশব, কাশোপাড়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

বানের পানিতে মাটির বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় দক্ষিণ নূরুল্ল্যাবাদ গ্রামের অসহায় রাহেলা বেগম আশ্রয় নেন নূরুল্ল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ আশ্রয়কেন্দ্রে। তার মতো ৯০টি পরিবার ওই ইউনিয়ন পরিষদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা-খাওয়া, পয়নিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েন বানভাসিরা। ওই আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০ পরিবারকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ হিসেবে মাত্র ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

তবে আরও প্রায় ২০টি পরিবারকে কোনো সরকারি ত্রাণ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রাহেলা বেগম, আমিনুল ইসলামসহ ত্রাণ না পাওয়া অন্যরা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশদের অসদ আচরণের চিত্র তুলে ধরেন গণমাধ্যমের সামনে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন নূরুল্ল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে মকবুল হোসেন।

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে চেয়ারম্যানের ছেলে মকবুল হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোসলেম উদ্দিন ও কছিম উদ্দিন মারপিট করে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের করে দেন রাহেলা বেগমকে। এরপর কোথায়ও থাকার জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাহেলা বেগম সন্তানসহ কাদাপানির মধ্যে তার ভাঙা বাড়িতে ফিরে যান।

ভুক্তভোগী রাহেলা বেগম বলেন, ‘বানের পানিতে মাটির ঘর ভেঙে গেছে। বাড়ি থেকে কোনো কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি আশ্রয়কেন্দ্রে। শুধু ১০ কেজি চাল পেয়েছি। আর কোন সহযোগিতা পাইনি। এ কথাটি সাংবাদিকদের বলায় আমাকে মারপিট করে বের করে দিয়েছে মকবুল হোসেন, মেম্বার মোসলেম উদ্দিন ও নেতা কছিম উদ্দিন। এখন কাদাপানির মধ্যে রাত থেকে সন্তান, মা ও ছোট বোনকে নিয়ে আছি।’ 

রাহেলা আরও বলেন, ‘অনেকেই তো ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছিল। তাদের কিছু না বলে আমাদের অন্যায়ভাবে গালিগালাজ ও মারপিট করে বের করে দেওয়া হয়।’ তিনিসহ অন্যরা অাশঙ্কা করছেন, তাদের ওপর সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নভাবে আরও হয়রানি করা হবে।

ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ বাবুল দাশ জানান, ‘এখানে কয়েকটি বেয়াদব মহিলা আছেন। তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে তাদের বকাঝকা করতে হয়।’

ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় প্রথমে পরিষদে আশ্রয় নেওয়াদের তালিকার সবাইকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। যারা অভিযোগ করেছেন তারা হয়তো সেই তালিকা করার সময় ছিলেন না। রাহেলা কেন সাংবাদিকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, এ কারণে চেয়ারম্যানের ছেলে রাতে এসে তাকে বের করে দিয়েছে।’ পরবর্তীতে ত্রাণবঞ্চিতরা কেন পেল না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের তালিকা করা হয়েছে কি না তা জানা নেই।

নূরুল্ল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তারা মিথ্যাবাদী। তাদের বাড়ি-ঘরের পানি নেমে গেছে। তারপর ত্রাণের খাবার খাওয়ার জন্যে পরিষদ থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে না।’ তার ছেলে কোন মারধর করেনি বলেও দাবি করে তিনি।

তবে চেয়ারম্যানের ছেলে মকবুল হোসেনের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজামান বলেন, ‘সরকার থেকে ত্রাণ দেওয়ার জন্যে নির্দেশনা রয়েছে। তবে উপজেলা পরিষদ থেকে ত্রাণ দেওয়ার সুযোগ নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়। ঘটনাটির সত্যতা পেয়েছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যেন কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনের ওপর এ ধরনের অত্যাচার করতে না পারে।’

প্রিয় সংবাদ/শিরিন