সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে বল হাতে গতির ঝড় তুলছেন সুরঙ্গ লাকমাল। ছবি: এএফপি
পায়ে বোমার স্প্লিন্টার নিয়েই খেলে যাচ্ছেন যে ক্রিকেটার
আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ২১:২০
(প্রিয়.কম) ২০০৯ সালের ৩ মার্চ। লাহোর টেস্টের তৃতীয় দিন মাঠে নামার জন্য বাসে করে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা দল। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের বহনকারী বাসটি তখন লাহোরে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাছাকাছি। স্টেডিয়ামের মোড়ে পৌঁছাতেই লঙ্কানদের টিম বাস লক্ষ্য করে হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। ওই হামলায় আহত হন ছয় লঙ্কান ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে একজন সুরঙ্গ লাকমাল।
শ্রীলঙ্কার টিম বাসে ওই হামলার সময় বিস্ফোরিত বোমার স্প্লিন্টার গেঁথে যায় লাকমলের বাম পায়ে। সেই বোমার টুকরো এখনও বের করা সম্ভব হয়নি! পায়ে বোমার স্প্লিন্টার নিয়ে এখনও ক্রিকেটের ২২ গজে বল হাতে ঝড় তোলেন ডানহাতি এই পেসার। ভারতের বিপক্ষেই চলমান তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথমদিন ছয় ওভারে কোনও রান খরচ না করেই তিন উইকেট দখল করে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। দ্বিতীয়দিন উইকেটের দেখা না পেলেও রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম তুলেছেন লাকমাল। ৪৬টি ডট বল দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন ডানহাতি এই লঙ্কান পেসার।
কোনও রান খরচ না করে তিন উইকেট নেওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে সুরঙ্গ লাকমাল বলেন, 'সেদিন মনে হয়েছিল আমি আর বাঁচব না। ভগবান বুদ্ধ বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। ডাক্তাররা বলেছিলেন, অস্ত্রোপচার করে বোমার টুকরোটা বের করতে গেলে আমাকে দীর্ঘদিন ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে।'
শিখর ধাওয়ানের মিডল স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর সুরঙ্গ লাকমালের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
লাহোরে ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েও যে তিনি মাঠে ফিরতে পারবেন তা হয়তো কেউ ভাবতে পারেনি। লাকমাল নিজেও ভাবেননি। কিন্তু ঠিকই মাঠে ফিরেছেন ৩০ বছর বয়সী এই লঙ্কান ক্রিকেটার। তিনি জানান, এখনও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হতে গেলে পায়ের ভিতরে থাকা স্প্লিন্টারের টুকরোর কারণে মেটাল ডিটেক্টর বেজে ওঠে। তখন নিরাপত্তারক্ষীদের সেই ঘটনার কথা বলে বোঝাতে হয়। এরপর মেলে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হওয়ার অনুমতি।
সুরঙ্গ লাকমালের জন্ম শ্রীলঙ্কার মাতারা এলাকায়। কলম্বোর বাইরে বিভিন্ন জেলা শহর থেকে উঠে আসা পেসারদের পুষ্টির সমস্যা থাকায় লম্বা স্পেলে বোলিং করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে দেখা যায়। লাকমলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তাই কলম্বোর অ্যাকাডেমিতে এনে দুর্বল শরীরের বোলারদের আগে শারীরিকভাবে তৈরি করা হয়। তারপর তাদের বোলার হিসেবে তৈরী করা হয়। লাকমলের ক্ষেত্রে এই কাজ করেছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা পেসার ও বোলিং কোচ রুমেশ রত্নায়েকে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রায় আট বছর পূর্ণ করা সুরঙ্গ লাকমাল। ছবি: সংগৃহীত
একটা সময় শরীরে যথেষ্ট শক্তির অভাবে লম্বা স্পেল করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতেন লাকমল। পুষ্টির সমস্যাটা কাটিয়ে তাকে শারীরিকভাবে গড়ে তোলা রুমেশ রত্নায়েকেও মুগ্ধ ভারতের বিপক্ষে শিষ্যের এমন বোলিং স্পেল দেখে। বলেন, 'জানি না এটা সেরা কি না। তবে আমার দেখা অন্যতম সেরা এক স্পেল তো বটেই। উইকেটের সুবিধা সে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পেরেছে।'