কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট, চট্টগ্রামের আকাশে সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি। ছবি কৃতজ্ঞতা: মোহাম্মদ আশরাফ উদ দৌলা

দেশে বিদেশে সূর্যের খোঁজ (দেখুন ছবিতে)

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৩৫
আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৩৫

(প্রিয়.কম) ফটোগ্রাফি শুধু একটি শখ বা একটি পেশা নয়। যারা নিজেদেরকে ফটোগ্রাফার বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন তাদের কাছে ছবি তোলা নিঃসন্দেহে একটি নেশার মত। জীবনে যতই উত্থান-পতন আসুক না কেন, হাতে ক্যামেরা বা ফোন যা-ই পান তাতেই চলতে থাকে ক্লিক। 

একেক জন মানুষের ফটোগ্রাফিও হয় একেক রকম। কেউ মানুষের মুখে খুঁজে নেন বৈচিত্র্য, কেউ বিস্তীর্ণ পাহাড় ভালোবাসেন আবার কারো ক্যামেরায় ধরা পড়ে আলো-আঁধারির খেলা। মোহাম্মদ আশরাফ উদ দৌলা এমনই এক শখের ফটোগ্রাফার, যার ভালোবাসার জায়গাটি হলো সূর্য এবং তার আলো। আকাশ জুড়ে থাকা সূর্য, মেঘের ওপর দিয়ে উপচে পড়া তার আলো- এগুলোই বারবার ধরা পড়েছে তার ফ্রেমে। দেশের আকাশ হোক আর বিদেশের, তার ভালোলাগা রয়ে গেছে একই রকম। 

০১

সেন্ট মার্টিন'স দ্বীপে টুকটুকে লাল একটি সূর্য।

আশরাফের পিতা ছিলেন রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। অনেক জায়গায় ট্রান্সফার হবার কারণে পুরো পরিবারসমেত তারা বিভিন্ন এলাকায় জীবন যাপন করেছেন। ছোটবেলার এক বন্ধু তুষারের সাথে এরপরেও তার বন্ধুত্ব ছিল অটুট। যখন তারা অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন তখন থেকে ক্যামেরার প্রতি ঝোঁক দেখা দেয় আশরাফের। 

রিল ক্যামেরায় তখন খুব একটা ভাল ছবি তোলা যেত না, তারপরেও রেলওয়ে ধরে ছবি তুলেই যেতেন। এসএসসির চাপে ভুলেই গেলেন ক্যামেরার কথা। ২০১৪ সালে যখন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে যান, তখন আবার ফটোগ্রাফির প্রতি তার ভালোবাসার নতুন সূচনা হয়। 

০২

অভয়মিত্র ঘাট, চট্টগ্রাম।

নিজের দৈনন্দিন খরচ চালাতে পার্ট টাইম জব করতেন মালয়েশিয়াতে। বিভিন্ন শপিং মলে ঘোরাফেরা করতে করতে একদিন পরিচয় হয় এক পুরনো ক্যামেরা বিক্রেতার সাথে। প্রায় ২ মাসের বেতন জমিয়ে কিনেই ফেললেন একটি পুরনো ক্যানন ক্যামেরা। তখন কিছুই জানতেন না এর ব্যবহারের ব্যাপারে। ৪ মাস চেষ্টার পর নিজে নিজে ফাংশনগুলো আয়ত্ত্বে নিয়ে এলেন।  

সে পুরাতন ক্যামেরা বিক্রয় করে। মনের মধ্যে তখন আবার ক্যামেরার সাধ টা জেগে উঠলো। প্রায় ২ মাসের বেতন জমিয়ে একটা পুরাতন ক্যামেরা কিনে ফেললাম। কিছুই তখন বুঝতাম না এটার ব্যাপারে। মাঝে মাঝে মনে হতো এটাকে আবার বিক্রি করে দেই। মাথা কাজ করতই না কিভাবে এটা ব্যবহার করবো। প্রায় ৪ মাস ধরে নিজে নিজে চেষ্টা করে বুঝে নিলাম এটার ফাংশন কি। আমার ক্যামেরাটা ছিল CANON এর। তার দেখাদেখি তার কিছু পরিচিত ছেলেও কিনে ফেললেন পুরনো ক্যামেরা। প্রতি সপ্তাহে তারা একসাথে বের হয়ে ছবি তুলতেন। এভাবেই আবার শুরু হলো আশরাফের ফটোগ্রাফি। 

০৩

কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট, চট্টগ্রাম।

ছবি তোলার প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণেই মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছেন তিনি। হাত পাকিয়েছেন বিভিন্ন অবজেক্টের ছবি তুলে। কেউ কেউ ট্যুরে যাবার জন্য ফটোগ্রাফার হিসেবে তাকে নিয়ে যেতেন। 

পরিবার থেকে তাকে বলা হয়েছিল যেভাবেই হোক পড়াশোনা শেষ করতে হবে ভালোভাবে। ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে তা ভুলেই গিয়েছিলেন প্রায়। একটা সময় ফটোগ্রাফি কমিয়ে পড়াশোনা শেষ করলেন। চাকরি পাবার পর বিভিন্ন জায়গায় মিটিং এ গেলেও সঙ্গী থাকত ক্যামেরা। 

০৪

মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ার একটি ব্রিজের ছবি, দিনের বিভিন্ন সময়ে তোলা।

ক্যামেরার কাজ বেশীরভাগ নিজে নিজেই শিখতে হয়েছে তাকে। কখনোই ফটোগ্রাফি কোর্স করার বা শেখার সময় পাননি। আগে ইউটিউব ব্যবহার করতেন না, ইউটিউবে এত টিউটোরিয়াল আছে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি। তার ভালোলাগার জায়গাটি হলো সূর্য। সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, মেঘে বা পানিতে সূর্যের আলোর ছটা- বারবার এগুলো উঠে এসেছে তার তোলা ছবিতে।

০৫

কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট, চট্টগ্রাম।

আশরাফ বলেন, ফটোগ্রাফি তার শখ, পেশা নয়। 

‘শখকে যদি পেশা হিসেবে নিতাম তাহলে আমার এই শখ আর শখ থাকতো না। অনেকেই হয়তো বলবে যে আমি ভুল করেছি, কিন্তু আমি বলবো শখ হলো সেটাই যেটা অবসর সময়ের সঙ্গী,’ এমনটাই মনে করে তিনি।

প্রিয় লাইফ/ আর বি